আফগানিস্তানে গণতন্ত্রের শাসন কেন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে না তালিবান ? 'যুক্তি' দিলেন সংগঠনের নেতা
তালিবানের তাবড় নেতা ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি এক নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে , আফগানস্তানের বুকে এবার তালিবান জমানায় আগের মতোই গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা থাকবে না। ২০ বছর আগেও আফগানিস্তানে তালিবানরা এমনই এক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো তালিবানের বার্তা নিয়ে গোটা বিশ্ব শঙ্কিত।
ব্রিটেনের সেনা প্রধান কী বলছেন?
ব্রিটেনের সেনা প্রধান জেনারেল নিক কার্টার বলেছেন , তালিবান শাসন আর আগের মতো থাকবে না। আফগানিস্তান যে তালিবানকে দেখতে চলেছে তা আগের মতো নয়। তাঁর দাবি , এখন 'ওয়েই অ্যান্ড সি' এর নীতি ধরেই তালিবানের বিষয়ে এগিয়ে চলা উচত। ইউকের সেনা জেনারেল নিক কার্টার তালিবানকে 'শত্রু' হিসাবেও মানতে নারাজ। তাঁর মতে তালিবানরা আফগানিস্তানের ভূমিপুত্র । যাঁদের পশতুনওয়ালি নিয়মে জীবনযাপন করার প্রবণতা রয়েছে। আফগানিস্তানের আদিবাসী বলেও উল্লেখ করে তালিবানদের সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন তিনি।
গণতন্ত্র নিয়ে আফগান নেতাদের বক্তব্য
এদিকে আফগানিস্তানে নেতাদের মধ্যে ওয়াহিদউল্লাহ হাশিমি জানিয়েছেন যে, আফগানিস্তানে গণতন্ত্রের শাসন হবে না। কারণ এই দেশের ভিত্তির মধ্যেই নেই গণতন্ত্র। ফলে সেই গণতন্ত্র যখন দেশের ভিত্তি নয়, আর তা নিয়ে ভাবতে রাজি নয় তালিবানরা। এই যুক্তিতেই আফহানিস্তানে শরিয়ৎ আইন লাগু হবে। একথা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তালিবানের অনেকে।
তালিবান আছে তালিবানেই!
এর আগে, জালালাবাদে আফগানিস্তানের জাাতীয় পতাকা নামিয়ে দেয় তালিবানরা। সেখানে উত্তোদল করা হয় তালিবানি পতাকা । ঘটনার প্রতিবাদ করায় কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করেছে তাালিবান। এদিকে, আরও এক জায়গায়এক মহিলা বোরখা না পরায় তাঁকে গুলি করে তালিবানরা। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে কীভাবে গণতন্ত্রের সাসন প্রতিষ্ঠা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। সেই জায়গা থেকে তালিবানরা নিজেরাই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আফগানিস্তান আপাতত কোনও মতেই গণতন্ত্রের শাসন দেখতে পাবে না।
আফগানিস্তানের মসনদে এবার কে?
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আবদুল গনি বরাদর, যে তালিবানের কর্তা আপাতত, তাকেই আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে বানো হবে। ফলে এক গনি যেতই আরেক গনি আফগানিস্তান শাসন করতে চলেছে বলে খবর। এছাড়াও গনির ডেপুটি হিসাবে মৌলবী ইয়াকুব আরও একটি পোক্ত চেয়ার পাবেন। এদিকে, ইয়াকুবের তার সন্তান মোল্লা ওমরের হাত ধরে তালিবান গোষ্ঠীর জন্ম হয়। এদিকে, হাক্কানি নেটওয়ার্কও তার হাতে তৈরি। এই পরিস্থিতিতে তালিবানরা আপাতত নিজেদের সেনা শক্তিকে চাঙ্গা করতে ব্যাস্ত। মার্কিন সেনাদের রেখে যাওয়া সমরাস্ত্রে তারা কবজা করে ফেললেও, সেখানে চালক শক্তি তাদের হয়নি। ফলে আপাতত পাইলচের খোঁজে রয়েছে তালিবানরা। কারণ কোনও তালিবান নেতা বা সদস্যই বিমান চালাতে জানে না।
আফগানিস্তানে জাতীয় শক্তি কে হতে চলেছে?
জানা গিয়েছে, তালিবানরা নতুন একটি জাতীয় শক্তি গড়ে তুলতে চলেছে। যে ফোর্সে থাকতে চলেছে আফগানিস্তানের প্রাক্তন সেনা সদস্যরাষ এই সেনা সদস্যরা এর আগে ন্যাটো বাহিনীর থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে তালিবানের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছে। তবে জানা যাচ্ছে আফগানিস্তানে আসা মার্কিন টাকা কার্যত নয়ছয় করে এই আফগান সেনা জওয়ানদের বেতন দিতে পারেনি আফগান সরকার। ফলে সেনারা বিদ্রেহ জানিয়ে তালিবানের দিকে ঝুঁকে যায় একটা সময়। আর তাতেই জমি খুইয়ে দুর্বল হয় আফগান প্রশাসন। সেই জায়গা থেকে তুরস্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষিত হওয়া সেনারা আফগানিস্তানের ফৌজে ছিলেন। এবার তাঁদের নিয়েই নয়া ফৌজ গঠনের পথে হাঁটছে আফগানিস্তান। এদিকে, পরিস্থিতি সেভাবে ভালোর দিকে ঠেকছে না ফ্রান্সের। ফ্রান্স সাফ জানিয়েছে, তালিবানরা যে আগের মতো নেই আর তা প্রমাণ করুক তারা আগে। তারপর বিশ্বাস করা যাবে। এদিকে, জার্মানি আফগানিস্তানে গোটা পরিস্থিতির জন্য আমরিকাকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে, আফগানিস্তান নিয়ে মুখ খুলেই আমেরিকার বাইডেন সরকার জানিয়েছে, মার্কিনিরা আগের মতো বুল করবে না। তারা আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে সঠিক কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
কোথায় ধাক্কা খাচ্ছে তালিবানরা
গোটা আফগানিস্তান নয়, তবে তার ৯৮ শতাংশ আপাতত তালিবানের দখলে। এর মধ্যে তালিবানরা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের পাঞ্জশিরে প্রবল ধাক্কা খেয়েছে। এছাড়াও জালালাবাদে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে তালিবানরা। পারস্যের ভাষায় 'পাঞ্জশির' শব্দের অর্থ হল পঞ্চ 'শের' বা পাঁচটি সিংহের সমাহার। এমন এক প্রদেশের যোদ্ধারা যে সিংহ বিক্রমে শত্রু দমন করত পারেন তা বুঝিয়ে দিয়েছে গতকালের পাঞ্জশির এলাকার যোদ্ধারা। কাবুল থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতত আফগানিস্তানের পঞ্জশির। কাবুলের আফগান সেনা যেখানে অসহায়ের মতো অস্ত্র ত্যাগ করেছে তালিবানের সামনে সেখনে ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহর বাহিনীর যোদ্ধারা জানান দিয়েছে ,কাবুল যা করে দেখাতে পারেনি তা করে দেখাবে পাঞ্জশির।