সিরিয়া সীমান্ত থেকে কুর্দি বাহিনী হটাতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি রাশিয়ার
সিরিয়ার সীমান্ত থেকে কুর্দি বাহিনীকে হটাতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করেছে রাশিয়া। সিরিয়ার সীমান্ত থেকে কুর্দি বাহিনীকে হটাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়া
সিরিয়ার সীমান্ত থেকে কুর্দি বাহিনীকে হটাতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করেছে রাশিয়া। সিরিয়ার সীমান্ত থেকে কুর্দি বাহিনীকে হটাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হল। চুক্তি অনুসারে, সিরিয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে কুর্দিদের সরাতে তুর্কি সেনাদের সঙ্গে একজোট হয়ে টহল দেবে রুশ সেনারা। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর সোচিতে এই দুই নেতার বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে ১০ দফার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বৈঠকের পর চুক্তির ঘোষণা আসে।
সেই অঞ্চলে তুরস্ক ও রাশিয়ার অবস্থান শক্ত হল
এই মাসে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার পরপরই কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সকে (এসডিএফ) লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে তুর্কি সেনারা। ওই অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্তি হিসাবে কাজ করে এসডিএফ। তবে তুরস্ক উল্টো এসডিএফকে জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে। তুরস্ক সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত 'নিরাপদ অঞ্চল' গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক। সেই অঞ্চলে থাকা প্রায় ২০ লাখ সিরিয় শরণার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি করছে তুরস্ক। তবে সেখানে থাকা শরণার্থীদের অনেকেই কুর্দি না। এ ছাড়া মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে তুরস্ক ও রাশিয়ার অবস্থান শক্ত হল বলেও মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়া ও তুরস্কের চুক্তিকে সমর্থন সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম প্রধান বন্ধু রাশিয়া। ২০১৫ সাল থেকে রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে সিরিয়ায়। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে এই চুক্তির ফলে তুরস্ক কুর্দিদের দখল নেওয়া এলাকাগুলো আবার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে। আর রাশিয়া সিরিয়ার বাহিনীর সঙ্গে বাকি এলাকাগুলোয় নজরদারি রাখবে। এই চুক্তির জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে বলেও জানান। এরই মধ্যে তাল আবিয়াদ শহর দখলে নিয়েছে তুর্কি সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহীরা।
এখনই সিরিয়ায় হামলা নয়, জানাল তুরস্ক
এদিকে আমেরিকার সঙ্গে তুরস্কের চুক্তি অনুসারে সেখানে এখন যুদ্ধবিরতি চলছে। কুর্দি যোদ্ধাদের 'নিরাপদ অঞ্চল' ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্তে ওই চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল তুরস্ক। অবশ্য আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির আগেই তুরস্ক রাস আল-আইন ও তাল আবিয়াদ দুটি শহরের মধ্যের ১২০ কিলোমিটার অঞ্চল দখল করেছে। গতকাল রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হলেও এখনই ফের সেই অঞ্চলে হামলা চালাবে না বলে জানিয়ে দেয় এরদোয়ান।
রাশিয়া ও তুরস্কের বিবৃতি
গতকালকের চুক্তির বিষয়ে রাশিয়া ও তুরস্কের বিবৃতিতে দিয়ে বলে, কুর্দি বাহিনীকে মানবিজ এবং তাল রিফাত শহর থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এই দুটি শহরই যুদ্ধবিরতি এলাকার বাইরে অবস্থিত। কুর্দি বাহিনীরা যেন আর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে ফিরতে না পারে, সে লক্ষ্যে তুর্কি বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ওই অঞ্চল টহল দেবে রাশিয়া।
সিরিয়া নিয়ে ভোল বদল রাশিয়ার
এক সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় মস্কোর বিশেষ দূত আলেকজান্দ্রার লাভ্রেনতেভ বলেছিলেন, সিরিয়ায় তুরস্কের হামলা অগ্রহণযোগ্য, রাশিয়া এটা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, কুর্দি ও সিরিয়া সরকারের মধ্যে চুক্তির ব্যাপারে রাশিয়া মধ্যস্থতা করেছে। তবে রাশিয়া নিজেদের অবস্থান বদল করে এবার হাত মেলালো তুরস্কের সঙ্গে।
সিরিয়ায় তুর্কি আগ্রাসনের জেরে মৃত্যু মিছিল
রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুসারে, গত দুই সপ্তাহে তুরস্কের অভিযানে উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে ৮০ হাজার শিশুসহ ১ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ ঘর ছাড়া হয়ে পরেছে। পর্যবেক্ষণ গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুসারে, তুরস্কের আগ্রাসনের জেরে ১২০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে ওই এলাকায়। এছাড়া ২৫৯ জন কুর্দি যোদ্ধা এবং তুর্কি সমর্থিত ১৯৬ জন সিরিয়ার বিদ্রোহী ও ৭ জন তুর্কি সেনা নিহত হয়েছে।