পাকিস্তানে হিন্দু মন্দিরে হামলা নিয়ে দিল্লি মুখ খুলতেই নড়েচড়ে বসলেন ইমরান! পাক প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা
প্রকাশ্য ভিডিওতে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের ভোঙ্গ শহরে এক গণেশ মন্দির ঘিরে প্রবল ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে সেখানে হামলা চালায় আততায়ীর দল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত এই গণেশ মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে রীতিমতো সব হয়েছে দিল্লি। ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই ভারতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের অফিশিয়ালকে তলব করেছে এস জয়শঙ্করের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। এরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পদক্ষেপ নিতে শুরু করে দিলেন।
ইমরান খান কী জানিয়েছেন?
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছেন, যে মন্দির ভাঙা হয়েছে, তা ফের একবার গড়ে দেওয়া হবে। মন্দিরের সংস্কারও করবে ইমরান প্রশাসন। সাফ বার্তায় কার্যত আর্খিকভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে গণেশ মন্দিরকে নতুন করে সংস্কার করা হবে। শুধু তাই নয়, এক সাম্প্রতিক টুইটে ইমরান বলেন, যারা এই ভাঙচুরের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে, তাদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন ইমরান।
চাপ বাড়ছে ইমরান সরকারের উপর
প্রসঙ্গত, ইমরান সরকারের ওপর বিপুলভাবে চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে পাকিস্তানে হিন্দু কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রমেশ কুমার ভাঙ্কওয়ানির সঙ্গে সেদেশের চিফ জাস্টিসের দেখা সাক্ষাতের পরই ইমরান সরকারের তরফে এই বক্তব্য আসতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের তরফে হিন্দু প্রতিনিধি হিসাবে ভাঙ্কওয়ানির নামই সোনা যায়। সেক্ষেত্রে ইমরানের নেতৃত্বাধীন পিপিপির কাছে এই ভাঙ্কওয়ানির সঙ্গে থাকা হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সই জায়গা থেকে ইমরান প্রশাসন এই মন্দিরে হামলা নিয়ে আরও বড় পদক্ষেপের পথে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
স্বতঃপ্রণোদিত মামলা
প্রসঙ্গত, মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় পাকিস্তানের চিফ জাস্টিস গুলজার আহমেদ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের চিফ সেক্রেটারি ও আইসিকে তলব কেরছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবারই তলব করা হয়েছে তাঁদের। এদিকে, ইমরান খান সাফ জানিয়েছেন, কোনও মতেই এই মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় কোনও গাফিলচতি পুলিশের তরফে হলে , তা রেয়াত করা হবে না। এর আগে ইমরানের কড়া টুইটের পরই পাকস্তানের সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস এই বড় পদক্ষেপ নেন।
কীভাবে চলে মন্দিরে ভাঙচুর?
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খান জেলার ভোঙ্গ গ্রামে শতাধিক উন্মত্ত জনতা মন্দির ভাঙচুর করে এবং মন্দির সংলগ্ন হাইওয়ে অবরোধ করে। এর আগে সেখানে স্থানীয় এক ৮ তেকে ৯ বছরের বয়সী শিশু এলাকার এক মাদ্রাসায় প্রস্রাব করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এলাকাবাসী উত্তজিত হয়ে পড়েন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকেই। এদিকে, ওই শিশুকে স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করে বলেও জানা যায়। এরপর স্থানীয় আদালত শিশুকে জামিনে মুক্তি দেয়। এরপর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকার জনতা। তারপর তাঁরা মন্দির ভাঙচুরে উদ্যত হয়। গোটা মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা কার্যত ভাইরাল হতে শুরু করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তা ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি গুলজার আহমেদ বৃহস্পতিবার এই ঘটনা বিষয়ে সংসদীয় সদ্য রমেস কুমার ভঙ্কওয়ানির টুইট থেকে জানতে পারেন। এরপর ভাঙ্কওয়ানির সঙ্গে পাকিস্তানের সিজেআই সাক্ষাৎ করেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
তুমুল ক্ষোভ উগড়ে দেয় ভারত
এদিকে, জানা গিয়েছে বুধবারের ঘটনায় ভারতের অবস্থিত পাকিস্তানের হাইকমিশনের অফিসারদে বিষয়টি নিজে জানানোর জন্য তলব করে দিল্লি। পাকিস্তানের বুকে এভাবে একটি মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে দিল্লি। লাহোর থেকে ৫৯০ কিলোমিটারের দূরত্বে থাকা একটি এলাকায় এভাবে প্রবল ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে একচুল জায়গাও ছাড়েনি দিল্লি। এদিকে,উন্মত্ত জনতা মন্দিরে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর করে ৷ পরে মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেয় ৷ মন্দির সংলগ্ন হিন্দুদের বাড়িতেও হামলা করা হয়েছে ৷ এরপরই পাক হাইকমিশনের দায়িত্বে থাকা আফতাব হোসেন খানকে তলব করে দিল্লি। জানিয়ে দেয় যে পাকিস্তানের বুকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত কতটা উদ্বিগ্ন। তীব্র ভাষায় এর সমালোচনা করে দিল্লি। ভাঙচুরের ঘটনা ঘিরে পাকিস্তানি হিন্দুরা রহিম ইয়ার খান জেলায় প্রবল বিক্ষোভ দেখান।