সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে পঞ্চম স্থানে সুভাষ চন্দ্র বসু- ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে পঞ্চম স্থানে সুভাষ চন্দ্র বসু- ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা
দু'হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা একটি 'শ্রোতা জরিপ'-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো - সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।
বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় পঞ্চম স্থানে আসেন সুভাষ চন্দ্র বসু। আজ তাঁর জীবন-কথা।
সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কিংবদন্তি নেতা, যুগে যুগে বাঙালিদের জন্য সর্বত্র যিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থেকেছেন।
তিনি বলেছিলেন "ভারত পুনরায় স্বাধীন হইবেই হইবে। এবং স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের খুব বেশি বিলম্বও নাই।"
তাঁর অনুরাগীদের কাছে সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন 'নেতাজি'। পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য ভারতের বাইরে গিয়ে তিনি বিদেশি শক্তির সাহায্য চেয়েছিলেন।
তাঁর জন্ম ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে ১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি। বাবা ছিলেন আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী।
সুভাষ বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র ডা. শিশির কুমার বসুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু (সম্প্রতি প্রয়াত) বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন সুভাষ বসুর প্রাথমিক লেখাপড়া কটক শহরে - প্রথমে স্টুয়ার্ট হাইস্কুলে, পরে র্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে।
"তাঁর স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন বেণীমাধব দাস, যাঁর প্রভাব সুভাষ বসুর জীবনে খুব বেশিরকম পড়েছিল। স্কুল জীবনে আরেক ব্যক্তি তাঁর ওপর বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছিলেন, তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ।"
মেধাবী ছাত্র সুভাষ চন্দ্র বসু ম্যাট্রিক পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করার পর ভর্তি হন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু ওই নামী কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনার বহি:প্রকাশের কারণে।
"ওই কলেজের ইংরেজ অধ্যাপক প্রফেসর ওটেনকে ছাত্ররা প্রহার করেছিল তার ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জন্য। সেই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। পরে তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে স্নাতক পাশ করেন," বলেন কৃষ্ণা বসু।
সুভাষ বসু ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিৎসউইলিয়াম হল থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেও তিনি ব্রিটিশের অধীনে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান কৃষ্ণা বসু।
ইণ্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হলেও কোন বিদেশি সরকারের অধীনে কাজ করতে তিনি চাননি। তাই নিয়োগপত্র পাওয়ার পরই তিনি সেই কাজে ইস্তফা দেন ১৯২১ সালে এবং ফিরে যান ভারতে।
বড়ভাই শরৎ চন্দ্র বসুকে তিনি লিখেছিলেন, "বহু কষ্ট এবং আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়েই শুধু একটি জাতিকে আমরা নির্মাণ করতে পারি।"
প্রয়াত অধ্যাপক অমলেন্দু দে (অনুষ্ঠান প্রচারের সময় ছিলেন কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি) বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন সুভাষ বসু। কিন্তু সেখান থেকে যখন বড় ভাইকে চিঠি লিখে জানালেন তিনি আইসিএস হবেন না, তখন বাঙালিকে তা উদ্বেলিত করল।
"অতবড় লোভনীয় একটা পদ পরিত্যাগ করলেন তিনি দেশের স্বার্থে। এটা বাঙালির মনে একটা তরঙ্গ সৃষ্টি করেছিল। বহুদিন ধরে বাঙালি আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশসেবা করার যে আদর্শ তুলে ধরেছিল, যার জন্য অগণিত লোক আন্দামানে নির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন সেই ধারাটিকে আরও প্রজ্জ্বলিত করলেন সুভাষ বসু।"
