তালিবানের আফগানিস্তানে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে ন'বছরের মেয়েকে বিক্রি করলেন বাবা
তালিবানের আফগানিস্তানে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে ন'বছরের মেয়েকে বিক্রি করলেন বাবা
চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে আফগানিস্তান। চলতি বছরের অগাস্ট মাসে তালিবান শাসন শুরু হয়েছে সেই দেশে। তারপর থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল জিনিসপত্রের দাম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, ভবিষ্যতে আরও সমস্যায় পড়বে সেখানের সাধারণ মানুষ। এবার সেই আশঙ্কাই যেন সত্যি হল। পেটের দায়ে মাত্র ন'বছরের মেয়েকে বিক্রি করতে বাধ্য হলেন বাবা।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছিল হুহু করে। আধপেটা খেয়ে কোনওক্রমে দিন কাটাচ্ছিল সাধারণ মানুষ। এখন তাও জুটছে না কপালে। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে বাবারা নিজের শিশুকন্যাদের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে মাত্র ন'বছর বয়সী পারওয়ানা মালিককে তার পরিবার বিক্রি করে দিয়েছে ৫৫ বছর বয়সী কুরবানের কাছে। শিশুকন্যাটির পরিবারে আটজন সদস্য, বসবাস করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাদঘি প্রদেশে। কিন্তু এদিকে হাতে কাজ নেই, উপার্জন নেই। কাজেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
সিএনএনকে দেওয়া একটি ইন্টারভিউতে পারওয়ানা মালিকের বাবা আবদুল জানান তিনি ক'মাস আগেই তাঁর ১২ বছর বয়সী মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবারের পেট চলছিল না। সম্প্রতি বাধ্য হয়েই বিক্রি করেন ন'বছরের কন্যাটিকেও। ছোট্ট পারওয়ানা হয়ত তখনও জানত না, ঠিক কী পরিণতি অপেক্ষা করে রয়েছে তার জন্য। সে বারবার বলত, পড়াশোনা শিখে শিক্ষিকা হতে চায়। কিন্তু তালিবানি শাসনে তাদের পরিবারের দুরাবস্থা সেই সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। প্রায় নিজের বাবার বয়সী কুরবানকে যমের মতো ভয় পেত সে৷ তার ধারণা ছিল তাকে দিয়ে ঘরের কাজ করাবে কুরবান, মারধোর করবে।
তবে এত আপত্তি, এত বাধায় লাভের লাভ হয়নি। কথামতো হাজির হয়েছে কুরবান। মেয়ের বাবার হাতে ধরিয়েছে বেশ কিছু ভেঁড়া, জমি ও নগদ। যার সবমিলিয়ে মূল্য দু'লক্ষ আফগানি মুদ্রা (২২০০ মার্কিন ডলার)। তারপর বিয়ে সেরেছে ফুটফুটে পারওয়ানার সঙ্গে। বিয়ে শেষে আবদুল অনুরোধ করেছিল, বলেছিল, 'পারওয়ানা আপনার স্ত্রী। দয়া করে একে অত্যাচার করবেন না, মারবেন না।' ছোট্ট পারওয়ানার সঙ্গে পরিবারের সদস্যের মতো কথা দিয়েছিল কুরবানও।