For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

স্বাধীনতার ৫০ বছর: একাত্তরে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হওয়া একটি পরিবারের কাহিনী

  • By Bbc Bengali

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিল। শুধুমাত্র জীবনের ভয়ে তখন তাদের মুসলমান পরিচয় নিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে।

উনিশ'শ একাত্তর সালে এরকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে শচীন্দ্র চন্দ্র আইচের পরিবারকে। ইংরেজির শিক্ষক শচীন্দ্র শহরে সবার কাছে শচীন স্যার নামেই পরিচিত।

একাত্তরে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হওয়া একটি পরিবারের কাহিনী

সেই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজের ইংরেজির শিক্ষক।

শচীন্দ্র চন্দ্র আইচ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ২৫শে মার্চ-এর পর তার শহরেও হিন্দু আর আওয়ামী লীগের লোকজনকে টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড, বাড়িতে আগুন দেয়া শুরু হল। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই ভোগান্তির মধ্যে ছিল। তারপরে ওরা গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লো।

''যুদ্ধের শুরুর দিকে, ৩১শে মার্চ আমরা সবাই শিবরামপুর গ্রামে চলে গেলাম। গ্রামে অনেকদিন থাকার পরে টাকা পয়সা শেষ। তখন মুসলমান বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে আবার শহরে চলে এলাম। মুসলমান ছাত্রদের বাড়িতে উঠলাম।''

জীবন আর চাকরি বাঁচাতে ধর্মান্তর

সিটি কলেজের চাকরিতে থাকলেও হিন্দু হওয়ার কারণে তখন সেখানে যেতে পারছিলেন না মিঃ আইচ।

''তখন যিনি হেডমাস্টার ছিলেন, তিনি বললেন, আপনি স্কুলে আসবেন কেমন করে? স্থানীয় যারা ছিল, বিহারী যারা ছিল, তারা তো হিন্দুদের সহ্য করতে পারে না।''

''তাই কেউ জোর না করলেও জীবন আর চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বড় মসজিদে গিয়ে আমরা সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করি। এরপর আবার চাকরিতে জয়েন করি।''

সেই সময় তিনি, তার স্ত্রী, বাবা-মা, বোন- সবাই মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেন।

তার বোন কানন সরকার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ''ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও আমাদের কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন চাপের মুখেই আমরা ধর্মান্তরিত হলাম। চাপ মানে সরাসরি কেউ চাপ দেয়নি, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে পড়ে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিল।''

''তবে আমাদের এক আত্মীয়কে ধরার জন্যে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পাকিস্তানিরা। তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলছিলেন, যদি বাঁচতে চাও, তাহলে মুসলমান হয়ে যাও। আমিও মুসলমান হয়ে গেছি।''

''তখন ছিলাম গ্রামে। গ্রাম থেকে পরে আমরা আবার শহরে চলে আসি। শহরে এসেও ঘর থেকে বের হতে পারছিলাম না। আমার দাদাও তার স্কুলের চাকরিতে জয়েন করতে পারছিল না। চারদিকে শুনছিলাম, ইসলামী কার্ড না করলে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। ঘরের মধ্যেই আমরা বন্দী হয়ে ছিলাম। তারপর দেখলাম উপায় তো নেই, এভাবে কতদিন বন্দী হয়ে থাকবো?''

''তখন মা-বাবাকে বুঝালাম। আগে বাঁচি, তারপর ধর্মের হিসাব নিকাশ করবো। পরে ধর্মান্তরিত হলাম।''

আরও পড়ুন:

ছয় দফা ঘোষণা করে যেভাবে নেতা হয়ে ওঠেন শেখ মুজিব

আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তানী সেনাদের মুহূর্তগুলো

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ৭১-এর স্বাধীনতার ঘোষণা

বাংলাদেশের নামকরণ করা হয়েছে যেভাবে

ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও নজরদারিতে

কানন সরকার বলছেন, ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও তাদের পুরোপুরি শান্তি মেলেনি।

''কিন্তু তারপরে যে আমরা নিরঙ্কুশ শান্তিতে ছিলাম তা নয়। বিভিন্ন ধরনের চাপ আসতো। যেমন একবার খবর এলো, আমার ছোট ভাইকে নাকি ধরে নিয়ে যাবে। তখন আমরা বিভিন্ন জনের কাছে ছোটাছুটি করেছি।''