দেশে ফিরে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে সুভাষ চন্দ্র বসু যোগ দেন স্বাধীনতার আন্দোলনে। সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি হবার পর পরপর দুবার তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হন।
'স্বরাজ' নামে একটি সংবাদপত্র শুরু করেন তিনি ভারতে ফিরে যাবার পর এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারণার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদে অংশ গ্রহণের কারণে অনেকবার তাকে জেল খাটতে হয়েছিল।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত মতৈক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সুভাষ চন্দ্র। অনেকেই মনে করেন সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি মি. গান্ধী সেইসময় অবিচার করেছিলেন।
এই অনুষ্ঠান প্রচারের সময় প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রধান ছিলেন রজতকান্ত রায়। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছিলেন যে "রবীন্দ্রনাথও সেই সময় গান্ধীকে বলেছিলেন যাতে সুভাষ চন্দ্রকে কংগ্রেস থেকে তাড়ানো না হয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সাধারণ বাঙালি পর্যন্ত সবার তখন একটা অনুভূতি হয়েছিল যে অন্যায়ভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।"
উনিশশ' তিরিশের দশকে সুভাষ চন্দ্র বসু ইউরোপে পাড়ি জমান, যে সফরে তিনি ইটালির নেতা বেনিতো মুসোলিনি সহ বেশ কিছু ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দেখেন বিভিন্ন দেশে কম্যুনিজম এবং ফ্যাসিবাদ কীভাবে কাজ করছে।
এই সময় তিনি লেখেন "দ্য ইণ্ডিয়ান স্ট্রাগল" নামে তার বইয়ের প্রথম পর্ব। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছিলেন ১৯২০ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। বইটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হলেও ব্রিটিশ সরকার বইটি ভারতীয় উপমহাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটা অন্য ধারার প্রবক্তা সুভাষচন্দ্র বসু শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। কলকাতা পৌরসভার মেয়র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সব ক্ষেত্রেই তিনি কম বয়সে তার নিজস্ব চিন্তাধারার প্রমাণ রেখেছিলেন।
অধ্যাপক অমলেন্দু দে বলেন ছাত্রাবস্থা থেকেই সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ব্যতিক্রমী। তার মতে তরুণ প্রজন্মের কাছে বারবার তিনি আদর্শ বা রোলমডেল হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন তাঁর নেতৃত্বদানের ক্ষমতার জন্য।
"আইসিএস-এর মত পদ ছেড়ে দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে যোগদান করার আগেও নেতাজি ছাত্রাবস্থায় যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন, এমনকী সমাজসেবার দায়িত্ব- সেখানেও দেখা গেছে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা- মানুষকে নেতৃত্ব দেবার অসামান্য দক্ষতা।"
কলকাতায় এলগিন রোডে তাদের পারিবারিক যে বাড়ি ছিল, সেই বাড়ির শোবার ঘর থেকে ১৯৪১ সালে শীতের এক রাতে তাঁর পালিয়ে যাবার ঘটনাটা ছিল ঐতিহাসিক।
"বিশেষ রকমভাবে প্রহরায় ছিলেন সুভাষ চন্দ্র," বলেছিলেন কৃষ্ণা বসু, "তার ভেতর থেকে ওঁনাকে বের করে আমার স্বামী তাঁকে গোমো (বিহারে) স্টেশনে পৌঁছে দেন। গোমো থেকে ট্রেনে উঠে তিনি চলে যান পেশাওয়ার, পেশাওয়ার থেকে কাবুল, কাবুল থেকে মস্কো হয়ে পৌঁছন জার্মানিতে। এবং সেখানে গিয়ে তিনি প্রথম শুরু করেন তাঁর আজাদ হিন্দ আন্দোলন।"
"সুভাষচন্দ্র বসু থেকে তাঁর যে 'নেতাজি'তে উত্তরণ, সেটার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল কলকাতায় এলগিন রোড়ের বাড়িতে, যে রাতে তিনি ওই বাড়ি থেকে নিষ্ক্রমণ করেছিলেন।"
পরে জার্মানি থেকে সাবমেরিনে করে তিনি পৌঁছন জাপানে এবং তারপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে গঠন করেন আজাদ হিন্দ সরকার।
