উল্কার গতিতে ব্রিটেনের রাজনীতিতে প্রবেশ, ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে কেন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন ঋষি সুনক
উল্কার গতিতে ব্রিটেনের রাজনীতিতে প্রবেশ, ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে কেন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন ঋষি সুনক
বরিস জনসনের পদত্যাগের সময় থেকেই কনজারভেটিভ দলের অন্যতম জনপ্রিয় সদস্য হিসেবে উঠে এসেছিল ঋষি সুনকের নাম। ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই তরুণ নেতা সংসদে প্রবেশের পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যান। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন যত কাছে আসছে, হঠাৎ করেই ঋষি সুনকের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্রিটেনের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী লিজা ট্রাস বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছেন এই দৌড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঋষি সুনকের জনপ্রিয়তা হারানোর নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব
টোরি দলের অনেক সদস্যরা ঋষি সুনকের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরোধিতায় ঋষি সুনক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলা যেতে পারে, তিনি প্রথম বরিস জনসনের বিরোধিতা করে চ্যান্সেলর পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু ঋষি সুনক ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের সময় অনেকেই মনে করেছিলেন, বরিস জনসনের নিয়ন্ত্রণের অর্থ দফতরটা থাকবে। সেখান থেকে বরিসের বিরোধিতা অনেক টোরি নেতার ওপর প্রভাব ফেলছে। টোরি নেতারা মনে করছেন, কনজারভেটিভ দলের নেতা তিনি হলে, ব্রিটেনের সাধারণ নির্বচনে লেবার পার্টিকে পরাস্ত করা কঠিন হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, ব্রিটেনের একটি সংস্থা সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছেন। সেখানে লেবার পার্টির একাধিক নেতা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। যা কনজারভেটিভ দলের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সুনকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সুনক ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিকবার নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ঋষি সুনকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে। তিনি মাঝে একবার আমেরিকার গ্রিন কার্ড গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময় ব্রিটেনে ব্যাপক অঙ্কের কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে অক্ষতা মূর্তির বিরুদ্ধে। যার প্রভাব ঋষি সুনাকের ভাবমূর্তির ওপর পড়ে। এছাড়াও ২০২০ সালে করোনা মহমারীর সময় নিয়ম ভঙ্গ করে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে পার্টি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে জরিমানাও দিতে হয়।
জনপ্রিয়তার পথে বাধা ভারতীয় যোগ
ঋষি সুনাকের জনপ্রিয়তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতীয় যোগ। ব্রিটিশরা ভারতীয় বংশোদ্ভুত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে মেনে নিতে পারবে না বলে আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করেছিলেন। এক বক্তব্য তিনি বলেন, 'আমার দেশ ব্রিটেন। এখানেই আমার জন্ম হয়েছে। এখানেই আমি বড় হয়েছি। তবে আমার সংস্কৃতি ভারতীয়। আমার স্ত্রী ভারতীয়।' অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা ঋষি সুনাকের বাবা ও মা দুজনেই পূর্ব আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা ব্রিটেনে চলে আসেন। তাঁরা ভারতীয় বংশোদ্ভুত ছিলেন।
মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ
টোরি নেতারা জানাচ্ছেন, ঋষি সুনক ভারতীয় বংশোদ্ভুতের ওপর জোর দিয়ে, ভারতীয় ঐতিহ্যের ওপর জোর দিয়ে প্রচার করছেন। যা অনেকের চক্ষশূলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তিনি আর পাঁচজন ব্রিটিশ নাগরিকের মতো জীবনাপন করেছেন। একই সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। মিথ্যা প্রচার বলেও অনেক টোরি নেতা অভিযোগ করেছেন।
বিপুল সম্পত্তির মালিক
ঋষি সুনকের জনপ্রিয়তা হারানোর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর বিপুল সম্পত্তি। ব্রিটিনের একটি দৈনিক অনুসারে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার পর তিনি বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদে ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি ও তাঁর স্ত্রীর ব্রিটেনে ২২২ তম ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৩০ মিলিয়ন ইউরো। বর্তমানে ব্রিটেন আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার মান নামতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি ঋষি সুনকের সম্পত্তি তাঁর জনপ্রিয়তায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে।