তুরস্কের স্কুলে সিরিয়ান শিশুরা, এখনো যাদের বোমার ভয় কাটে নি
সিরিয়ার যুদ্ধের কারণে যেসব শিশুরা তুরস্কে পালিয়েছে তারা সেখানেই স্কুলে পড়ছে। কিন্তু ভয়াল যুদ্ধের স্মৃতি এখনো তাদের মন থেকে যায় নি, আকাশে বিমান দেখলে তারা ভয়ে চিৎকার করে 'ওই দেখো, বোমা।'
সিরিয়ার যে শিশুরা যুদ্ধের কারণে তুরস্কে পালিয়ে এসেছে - তাদের অনেকের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে তুরস্কের শিশুদের সাথে একই স্কুলে।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থায়নে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া শিশুদের পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে, এখন সেখানে প্রায় তিন লক্ষ ৫০ হাজার শিশু এখন পড়াশোনা করছে।
তুরস্কের গাজিয়ানটেপে অবস্থিত এমনি একটি স্কুলের নাম সারায়িলান স্কুল। এতে পড়াশোনা করছে এমন কিছু শিশু - যারা দুই দেশের নাগরিক।
কিছু রয়েছে তুরস্কের, কিছু সিরিয়ার। একই বয়স তাদের, স্কুলের ড্রেসও একই রকম। একটা শ্রেণীকক্ষ, যেটা সব বাধা -বিপত্তির ঊর্ধ্বে।
এই স্কুলের একজন শিক্ষক মোহাম্মদ আলি চিনার বলছিলেন, "সিরিয়ার এই শিশুদের মধ্যে এখনো এতটাই ভীতি কাজ করে যে একদিন আমরা খেলা করার জন্য তাদের বাইরে নিয়ে গেলাম। তখন একটা বিমান যাচ্ছিল। তারা ভয়ে সবাই চিৎকার করে বলে উঠলো 'ঐ দেখো - বোমা'।"
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব: নেপথ্যে কী?
দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক বৈঠক: কৃতিত্ব কি ট্রাম্পের?
"যদি সিরিয়ান শরণার্থীদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় তখন তারা তুরস্কের মধ্যেই একটা নিজেদের জগত তৈরি করবে যেখানে তুরস্কের অস্তিত্ব থাকবে না। তারা এখানকার কাউকে চিনবে না, এখানকার নিয়মকানুন সম্পর্কেও জানবে না" - বলছিলেন শিক্ষক মোহাম্মদ আলি চিনার।
তুরস্ক থেকে আসা আরিফ বলছে তার কাছে খুব ভালো লাগে বন্ধু তৈরি করতে।
তার মতে সিরিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
সিরিয়া থেকে আসা আয়ি বলছে "আমি এখানে এসে শিখেছি কিভাবে ভালো ব্যবহার করতে হয়। আমি পড়তেও শিখেছি। আমার অসম্ভব ভালো লাগে"।
সিরিয়াতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তুরস্ক ৩৫ লক্ষ সিরিয়ার নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদেরকে বেশ ভালোভাবেই স্বাগত জানিয়েছে দেশটি।
সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলোর শিশুদেরকে তুরস্কের স্কুলেই পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থে । এখানেই এই শিশুরা একে অপরকে চেনা-জানার সুযোগ পাচ্ছে। ।
তবে কিছু কিছু এলাকা সংরক্ষিত। সেখানে সিরিয়া এবং তুরস্কের নাগরিকরা খুব একটা মেলামেশা করতে পারে না।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
সিরিয়ার যে গণবিক্ষোভ থেকে বিদ্রোহ আর গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল
এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা গত বছরে তিন গুণ বেড়ে গেছে। যার ফলে ৩৫ জন নিহত হয়েছে।
তাদের যে আরো এক হওয়া দরকার সেটা পরিষ্কার।
এসব স্কুলে সিরিয়ার শিশুরা তুরস্কের ভাষাই শিখছে। তবে তারা অন্যান্য ক্লাসেও যোগ দিতে পারে। মিশ্র এই স্কুলগুলোর লক্ষ্য হল পূর্বের সব ধ্যান-ধারণা পাল্টে দেয়া।
সিরিয়ান শিশুদের একটা প্রজন্ম যারা যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নিয়েছে তারা তুরস্ককেই এখন নিজেদের বাড়ী বলে পরিচয় দেয়।