কৃষ্ণা বসু বলেন, "সেটাই ছিল ভারতের বাইরে দেশটির প্রথম অস্থায়ী স্বাধীন সরকার। সুভাষ বসু হলেন সেই সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ৪৫ হাজার ব্রিটিশ ভারতীয় সেনা আত্মসমর্পণ করলেন। তাদের নিয়ে গঠিত হল ভারতের মুক্তি বাহিনী- ইণ্ডিয়ান ন্যাশানাল আর্মি (আইএনএ)। তিনি হলেন তার সুপ্রিম কমাণ্ডার।"
বাঙালির বৈপ্লবিক উত্তরাধিকার এবং অদ্ভুত রোমান্টিকতার মেলবন্ধন ঘটেছিল সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনে।
তাঁর ঐতিহাসিক আহ্বান "আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেছিলেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি জার্মানি ও জাপানের মত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষ চন্দ্রের সমালোচনা করেছিলেন, এমনকি কেউ কেউ তাঁকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলেও অভিযুক্ত করেছিলেন।
তবে অন্যদিকে এমন যুক্তিও ছিল যে জার্মানি আর জাপানের সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতারই পরিচয়। এই সিদ্ধান্তের সমর্থকরা বলেছেন এ কথা মানতেই হবে যে জার্মানি আর জাপানই ছিল তাঁর কাছে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র ভরসার স্থল। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল যে করে হোক ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে মুক্ত করা।
সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, কবে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের স্বাধীনতার অনুমোদন দেবে তার জন্য বসে না-থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে সুবিধা নেওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নির্ভর করে অন্য দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনের উপর। আর তাই তিনি ভারতের জন্য একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
ঐতিহাসিক মি. দে-র মতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর ভূমিকা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও অসংখ্য ভারতীয়ের চোখে তিনি এখনও বীর বাঙালি যোদ্ধা- এখনও 'নেতাজি'।
সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎ চন্দ্র বসুর কন্যা অধ্যাপিকা চিত্রা ঘোষ এই অনুষ্ঠান তৈরি করার সময় ছিলেন কলকাতায় নেতাজি ইন্সটিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিস-এর পরিচালিকা।
"নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে প্রথমে আমরা গ্রহণ করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসাবে। সেভাবেই তাকে আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে যে সংগ্রাম তিনি পরিচালনা করেছিলেন, ভারতের পূর্ব সীমান্তে, পরে দেখেছিলাম তিনি শুধু ভারতের মুক্তির সাধনাই করেননি, মুক্ত ভারতবর্ষ কীরকম হবে, তারও একটি ছবি তিনি বরাবর এঁকেছিলেন, বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন চিত্রা ঘোষ।
"তাঁর যে আদর্শ, যে ধ্যানধারণা তিনি ভবিষ্যতের জন্য রেখে গিয়েছিলেন, সেখানেও তাঁকে আমরা একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি চিন্তাবিদ বলে গ্রহণ করতে পারি।"
আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী ঝাঁসি রেজিমেন্টে মাত্র ১৫ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন অরুণা চ্যাটার্জ্জি। পরবর্তীতে আইএনএ.-র লেফটেনান্টও হয়েছিলেন তিনি।
"আমরা তখন বার্মাতে ছিলাম। সেখানে যখন যুদ্ধটা শুরু হল, তখন চারিদিকে গোলমাল। সেখানে আসলেন রাসবিহারী বসু, তারপর আসলেন নেতাজি। উনি এসে সেখানে ঝাঁসি রেজিমেন্টের একটা লিংক খুললেন। আমার মা তখন আমাকে লড়াই করার জন্য নেতাজির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। নেতাজি তখন আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঝাঁসি ক্যাম্পের কমাণ্ডারের কাছে। শুরু হয়েছিল আমার প্রশিক্ষণ।"
আজাদ হিন্দ ফৌজের লেফটনান্ট মিসেস চ্যাটার্জ্জি বিবিসি বাংলাকে বলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীতে মেয়েদের পুরুষদের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিতেন সুভাষ চন্দ্র বসু।
তিনি বলেন বন্দুক পিস্তল থেকে শুরু করে বেয়নেট, মর্টার, কামান সবধরনের সমরাস্ত্র চালনার শিক্ষাই তিনি নারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়েছিলেন।
