সেনকাকু ঘিরে হাওয়া গরম, চীনকে চ্যালেঞ্জ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার
প্রসঙ্গত, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ ১৮৯৫ সাল থেকে জাপানের হাতে ছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হওয়ায় ওই দ্বীপপুঞ্জের ওপর কর্তৃত্ব সাময়িকভাবে হারায়। সেই সময় দ্বীপপুঞ্জটির শাসনভার ছিল আমেরিকার হাতে। ১৯৬৮ সালে সেখানে খনিজ তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। এবার চীন দাবি করে, সেনকাকু (চীনা ভাষায় দাওয়ু) দ্বীপপুঞ্জটি তাদের ভূখণ্ড থেকে অনেক কাছে। তাই এর ওপর একমাত্র তাদের অধিকার। ১৯৭২ সালে ওকিনাওয়া চুক্তি মারফত আমেরিকা এর শাসনভার জাপানের হাতে তুলে দেয়। জাপান পাল্টা দাবি জানায়, দীর্ঘ সময় তারা ওই দ্বীপপুঞ্জের মালিক ছিল। তারা ছাড়া আর কেউ ওখানে মালিকানা কায়েম করতে পারবে না।
পাহাড়-জঙ্গলে ঢাকা জনমানবহীন ওই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে কামড়াকামড়ির আরও একটা কারণ আছে। সামরিক। তাইওয়ানের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব চীন পেতে চাইছে। তাতে চিরশত্রু তাইওয়ানের ওপর সহজে নজরদারি চালানো যাবে। বেজিংয়ের এই ভয়ও আছে যে, ওখানে জাপান নির্বিবাদে ঢুকে পড়লে তাদের বিপদ। কারণ, আমেরিকার মিত্ররাষ্ট্র জাপান ঢুকে পড়া মানেই সেনকাকুতে ওয়াশিংটনের আধিপত্য কায়েম হওয়া। এখন শুধু কুবা দ্বীপে আমেরিকার একটি ছোটো সামরিক ঘাঁটি আছে। বাকি দ্বীপগুলি নিয়ে চীন ও জাপান-আমেরিকার টানাপোড়েন অব্যাহত।
অবস্থা হঠাৎ জটিলতর হয় গত সপ্তাহে বেজিংয়ের একটি পদক্ষেপ ঘিরে। তারা বলে, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ চীনের আছে, চীনেরই থাকবে। দ্বীপপুঞ্জটি ও তার আশপাশের আকাশকে চীন 'এয়ার ডিফেন্স জোন' বলে দাবি করে। হুমকি দেয়, অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় বিদেশি বিমান ঢুকলে গুলি করে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। সামরিক বিমান শুধু নয়, যাত্রীবাহী বিমানও এই হুঁশিয়ারির আওতায় পড়ে। চীনকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আমেরিকা দু'টি বি-৫২ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে সেখানে টহলদারির জন্য। এদিন জাপানি বোমারু বিমান ওখানে চক্কর কাটে।
এখানেই শেষ নয়। সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশ নিজেদের দাবি করে দক্ষিণ কোরিয়াও এগিয়ে এসেছে জাপানের সমর্থনে। অনুমান, আমেরিকার হাত শক্ত করতেই দীর্ঘদিনের বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের পক্ষ নিয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতার বিভাজনটা দাঁড়িয়েছে এই রকম: একদিকে, চীন। অন্যদিকে, জাপান-আমেরিকা-দক্ষিণ কোরিয়া। পরিস্থিতি ঘোরালো বুঝে দু'পক্ষকেই সংযত হতে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব বান-কি মুন।
তাতে চিঁড়ে ভেজার কোনও লক্ষণ নেই। চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র কিং গাং বলেছেন, "সব দেশকে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের জানিয়ে ওখান দিয়ে বিমান ওড়াবেন। অনভিপ্রেত কিছু যাতে না ঘটে, সেটা মনে রাখবেন।" হুমকির সুর স্পষ্ট। জাপানের মুখ্য ক্যাবিনেট সচিব ইয়োশিহিদে সুগা পাল্টা বলেন, "চীনের ভয়ে আমরা বিমানের পথ বদলাতে রাজি নই। আজকে আমাদের বোমারু বিমান ওখানে টহল দিয়েছে।"