মেধাবী ছাত্র থেকে ব্যবসায়ী, রাজনীতিতে প্রবেশের ১২ বছরের মধ্যেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক
মেধাবী ছাত্র থেকে ব্যবসায়ী, রাজনীতিতে প্রবেশের ১২ বছরের মধ্যেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক
এই প্রথম কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভুত হলেও তাঁর বাবা ও মা, দুজনেরই জন্ম পূর্ব আফ্রিকাতে। তিনি ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তিকে বিয়ে করেন। তিনি বিশ্বের ২২২ তম ধনী ব্যক্তি।
ঋষি সুনকের পড়াশোনা
ঋষি সুনকের বাবা ও মা দুজনেই ফার্মাসিস্ট ছিলেন। ১৯৮০ সালের ২১ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি উইনচেষ্টার কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপরে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই সময়ই তাঁর ইনসোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে পরিচয় হয়।
সুনকের কর্মজীবন
সুনক কর্মজীবনের শুরু থেকে রাজনীতি আসেননি। সুনক ১০ বছরের কিছু সময় আগে ব্রিটেনের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। তার আগে তিনি বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করতেন। তিনি কিছুদিন গোল্ডম্যান শ্যাক্সের জন্য কাজ করেছিলেন। এরপর হেজ ফান্ড ফার্ম চিলড্রেনস ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং থেলেম পার্টনারদের অংশীদার হিসাবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে তিনি অংশীদার হন। ২০০৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার পুরোন সহকর্মীদের সঙ্গে একটি হেজ ফার্ম তৈরি করেন। ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওই হেজ ফার্মটি ২০১০ সালে চালু হয়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর শ্বশুর তথা ভারতীয় ব্যবসায়ী এন আর নারায়ণ মূর্তির মালিকাধীন বিনিয়োগকারী সংস্থা ক্যাটমারান ভেঞ্চার্সের একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন।
সুনকের রাজনৈতিক জীবন
২০১৪ সালে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ওয়েন্ডি মর্টনকে পরাজিত করে ২০১৪ সালে রিচমন্ড (ইয়র্কস)-এর কনজারভেটিভ প্রার্থী হিসেবে সুনাক নির্বাচিত হন। আগে এই আসনটি উইলিয়াম হেগের দখলে ছিল। ২০১৬ সালে সুনক গণভোটে ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি থেরেসা মে-র সরকারে পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ব্রেক্সিট উইথড্রল চুক্তিতে তিনি তিন বার থেরেসা মের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। বরিস জনসন যখন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়াই করছিলেন, সেই সময় তিনি বরিস জনসনের হয়ে প্রচার করেন। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুনক অর্থবিভাগের প্রধান সচিব হন। সাজিদ জাভেদের পর তিনি চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত হন। তিনিই প্রথম বরিস জনসনের বিরোধিতা করেছিলেন। চ্যান্সেলর পদের ইস্তফা দেন।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক
বরিস জনসন চাপে পড়ে পদত্যাগ করে। এরপরেই প্রধানমন্ত্রীর লড়াইয়ে নামেন লিজ ট্রাস ও ঋষি সুনক। যদিও কনজারভেটিভ দলের সদস্যরা লিজ ট্রাসকেই তাঁদের পরবর্তী নেতা ও দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু ব্রিটেনের আর্থিক সঙ্কট লিজ ট্রাস মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন। লিজ ট্রাসের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কনজারভেটিভ দলের টোরি সাংসদ ও সদস্যরা সুনককে বেছে নেন। প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত হিসেবে ঋষি সুনক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন।
সুনকের ভারতীয় যোগ
ঋষি সুনকের বাবা-মা পূর্ব আফ্রিকায় জন্ম নিলেও তাঁর ঠাকুরদা ও ঠাকুমার জন্ম ভারতে। সেখান থেকে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভুত। এছাড়া তাঁর স্ত্রী ভারতীয় ব্যবসায়ী তথা ইনসোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তি। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরুতে এসে ছুটি কাটিয়ে যান।
সুনককে নিয়ে বিতর্ক
লিজ ট্রাসের সঙ্গে যখন ঋষি সুনক প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। ব্রিটেনে চলতি বছর প্রবল তাপপ্রবাহ হয়। সেই তাপপ্রবাহের জেরে প্রায় এক হাজার মানুষ মারা যান। সেই সময় সুনককে একটি বিলাসবহুল সুইমিং পুল তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকী, দেশের আর্থিক সঙ্কটের সময় তাঁর স্ত্রীকে বিশ্বের সব থেকে দামি চা পাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়। বরিস জনসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই তিনি বরিস জনসনের বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁর বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।
ব্রিটেনের ক্ষমতার শীর্ষে ভারতীয় বংশোদ্ভূত, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী হলেন ঋষি সুনক