''রোজার সময় দল বেধে মহিলারা আমাদের বাসায় ঢুকে যেতো। তারা আমাদের রান্নাবান্না, ভাতের ডেকচি সব ওলট পালট করে দিতো। বলতো, কই আপনারা তো রোজা রাখেন না।'' তিনি বলছিলেন।

হিন্দু বিবাহিত নারীদের কাছে সিঁদুর পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরপর থেকে দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সিঁদুর পরা বন্ধ হয়ে যায়।

শচীন্দ্র চন্দ্র আইচ বলছিলেন, মুসলমান হওয়ার পরেও তাদের নানান জায়গায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে। তখন নানা মুসলমান বন্ধুর বাড়িতে তাদের লুকিয়ে থাকতে হতো। স্বর্ণালঙ্কার দামি জিনিসপত্র তাদের বাড়িতেই লুকিয়ে রাখা হতো।

প্রমাণ দিতে মসজিদে নামাজ

সেই সময় প্রায়ই মিঃ আইচকে তার মুসলমান হওয়ার প্রমাণ দিতে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে হতো। যদিও তিনি সুরা-কেরাত তেমন জানতেন না, তবে মসজিদে অন্যদের দেখে দেখে নামাজ পড়তেন।

''প্রথম দিন তো হাত-পা ধোয়ার বিষয়গুলো শেখালো। আমার ছাত্ররা ছিল, ওরা বললো, স্যার আপনি অন্যদের দেখে দেখে উঠবেন-বসবেন। তখন প্রতি শুক্রবারে তো মসজিদে যেতামই, কোন কোন দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েছি।''

''রোজার সময় প্রথম কয়েকদিন রোজা রেখেছিলাম। পরে আর পারছিলাম না। তাই বাইরে গেলে সবসময় না খেয়ে থাকতাম।'' তিনি বলছিলেন।

মুসলমান হয়ে চাকরিতে যোগ দেয়ার পর তিনি পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টে প্রায়ই তার মুসলমান পরিচয়ের প্রমাণ দিতে হতো।

''পাঞ্জাবীদের সামনে পড়লেই জিজ্ঞেস করতো, তু হিন্দু হ্যায় না মুসলিম হ্যায়? আমি বলতাম, মুসলিম। তখন ওরা বলতো, সুরা কহিয়ে। আমি তখন সুরা ফাতেহা মুখস্থ করেছিলাম। তখন সুরা বলতে শুরু করতাম। তখন বলতো, আপ যাইয়ে।'' তিনি বলছিলেন।

ধর্মান্তরিত হওয়ার গ্লানি

মিঃ আইচ বলছিলেন, যেদিন দেশ স্বাধীন হলো, মনে হলো যেন সেদিন তারা আবার নিজের ধর্ম ফিরে পেলেন।

তিনি বলছিলেন, ''যেই দেশ স্বাধীন হলো, অমনি আশেপাশে মুসলমান মহিলারা যারা ছিলেন, তারা দৌড়ে এসে আমার স্ত্রী, মাকে, বোনকে কপালে সিঁদুর লাগিয়ে দিল। ওই আমরা আবার হিন্দু হয়ে গেলাম।''

কানন সরকার বলছিলেন, ''ময়মনসিংহ যেদিন মুক্ত হলো, তার পরের দিন আমরা আমাদের শহরের বাসায় ফিরে এলাম। সেদিন আমাদের বাসার মালিকের স্ত্রী সিঁদুরের কৌটা নিয়ে এসে আমার মাকে, আমার মাথায় সিঁদুর পড়িয়ে দিল।''

''আমরা যেন মুহূর্তের জন্য ধর্মান্তরিত হওয়ার গ্লানি ভুলে গিয়েছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আমরা আমাদের ধর্ম ফিরে পেলাম।''

তিনি জানান, হিন্দু ধর্মে আবার ফেরত যেতে তাদের কোনরকম ধর্মীয় নিয়মকানুন পালন করা বা কোন প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়নি।

শচীন্দ্র চন্দ্র আইচ বলছেন, ''দেশ যদি স্বাধীন না হতো, তাহলে হয়তো আমাদের আর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যেতো না।''

English summary
Story of a family who converted 50 years back in Bangladesh
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X