ইউক্রেনেই থামবেন না পুতিন, লক্ষ্য রাশিয়ার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার
ইউক্রেনেই থামবেন না পুতিন, লক্ষ্য রাশিয়ার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার
ইতিমধ্যেই আমেরিকার নেতৃত্বে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক ও কূটনীতিক নিষেধাজ্ঞা জারী করতে শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি৷ ইউক্রেন আক্রমণ করে প্রতিক্রিয়ার এবং হুমকির সম্মুখীন রাশিয়া। তবে তাতে যুদ্ধ থেকে সরার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখল করেই থামবেন না। পুতিনের সাম্প্রতিক বক্তৃতা এবং বিবৃতিগুলি থেকে তাঁরা ইঙ্গিত পেয়েছেন যে ইউক্রেন রাশিয়ার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য পুতিনের বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষার ক্ষুদ্র অংশ মাত্র৷
স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাব কমে যাওয়াতে গভীরভাবে আহত হয়েছেন পুতিন। ইউক্রেন আক্রমণের সঙ্গে পুতিন এখন বিশ্বাস করেন যে তার নিরাপত্তা স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে এবং বৃহত্তর রাশিয়ার স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য রাশিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন৷ উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা, ন্যাটো-র সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতাও রয়েছে পুতিনের। সম্প্রতি ন্যাটো দ্রুত সম্প্রসারণ করে অনেক সোভিয়েত অংশকে (পূর্ব ইউরোপে তার আশেপাশে) মার্কিন-শাসিত সামরিক জোটে নিয়ে আসছিল। ইউক্রেন আক্রমণ করে একজন সাহসী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ন্যাটোর সেই পরিকল্পনাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন পুতিন। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থা পুনর্নির্ধারণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন পুতিন৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ভ্লাদিমির পাস্তুহভ বলেছেন, পুতিন দেখতে অনেকটা আয়াতুল্লাহর (ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা) মতো যিনি ইতিহাসের বইয়ে নিজের স্থান নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে চান। পাস্তুহভ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যদি তিনি পারেন তবে ইউক্রেন থেকে আরও আগে অগ্রসর হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।
ইউক্রেনে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম টেলরও বলেছেন যে এটি পুতিনের সাহসী রাশিয়া। শুধু ইউক্রেনে দখল করেই এই রাশিয়া থামবে বলে মনে হয় না৷ অন্যদিকে প্রাক্তন সোভিয়েতের অংশ হিসেবে, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র খুব উদ্বিগ্ন, কারণ তারা রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনে ঢুকতে দেখেছে৷ টেলর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ বাল্টিক দেশগুলিকেও হতবাক করেছে যারা ২০০৪ সালে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছিল এবং এই লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। বেশ কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, এবং লিথুয়ানিয়ার নাগরিক যারা একসময় সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে বসবাস করত তারা ভয় পাচ্ছেন যে রাশিয়ান পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারেন তারা।
Russia-Ukraine War: আকাশে রাশিয়ার ফাইটার প্লেন, যুদ্ধের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ করল ইউক্রেন
অন্যদিকে চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান জেমস নিক্সি বলেছেন, বলকান এখন অরক্ষিত। বলকান অঞ্চলগুলিতে পশ্চিমের দেশগুলি সেরকম নজরদারি করে না। এই অঞ্চলগুলি রাশিয়ার পরবর্তী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। মোল্দোভায় ট্রান্স-ডনিস্টার একটি রুশ-ভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল রাশিয়ার আরেকটি লক্ষ্যবস্তু হতে পারে কারণ সেখানে কমিউনিস্ট নেতৃত্ব রাশিয়াপন্থী।
ন্যাটো মলদোভার এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে। পূর্ববর্তী রাশিয়া যখন ২০০৮ সালে আরেকটি প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র, জর্জিয়া আক্রমণ করেছিল, তখন রাশিয়ার বক্তব্য ছিল জর্জিয়ান গণহত্যা থেকে ওসেসিয়ানদের বাঁচাতে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও পরবর্তীতে এই বক্তব্যের খুব বেশি আইনি যৌক্তিকতা পাওয়া যায়নি।