বেটে মানুষদের ফুটবলার হয়ে ওঠার লড়াই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কেনিয়াতে ৩০০০ এর বেশি বেটে আকারের মানুষ রয়েছে। এমনকি বেটে মানুষদের একটি নিজস্ব ফুটবল দলও আছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হচ্ছে এটি?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কেনিয়াতে ৩০০০ এর বেশি বেটে আকারের মানুষ রয়েছে।
এমনকি বেটে মানুষদের একটি নিজস্ব ফুটবল দলও আছে।
বিবিসির সংবাদদাতা গিয়েছিলেন তাদের খেলা দেখতে।
কোনো এক শীতের সকালে নাইরোবির সকার স্টেডিয়ামে নয়জন মিলে ফুটবল খেলছে। তাদের গায়ে লাল রঙ এর জার্সি ।
নতুন এই খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন তাদের কোচ।
তবে তার ছাত্রদের মধ্যে প্রচুর প্রাণশক্তি আর আত্মবিশ্বাস দেখা গেছে।
এই স্কোয়াডটির বয়স মাত্র কয়েক মাস। এটি পরিচিত হয়ে উঠছে দি লায়ন স্টারস নামে।
এটি তৈরি হয়েছে বেটে আকৃতির মানুষদের নিয়ে।
যারা সবাই জন্মগত ভাবে ডোয়ার্ফিজম বা বামণাকৃতির সমস্যা নিয়ে বেড়ে উঠেছে।
তারা এমন এক পৃথিবীতে বসবাস করছে যেখানে বিশাল এবং লম্বা মানুষদের আধিপত্য।
এবং তারা যেহেতু সামনেই একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে পলে সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কঠিন ভাবে।
এখন তাদের নানারকম চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। এই দলের ক্যাপ্টেন জোসেফ মাইনা। স্থানীয়ভাবে যিনি সোংকো হিসেবে পরিচিত যার মানে হলো ধনী লোক।
তিনি বলছেন নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে তারা চেষ্টা করছেন ফুটবলার হয়ে উঠতে।
তিনি বলেন, "আমাদের বল হয়তো ছোট হওয়া উচিত কিন্তু কেনিয়াতে আমরা সেই বড় আকারের বলই ব্যবহার করছি কারণ আমাদের পক্ষে ছোটটি কেনা সম্ভব নয়। আমরা এভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা প্রীতি ম্যাচ খেলছি। এখানে মেয়েরাও আছে"।
লায়ন্স দলের সদস্যরা নাইরোবি কাউন্টি কুইন্স খেলছে।
এই বছরের আরো পরের দিকে তারা আমেরিকায় যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলবে সেজন্য তাদের সহায়তার উদ্দেশ্যে এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছে।
বেটে এই মানুষগুলোর এই চর্চা নিজেদের শক্তি যোগাচ্ছে। কিন্তু এখনো চাকরির ক্ষেত্রে তাদের নানারকম বৈষম্যের মুখে পড় হচ্ছে।
সবজায়গায় তাদের যাওয়ার সুযোগও নেই।
কেনিয়ার বেটে মানুষদের সোসাইটির ভাইস চেয়ারপার্সন রুখ মুয়েনি বলছেন, "আপনি জানেন আমাদের বৈষম্যের চোখে দেখা হয় এবং সেই সাথে সামাজিক কলঙ্কও মনে করা হয়। আমাদের উচ্চতার ভিন্নতার কারণে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা দেখা যায়। কিন্তু আমরা এটা প্রমাণ করতে চাই যে আমাদের এই ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও আমরা সুযোগ পেলে কিছু করে দেখাতে পারি। আমাদের ফুটবল দল অন্যদের বিপক্ষে খেলতে সক্ষম"।
নাইরোবিতে সবসময়ই আবহাওয়ার চরিত্র বোঝা মুশকিল।
দলের ক্যাপ্টেন সোংকো বলছিলেন ফুটবল তাদের জীবনে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ।
"এখানে এমন অনেক মানুষ আছে যারা মনে করে আমাদের দ্বারা ফুটবল সম্ভব নয়। তাতে লাথি মারতে পারিনা কিন্তু আমরা এক সাথে বল খেলছি। একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ আছে যেখানে আমরা সবকিছু শেয়ার করি। আমাদের ফিজিক্যাল ফিটনেসও বেড়েছে। যারা ঘরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে তাদের জন্য এখনই সময় বাইরে বেরিয়ে আসা। বেরিয়ে আসুন এবং একসাথে আমাদের সাথে খেলুন"।
এটা কোনো চিরাচরিত ফুটবল দল নয়।
তারা কেবল তাদের দক্ষতা বা নৈপুণ্য দেখাতে চাইছে তেমন নয়, তারা মানসিকতাও বদলাতে চাইছে মানুষের।