রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: রুশ বাহিনীর দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে চলছে গণভোট
ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে রাশিয়া যেসব এলাকা পুরোপুরি কিম্বা আংশিকভাবে দখল করে নিয়েছে সেসব জায়গায় আজ থেকে স্বঘোষিত এক গণভোট শুরু হয়েছে।
এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করে নেওয়া হবে কি না এই প্রশ্ন রাখা হয়েছে এই গণভোটে।
ইউক্রেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা করে বলছে এই গণভোট অবৈধ এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করে নেওয়ার প্রথম ধাপ।
যে চারটি অঞ্চলে এই গণভোট হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে ডনবাস অঞ্চলের দুটো প্রদেশ- দোনেৎস্ক ও লুহান্সক এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিশা ও খেরসন।
এই চারটি অঞ্চলেই যুদ্ধ চলছে।
কিয়েভ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সৈন্যরা রণাঙ্গনে পরাজয়ের শিকার হওয়ার পর এই কৌশল গ্রহণ করেছে।
গণভোটের ফল কী হবে তা অনেকটাই নিশ্চিত। ফলাফলে এই অঞ্চলগুলোকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করার কথাই বলা হবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে তিন লাখের মতো রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের এক নির্দেশ দেওয়ার দু'দিন পর বিতর্কিত এই গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বুধবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, মাতৃভূমির আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করতেই তিনি রিজার্ভ সৈন্যদের ডেকে পাঠাচ্ছেন।
এ নিয়ে একটি ডিক্রিতেও সই করেছেন তিনি এবং ইতোমধ্যেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তথাকথিত এই গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের এই চারটি এলাকা রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে একীভূত করে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর সেসব জায়গায় আক্রমণ চালানো হলে রাশিয়া দাবি করতে পারবে যে তাদের ভূখণ্ডে চালানো হামলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
এর ফলে যুদ্ধ আরো বেশি তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
এর আগে গণভোটের মাধ্যমে ক্রাইমিয়াকেও রাশিয়া একীভূত করে নিয়েছে।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন ভোট কেমন হচ্ছে তা দেখার জন্য বিভিন্ন দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো দেশই এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেনি।
আরো পড়তে পারেন:
রাশিয়া থেকে পালাচ্ছে বহু রুশ নাগরিক, রিজার্ভ সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে যেতে চায় না
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের অর্থ কী?
'অধিকৃত এলাকাগুলোর সুরক্ষায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া'
আজ থেকে এই গণভোট শুরু হয়েছে এবং আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচদিন ধরে ভোট-গ্রহণ চলবে।
ভোট-গ্রহণ চলাকালে এখনও পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের কোনো হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
রুশ টিভি চ্যানেল আরটি-এ এক খবরে বলা হয়েছে 'দোনেৎস্ক প্রজাতন্ত্রের' প্রধান ডেনিস পুশিলিন বৃহস্পতিবার রাতে বলেছেন তার অঞ্চলে "কিয়েভ খুব শীঘ্রই আক্রমণ" করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন গণভোটে মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধারণা করা হচ্ছে বুধবার এসব গণভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:
বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কেন মারমুখী আওয়ামী লীগ
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ যথেষ্ট আন্তর্জাতিক সমর্থন পাচ্ছে না কেন?
রূপি টাকায় বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে কি?
ইরানে নারীদের পোশাকের ওপর কেন 'নৈতিকতা পুলিশের' নজরদারি
দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এই দুটো অঞ্চলের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত রয়েছে। এসব অঞ্চলে রুশভাষী মানুষের সংখ্যাই বেশি।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার সময় থকেই রাশিয়া এই দুটো অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।
পরে তারা ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চল পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। জাপোরিশারও একটি বড় অংশ এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
ইউক্রেন বলছেন, রাশিয়ার স্বঘোষিত এই গণভোটকে তারা স্বীকৃতি দেবে না। কারণ এসব এলাকা তাদের দেশের অংশ যা রাশিয়া অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই গণভোটকে রাশিয়ার "ছল" বলে উল্লেখ করেছে।