"সামরিক বাহিনীর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ভূগোল, ইতিহাস সবকিছুর প্রশিক্ষণই ক্যাম্পে আমাদের দেওয়া হতো। নেতাজি সবসময় না হলেও মাঝেমাঝেই নিজে এসে খোঁজ নিতেন কে কেমন করছে, কেমন চলছে ক্যাম্প।"
{image-"ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর ভূমিকা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও অসংখ্য ভারতীয়ের চোখে তিনি এখনও বীর বাঙালি যোদ্ধা- এখনও 'নেতাজি'।", Source: অমলেন্দু দে, Source description: অধ্যাপক , Image: ১৯৪৪ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের সঙ্গে আইএনএ নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু। bengali.oneindia.com}
সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যুকে ঘিরে আজও রয়ে গেছে একটা রহস্য। তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো নিয়ে আজও বিতর্কের শেষ হয়নি। যদিও সুভাষ চন্দ্রের ভ্রাতষ্পুত্র বধূ কৃষ্ণা বসু্ এ নিয়ে বিতর্কের তেমন কিছু দেখেননি।
"সায়গন থেকে মাঞ্চুরিয়া যাচ্ছিলেন উনি। কিন্তু যে প্লেনে উনি উঠেছিলেন, সেটা তখন তাইপের বিমানবন্দরে একটি দুর্ঘটনায় পড়ে। উনি খুবই অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন। এবং যে ডাক্তার দেখেছিলেন, তিনি আমাদেরও বলেছেন যে গভীরভাবে পুড়ে যাবার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৪৫-এর ১৮ই অগাস্ট সন্ধ্যাবেলা।"
কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎ চন্দ্র বসুর কন্যা অধ্যাপিকা চিত্রা ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন তাদের পরিবারের অনেকেই মনে করেন ওই বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ বসুর মৃত্যু হয়নি।
"আমরা পরিবারের বেশি সংখ্যক লোক কিন্তু বিশ্বাস করি - নানান ঘটনা শোনার পর এবং নানা খবরাখবরের ভিত্তিতে, যে ওই বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি।"
সুভাষ বসু বার্লিনে বসবাস করেছিলেন ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত। ১৯৩৪ সালে জার্মান সফরের সময় এমেলি শেঙ্কেল নামে এক জার্মান নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁকে সুভাষ বসু বিয়ে করেছিলেন, যদিও এই তথ্য স্বীকার করেননি তাঁর দল ফরোওয়ার্ড ব্লকের সদস্যরা।
চিত্রা ঘোষ মনে করেন তাঁর গায়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পোশাক, বীরোদীপ্ত চেহারা এবং তাঁর সেই ডাক - 'চলো দিল্লি' বা 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও- আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব' এই ছবিটাই বাঙালির মনে আজও প্রকট হয়ে রয়েছে।
ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী জার্মানি ও সাম্রাজ্যবাদী জাপানি শক্তির সাথে হাত মেলানোর যে কৌশল সুভাষ বসু অবলম্বন করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর গভীর দেশপ্রেম ও ত্যাগ তাঁকে অগণিত বাঙালির হৃদয়ে বীরের আসনে বসিয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৬- বেগম রোকেয়া
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৭- জগদীশ চন্দ্র বসু
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৮- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৯- মওলানা ভাসানী
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১০- রামমোহন রায়
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১১- তিতুমীর
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১২- লালন ফকির
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৩- সত্যজিৎ রায়
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৪- অমর্ত্য সেন
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৫-ভাষা শহীদ
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৬-মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৭ নম্বরে বিবেকানন্দ
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৮নম্বরে অতীশ দীপঙ্কর
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান
- বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ২০তম স্থানে সোহরাওয়ার্দী