ট্রাম্পের এক টুইটেই বাজিমাত! তেলের দামে নিয়ন্ত্রণ আনছে সৌদি
সৌদি আরব জানিয়েছে তাল নীতি বদলে তারা ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ৮০ ডলারে আটকে রাখতে চাইছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য বড় ক্রেতা দেশগুলির চাপ দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
এক টুইটেই বাজিমাত করলেন ট্রাম্প। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারী দেশ সৌদি আরবের তেলনীতি। ছয় সপ্তাহ আগেও সৌদি আরব তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষেই সওয়াল করে গেছে। কিন্তু হঠাতই তারা ব্যারেল প্রতি দাম ৮০ ডলারে আটকে রাখতে চাইছে। এর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য বড় ক্রেতা দেশগুলির চাপ দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার, সৌদির তেলমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ, তাঁর দেশ, গ্রাহক দেশগুলির 'উদ্বেগ' বুঝতে পারছে জানিয়ে সৌদির তেল-নীতির পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন। বলেন, ওপেক এবং তার সহযোগীরা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। সৌদির এই ইউ-টার্ন তেলের বাজারের চেহারাটাই পাল্টে দিয়েছে। বৃহৎ তেল সংস্থাগুলির এবং শেল উৎপাদনকারীদের শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক-এর অন্য সদস্যদের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু হঠাত কি কারণে সৌদির এই সুর বদল? এই মাসের শুরুতেই ইরানের তেল রপ্তানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়েছে। তাতে তেল সরবরাহের পরিমাণ হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি এই সময়ে ভেনেজুয়েলার তেল শিল্পের দ্রুতগতিতে পতন ঘটেছে। উভয়ই এই অবস্থান বদলের কারণ হলেও মুখ্য কারণ জানা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইট। গত ২০ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট টুইটারে ওপেকের সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন 'ওপেক আবারও মনে হচ্ছে লেগে পড়েছে। তেলের দাম কৃত্রিমভাবে অত্যধিক বাড়ানো হচ্ছে!'
Looks like OPEC is at it again. With record amounts of Oil all over the place, including the fully loaded ships at sea, Oil prices are artificially Very High! No good and will not be accepted!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) April 20, 2018
জানা গেছে ওপেকের কর্মকর্তারা সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে রিত্জ-কার্ল্টন হোটেলে এক বৈঠক করছিলেন। সেসময়ই ট্রাম্প-এর এই টুইট প্রকাশিত হয়। ওপেক কর্তারা টুইটটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। তাঁরে এটিকে মার্কিন তরফে একটি উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখেছেন। ওপেকের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বারকিন্দো শুক্রবার জানান, 'জেদ্দায় বৈঠক চলাকালীনই আমরা টুইটটি পড়ি। খালিদ আল-ফালিহ আমাকে বলেছিলেন আমাদের এই এই সমালোচনাকে গ্রহন করে সেই মতো কাজ করা। ওপেকের সকলে আমরা সবসময় নিজেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু মনে করি।"
হোয়াইট হাউসের তেল বিষয়ক এক প্রাক্তন কর্মকর্তা বব ম্যাকনালি-র দাবি, 'ওই টুইটটিই সৌদিদের অবস্থান বদলিয়েছে। সৌদি আরবের কাছে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছিল।' তবে শুধু ট্রাম্প নন জানা যাচ্ছে অন্যান্য প্রধান তেল ক্রেতা দেশগুলিও রিয়াধের ওপর এনিয়ে চাপ দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের মতো সরাসরি নয় কূটনাতিক পথে। ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন তেলের দাম বিষয়ে সৌদি তেলমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ'এর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। তিনি আল-ফালিহ'র কাছে এনিয়ে উগ্বেগও প্রকাশ করেছেন বলে তাঁর দাবি।
২০১৬ -র প্রথম দিকে যেখানে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৩০ ডলার, সেখানে গত এমাসে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম দাঁড়িয়েছে 80 ডলার করে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে রুশ তেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর খালিদ আল-ফালিহ তেলের দামে নিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলেছেন। তারপরই নিউইয়র্কে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৩ ডলার কমে ৬৭ ডলার হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে তেল ব্যবসায়ীরে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের ওপরে উঠে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ তো ১৫০ এমনকী ৩০০ ডলারও ছাপিয়ে যাওয়ার ভয় দেখাচ্ছিলেন। তাদের গলার স্বর হঠাতই খাদে নেমে গেছে।