For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

তালেবান: এক বছরে যেভাবে বদলে গেছে আফগান জনগণের জীবন

এক বছর আগে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেবার পর সেখানকার মানুষজনের জীবনে আমূল পরিবর্তন এসেছে।

  • By Bbc Bengali

আপনি যখন কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন, প্রথমেই যে বিষয়টা আপনার নজরে পড়বে তা হল ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টে সিল লাগানোর দায়িত্ব থাকা কালো পোশাক আর মাথায় বাদামী স্কার্ফ পরা নারীদের।

তালেবান: এক বছরে যেভাবে বদলে গেছে আফগান জনগণের জীবন

মাত্র এক বছর আগে এই বিমানবন্দরে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য মরিয়া আতঙ্কিত মানুষের যে স্রোত তৈরি হয়েছিল সেই চিত্র এখন বদলে গেছে।

এখন জায়গাটি অনেক শান্ত এবং পরিচ্ছন্ন। গ্রীষ্মের মৃদু হাওয়ায় উড়ছে সারি সারি সাদা তালেবান পতাকা। বিলবোর্ডে আগেকার বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবিগুলো বদলে গেছে। এই বিমানবন্দর পার হলেই যে দেশ, কী রয়েছে সেখানে, যে দেশটিতে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে?

নারীদের চাকরী দিয়ে দিতে হবে পরিবারের পুরুষদের

"ওরা চাইছে আমি যেন আমার চাকরিটা আমার ভাইকে দিয়ে দেই", একটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন এক নারী।

"আমরা আমাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এই অবস্থান অর্জন করেছি.....আমরা যদি এটা মেনে নেই তার অর্থ হবে আমরা নিজেদের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করছি", লিখেছেন আর এক নারী।

আমি বসেছিলাম দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তার সাথে যিনি আমাকে আফগান নারীদের পাঠানো এই বার্তাগুলো দেখাচ্ছিলেন।

ষাটের বেশি নারীদের গ্রুপ এটি যাদের অনেকেই আফগানিস্তানের রাজস্ব অধিদপ্তরে কাজ করতেন।

গত বছরের অগাস্ট মাসে কাজ ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার আদেশ পাওয়ার পর এই নারীরা একত্রিত হয়েছেন।

তারা জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা তাদের বলেছেন বাড়ির কোন পুরুষ সদস্যের সিভি পাঠাতে যারা ওই পদের জন্য আবেদন করতে পারেন।

"এটা আমার চাকরি", জোরালোভাবে বলছেন এক নারী। এই গ্রুপের অন্য আর সকল সদস্যের মতো তিনিও তার পরিচয় গোপন করার অনুরোধ করেছেন।

"অনেক কঠিন সময়ের মধ্যেও এই কাজটি পেতে আমি সতের বছরের বেশি সময় ধরে শ্রম দিয়েছি এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। এখন আবার সেই শূন্যের কোঠায় ফিরে গেছি।"

যুক্তরাষ্ট্রে হামলার ২০ বছর পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার

বিক্ষোভ দমনে তালেবানের নিষ্ঠুরতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ

আফগানিস্তানের বাইরে থেকে টেলিফোনে আমাদের সাথে যোগ দিলেন আমিনা আহমাদি যিনি রাজস্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন।

তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে পেরেছেন কিন্তু তাতে তার মুক্তি মেলেনি।

"আমরা আমাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলছি", আক্ষেপ করে বলছিলেন তিনি।

"শুধুমাত্র নিজের দেশেই সেই পরিচয় আমরা ধরে রাখতে পারি।"

"আফগানিস্তানের নারী নেতৃত্ব" নামের নারীদের এই গ্রুপটি তাদের শক্তি যোগায়। আর তারা যা চাইছেন সেটা হল চাকরী ফেরত।

তালেবান শাসন শুরুর আগে দুই দশক ধরে আফগানিস্তানের যে আন্তর্জাতিক সংযোগ তৈরি হয়েছিল তখন এই নারীরা শিক্ষা ও পেশাগত সুযোগ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। তালেবান শাসন শুরুর পরই সেই সুযোগ শেষ হয়ে গেছে।

যদিও তালেবান কর্মকর্তারা বলছেন নারীরা এখনো কাজ করছেন। তবে এখনো যারা কাজ করছেন তারা মূলত স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষা এবং বিমানবন্দরে দেখে আসা সেই নারীদের মত নিরাপত্তা কর্মীর কাজে নিয়োজিত। এই পেশাগুলোতেই নারীদেরই বেশি দেখা যায়।

তালেবান আরও বলছে, যে নারীরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন পদে কাজ করতেন তাদের এখনো বেতন দেয়া হচ্ছে। যদিও তার পরিমাণ আসল বেতনের তুলনায় সামান্যই।

একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বলছিলেন একদিন কিভাবে তাকে তালেবান নিরাপত্তারক্ষী রাস্তায় থামিয়ে তার হিজাব নিয়ে কটূক্তি করে বলেছিল তার পরনের পোশাক যথেষ্ট নয়। যদিও সেদিন তার পুরো শরীরই ঢাকা ছিল।

তিনি বলে উঠেছিলেন, "হিজাবের চেয়েও সমাধান করার জন্য আরও অনেক বড় সমস্যা রয়েছে।"

গ্রামীণ জনপদে দুর্ভিক্ষের ভীতি

আফগানিস্তানের মধ্যভাগের প্রদেশ ঘার। সেখানে সোনালি ভুট্টোর ছড়া রোদে ঝলমল করছিল। শান্ত মনোরম পরিবেশ। দূর থেকে ভেসে আসছিল মৃদু শব্দে গরুর ডাক।

একা নারীদের জন্য দূর পথ ভ্রমণে তালেবানের নিষেধাজ্ঞা

টিভি নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধসহ তালেবানের আট দফা নির্দেশিকা

আঠারো বছর বয়সী নূর মোহাম্মদ এবং পঁচিশ বছর বয়সী আহমাদ শস্যের ক্ষেতে কাস্তে দিয়ে কাজ করছিলেন।

"খরার কারণে এ বছর অনেক কম গম হয়েছে," নূরের মন্তব্য। তার তরুণ মুখকে ঢেকে দিয়েছে ঘাম এবং ময়লা।

"কিন্তু এটিই একমাত্র কাজ যা আমি খুঁজে পেয়েছি।"

ক্ষেতটি পেছনে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

শক্ত সমর্থ এই দুই পুরুষের দশ দিনের শ্রমের মূল্য দুই ডলারের মতো।

"আমি বিদ্যুৎ প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, কিন্তু আমার পরিবারের খাওয়া পড়ার জন্য পড়াশুনা ছাড়তে হয়েছে", বলছিলেন তিনি। তার কণ্ঠে স্পষ্ট আক্ষেপ।

আহমাদের জীবনের গল্পটাও ঠিক একইরকম কষ্টদায়ক।

"আমি ইরানে যাওয়ার জন্য আমার মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছিলাম কিন্তু আমি কাজ খুঁজে পাইনি," তিনি ব্যাখ্যা করেন।

প্রতিবেশী ইরানে কষ্টদায়ক কাজ আফগানিস্তানের অন্যতম এই দরিদ্র প্রদেশের অনেকের জন্য বেচে থাকার একটি উপায় ছিল। কিন্তু ইরানেও কাজ কমে গেছে।

"আমরা আমাদের তালেবান ভাইদের স্বাগত জানাই," বলছেন নূর।

"তবে আমাদের এমন একটি সরকার দরকার যারা আমাদের সুযোগ সুবিধা দেবে।"

সেদিনের শুরুতে আমরা ঘার প্রদেশের মন্ত্রীসভার সাথে বসেছিলাম। পাইন কাঠ দিয়ে বানানো চকচকে টেবিল ঘিরে বসেছিলেন মাথায় পাগড়ি বাঁধা একদল পুরুষ পরিবেষ্টিত তালেবান গভর্নর আহমেদ শাহ দিন দোস্ত।

যুদ্ধের সময়কার একজন প্রাক্তন ছায়া ডেপুটি গভর্নর দিন দোস্ত তার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করে দিলেন।

"এতসব সমস্যা আমাকে রীতিমত কষ্ট দেয়," তিনি বলছেন।

"দারিদ্র্য, ভাঙাচোরা রাস্তা, হাসপাতালে যেতে কষ্ট। অনেক স্কুল সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।"

যুদ্ধ শেষ মানে এখানে এখন অনেক বেশি সাহায্য সংস্থা কাজ করছে। এমন সব জায়গায় তারা রয়েছে যে জায়গাগুলোতে আগে যাওয়া যেত না। এই বছরের শুরুতে, ঘার প্রদেশের সবচেয়ে দূরবর্তী দুটি জেলায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

কিন্তু গভর্নর দিন দোস্তের জন্য যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।

তিনি বলেছিলেন মার্কিন বাহিনীর হাতে তিনি বন্দী ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। "আমাদের আরও কষ্ট দেবেন না," তিনি জোর দিয়ে বলছিলেন।

স্বীকৃতির জন্য বিদেশিদের শর্তে কতটা কান দিচ্ছে তালেবান

তালেবানের অধীনে বেহাল স্বাস্থ্যসেবায় যেভাবে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন আফগান নারীরা

"আমাদের পশ্চিমা সাহায্যের দরকার নেই।"

"কেন পশ্চিমা দেশগুলো সবসময় এত হস্তক্ষেপ করে?"

