
প্লুটো এখনও জীবন্ত! বরফের আগ্নেয়গিরি সৌরজগতের আর কোথাও নেই নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা
প্লুটো গ্রহ নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা ঘোষণার ১৬ বছর পর মনে হচ্ছে প্লুটো এখনও জীবন্ত। কারণ প্লুটোর পৃষ্ঠেই একমাত্র লুকিয়ে আছে বহু অজানা রহস্য। একটি নতুন গবেষণায় বরফের রহস্যময় আগ্নেয়গিরি হদিশ মিলেছে মহাকাশে। যা একমাত্র প্লুটোর পৃষ্ঠে দেখা যেত, সৌরজগতের অন্য কোথাও এমনটা দেখা যায় না।

গবেষণায় বরফের ওই আগ্নেয়গিরিগুলি দেখে বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্লুটো এখনও জীবন্ত রয়েছে। নিউ হরাইজন মিশনের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গবেষণা চলছে। দূরবর্তী বরফ গ্রহের পৃষ্ঠের নীচ থেকে বহিষ্কৃত উপাদান দ্বারা গঠিত পাহাড়, টিলা এবং বিশাল গম্বুজ দেখা গিয়েছে। প্লুটোর ভূভাগে রয়েছে একাধিক অগ্ন্যুৎপাতের স্থান এবং প্রচুর পরিমাণে উপাদান। রয়েছে বেশ কয়েক কিলোমিটার উঁচু গম্বুজ, যার মধ্যে কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে একত্রিত হয়ে।
নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্লুটোতে জল-সমৃদ্ধ মহাসাগরের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দূরবর্তী গ্রহের পৃষ্ঠের প্রায় ১০০-২০০ কিমি বা তার বেশি নীচে বিদ্যমান রয়েছে বরফের চাঁই। নিউ হরাইজনস মিশন রাইট মনস এবং পিকার্ড মন নামে পরিচিত দুটি বড় ঢিবি দ্বারা ওই অঞ্চলটি গঠিত, যেটিকে এখন ক্রায়োভলক্যানো বলে মনে করা হয়।
সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নিউ হরাইজনস ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট ডক্টর কেলসি সিঙ্গারের নেতৃত্বে গবেষক দলটি প্লুটোর উজ্জ্বল বরফযুক্ত 'হৃদয়'-এর সন্ধান পেয়েছে। স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের গঠন বিশ্লেষণ করেছে। এই ক্রায়োভোলক্যানিক অঞ্চলে ১ থেকে ৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ১০০ বা তারও বেশি কিলোমিটারজুড়ে একাধিক বড় গম্বুজ রয়েছে।

প্লুটোর ক্ষয় বা অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ক্রায়োভোলক্যানিক কার্যকলাপ গ্রহের বাহ্যিক অংশে প্রচুর পরিমাণে উপাদান বের করে দিয়েছে এবং গোলার্ধের নিউ হরাইজনসের একটি সম্পূর্ণ অঞ্চলকে কাছাকাছি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। যেহেতু এগুলি অপেক্ষাকৃত নতুন ভূতাত্ত্বিক ভূখণ্ড এবং এগুলি তৈরি করার জন্য প্রচুর পরিমাণে উপাদানের প্রয়োজন হয়েছিল।
গবেষকরা মনে করছেন ওই ভূখণ্ডই প্লুটোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মধ্যে তাপ ধরে রেখেছে, জল ও বরফসমৃদ্ধ উপাদানগুলিকে পৃষ্ঠে জমা করতেও সক্ষম করছে। এর ফলে নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হয়েছে। ২০১৫ সালে নিউ হরাইজন মিশন থেকে প্রাপ্ত করা হয়েছিল কিছু তথ্য। সেই তথ্যে প্রকাশ পেয়েছিল পাহাড়, উপত্যকা, সমভূমি এবং হিমবাহ-সহ প্লুটোর বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি।

নয়া ভূখণ্ডটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। যেহেতু প্লুটোর সঙ্গে সূর্যের দূরত্বে হিমশীতল তাপমাত্রা, সেহেতু ভূতাত্ত্বিকভাবে নিষ্ক্রিয় বিশ্ব তৈরি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। সৌরজগতে নতুন জায়গা অন্বেষণের একটি সুবিধা হল, আমরা সেখান থেকে যেসব জিনিসগুলি খুঁজে পাই, তা আশারও অতীত। নিউ হরাইজনস দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা এই বিশালাকার অদ্ভুত-সুদর্শন ক্রায়োভলক্যানোগুলি থেকে আমরা আগ্নেয়গিরির প্রক্রিয়া এবং বরফের জগতের ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারি।
নিউ হরাইজনস মিশন ২০০৬ সালে নাসা দ্বারা চালু হয়েছিল। একই বছর প্লুটোকে বামন গ্রহ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ প্লুটো গ্রহের তকমা খুইয়েছিল। ২০১৫ সালে বরফ গ্রহে পৌঁছানোর পরে তারা প্লুটো এবং এর চাঁদগুলি অন্বেষণ করার একমাত্র মহাকাশযান হিসাবে রয়ে গেছে৷ মহাকাশযানটি কুইপার বেল্টে বস্তুগুলি অন্বেষণ করছে।