সুদান: গণবিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক
সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক বিতর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ক্ষমতায় পুনর্বহালের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত অক্টোবরে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর মি. হামদককে গৃহবন্দী করেছিল। কিন্তু যার নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান হয়, তার সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির পর তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করা হয়।
সম্পূর্ণ বেসামরিক শাসনের দাবিতে চলমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে।
তার পদত্যাগের দিনে খার্তুমে দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে ওই বিক্ষোভের সময় কমপক্ষে দু'জন নিহত হয়েছেন।
এক টেলিভিশন ভাষণে মি. হামদক বলেন, সুদান একটি "বিপজ্জনক মোড়ে রয়েছে, যা তার সমগ্র অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে"।
তিনি আরও বলেন যে তিনি দেশটিকে "বিপর্যয়ের দিকে যাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে" তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু "সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য যা দরকারি, সব কিছু করার পরও...সেটি ঘটেনি"।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
- সুদানে অভ্যুত্থানের খবর, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান গ্রেফতার
- সুদানে যেভাবে জনতার উত্থানে স্বৈরতন্ত্রের পতন
- যেভাবে সুদানের ৩০ বছরের শাসকের উত্থান ও পতন
- সুদানের সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ার সিদ্ধান্ত হলো যেভাবে
- যুদ্ধ-বিগ্রহ উপেক্ষা করে নানা দেশে উন্নয়ন কাজ করছেন যেসব বাংলাদেশী
"আমি দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবং এই মহান দেশের অন্য একজন পুরুষ বা নারীকে সুযোগ দেব... একটি বেসামরিক গণতান্ত্রিক দেশে উত্তরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সময় পার করতে সাহায্য করার জন্য।"
২০১৯ সালে একটি বিক্ষোভের জের ধরে সুদানের দীর্ঘমেয়াদী একনায়ক ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটিকে গণতান্ত্রিক শাসনের দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বেসামরিক এবং সামরিক নেতারা একটি অস্বস্তিকর ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তিতে সই করে।
নভেম্বরে মি. হামদকের সঙ্গে করা সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী দেশটিতে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পুনর্বহাল হওয়া এই প্রধানমন্ত্রী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রিসভার মাধ্যমে শাসন পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু নতুন বেসামরিক সরকারের কতটা ক্ষমতা থাকবে তা স্পষ্ট ছিল না এবং বিক্ষোভকারীরা বলছিল যে তারা সামরিক বাহিনীকে বিশ্বাস করে না।
রোববার রাজধানী খার্তুম ও ওমদারমান শহরের রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীরা "জনগণের কাছে ক্ষমতা" দেয়ার পক্ষে স্লোগান দেয় এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় কর্মীরা বলছেন যে ২০২২ সাল হবে "প্রতিরোধের ধারাবাহিকতার বছর"।
গণতন্ত্রপন্থী সুদান সেন্ট্রাল ডক্টরস কমিটির মতে, রোববার অন্তত দু'জন-সহ অভ্যুত্থানের পর থেকে বিক্ষোভে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান গত অক্টোবরের অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনী একটি গৃহযুদ্ধ প্রতিরোধ করার জন্য কাজ করেছিল, যে গৃহযদ্ধ প্রায় আসন্ন ছিল।
তিনি বলেছেন যে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনের পরিকল্পনার মাধ্যমে সুদান এখনও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়াতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবিসি'র নাইরোবির সংবাদদাতা ইমানুয়েল ইগুনজা তার বিশ্লেষণে বলেন, পহেলা জানুয়ারী সুদানের স্বাধীনতা দিবস, কিন্তু এই মুহুর্তে দেশে উদযাপন করার মতো তেমন কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকের পদত্যাগ সামরিক নেতাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা ভেবেছিলেন মি. হামদকের সাথে চুক্তি হওয়ার পর তা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করবে এবং তাদের ক্ষমতায় বহাল থাকা নিশ্চিত হবে।
স্পষ্টতই সেই হিসাবে ভুল ছিল। কিন্তু এর অর্থ হল সেনাবাহিনী এখন দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় রয়েছে এবং দেশটি বেসামরিক শাসনে ফিরে আসার পথে যা অর্জন ছিল, তা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এখন সাবেক ক্ষমতাচ্যুত নেতা ওমর আল-বশিরের কর্তৃত্ববাদী সময়কার সুদানকে ফিরিয়ে নেওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
একই সাথে এমন ঝুঁকিও রয়েছে যে সুদান একটি সমাজচ্যুত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ইতিমধ্যে ইঙ্গিত করে যে তারা বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনে বাধা সৃষ্টিকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেবে।
সুদানের অর্থনৈতিক সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এটি সুদানের জনগণের জীবনে আরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।