"আপনার দেশে নারী বা পুরুষদের সাথে কীভাবে আচরণ করা হয় সে নিয়েতো আমরা প্রশ্ন করি না।"

এর পরের কয়েকদিন ধরে আমরা একটি স্কুল এবং একটি অপুষ্টি ক্লিনিক পরিদর্শন করি। আমাদের সাথে ছিল তার দলের লোকজন।

"আফগানিস্তানের মনযোগ প্রয়োজন," বলছিলেন তালেবান সরকারের বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা তরুণ স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক আবদুল সাতার মাফাক।

তার কথায় বাস্তবতার ছোঁয়া পাওয়া গেল।

"আমাদেরকে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে এবং এর মধ্যে রাজনীতি জড়ানোর দরকার নেই।"

আমার মনে পড়লো তরুণ নূর মোহাম্মদ আমাকে গমের ক্ষেতে যা বলেছিলেন সেই কথা।

"দারিদ্র্য এবং দুর্ভিক্ষও একটি লড়াই। বন্দুক যুদ্ধের চেয়েও সে লড়াই অনেক বড়।"

মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য বন্ধ হেরাতের স্কুল

আঠারো বছরের সোহেলা উত্তেজনায় ছটফট করছিল।

একটি অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে আমি তার পেছন পেছন যাচ্ছিলাম হেরাতের শুধুমাত্র নারীদের জন্য এক বাজারের দিকে।

সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং সৃজনশীলতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন শহর হেরাতের পরিচিতি।

তালেবানরা গত বছর এটিকে বন্ধ করে দেবার পর বাজারটি আজই প্রথম আবার খুলেছে।

আমরা তার পরিবারের মালিকানাধীন পোশাকের দোকানের কাচের দরজা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলাম। তখনো পুরোপুরি কাজ শুরু করার জন্য দোকানটির প্রস্তুতি শেষ হয়নি।

এক কোনায় রাখা আছে সেলাই মেশিনের সারি। ছাদে ঝুলছে লাল হৃদয় আঁকা বেলুন।

"দশ বছর আগে, আঠারো বছর বয়সে আমার বোন এই দোকানটি চালু করেছিল" আমাকে বলছিলেন সোহেলা।

তার মা এবং দাদির হাতে সেলাই করা ঐতিহ্যবাহী কুচি পোশাকের কাজ দেখাচ্ছিল সে।

তার বোন একটি ইন্টারনেট ক্লাব এবং একটি রেস্তোরাঁও খুলেছিল।

নারীদের এই বাজারটিতে এক ধরনের কাজের তোড়জোড় দেখা যাচ্ছিল।

কেউ রসদ দিয়ে তাকগুলো সাজাচ্ছিল। অন্যরা গয়না এবং সূচিকর্ম করা পোশাক ঘুরে ঘুরে দেখছিল আর গল্প করছিল।

বাজারটিতে আলো খুব কম। কিন্তু এই আবছা আলোতেই এখানকার নারীদের জন্য একটু আলোর রশ্মি নিয়ে এসেছে এই বাজারটি। যে নারীরা কেবল ঘরে বসেই অনেক বেশি সময় কাটিয়েছেন।

সোহেলার বলার মতো আর একটি গল্প ছিল।

"তালেবানরা হাইস্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।"

যার বিশাল পরিণতি রয়েছে তার মতো একজন কিশোরীর জীবনে।

তালেবানের অতি-রক্ষণশীল শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুদের নির্দেশে বেশিরভাগ হাইস্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে।

যদিও অনেক আফগান এমনকি তালেবান সদস্যরাও সেগুলো আবার খুলে দেবার আহ্বান জানিয়েছে।

"আমি গ্রেড বারোতে পড়ছি। আমি যদি হাইস্কুল পাশ না করি তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে পারব না।"

আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যেমন সোহেলা সে হয়ে উঠতে চায়, আফগানিস্তানে থেকে সে তেমনটা হতে পারবে কি না।

"নিশ্চয়ই", আত্মবিশ্বাসের সাথে সে বলে উঠলো।

"এটা আমার দেশ এবং আমি অন্য কোন দেশে যেতে চাই না।"

কিন্তু স্কুলে যাওয়া ছাড়া একটি বছর নিশ্চয়ই অনেক কঠিন ছিল।

"শুধু আমার জন্য না আফগানিস্তানের সব মেয়ের জন্যেই"

"স্কুল এখন একটি কষ্টের স্মৃতি"।

এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। তার কণ্ঠ চাপা পড়ে গেলে কান্নার নিচে।

"আমি ক্লাসের সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থী ছিলাম।"

English summary
Taliban: How Afghan People's Lives Changed in One Year
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X