চিনের 'কাশ্মীর প্ল্যান'-এর জেরে হুরিয়তে চিড়! আইএসআই-বেজিং জোটের 'ড্রিম প্রোজেক্টে' ধাক্কা?
পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা একটু একটু করে পাকিস্তান চিনকে 'দান' করেছে। এই অঞ্চলের এই এলাকাগুলি চিনের হাতে তুলে দেওয়ার মূল লক্ষ্য ছিল চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোরের রাস্তা আরও মসৃণ করা। ৩২১৮ কিলোমিটার লম্বা এই করিডোর আদতে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের 'ড্রিম প্রোজেক্ট।'
গিলগিট-বাল্টিস্তান অঞ্চল
গিলগিট-বাল্টিস্তান আদতে সায়ত্বশাসিত একটি অঞ্চল। তবে গত বছর ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে নতুন করে মানচিত্র আঁকে। এরপরই গিলগিটের উপর ফের দাবি জানায় ভারত। যাতে চিন ও পাকিস্তান, উভয় দেশই অস্বস্তিতে পড়ে। এই আবহে ইসলামাবাদে তিনটি বৈঠক বসে গিলগিট অঞ্চলের সায়ত্বশাসন শেষ করার জন্য। আর একই সময় চিনও পূর্ব লাদাখে দখলদারির চেষ্টা চালায়।
ইসলামাবাদের গোপন বৈঠক
এদিকে ইসলামাবাদের সেই বৈঠকে ভারতের বিচ্ছিনতাবাদী নেতাদেরও ডাকা হয়। সেখানেই পাকিস্তানের সেনা কমান্ডাররা গিলগিটকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখে। তবে এতে নাখুশ হয় বিচ্ছিনতাবাদী নেতারা। আর এতেই খাপ্পা হয় পাক সেনা আধিকারিকরা।
সেনা-জঙ্গি থেকে রাজনীতিবিদরা ছিলেন বৈঠকে?
গিলগিট নিয়ে তৃতীয় বৈঠকে পাক সেনার উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের আইন মন্ত্রী, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রী, গিলগিট-বাল্টিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতারা ও হুরিয়ত নেতারা।
বৈঠকে সব পক্ষের মধ্যে চিড়
সেই বৈঠকেই নাকি পাকিস্তানি সেনা এই বিষয়টি তুলে ধরে যে গিলগিট-বাল্টিস্তান নাকি কোনও কালেই কাশ্মীরের অংশ ছিল না। হুরিয়ত নেতারা এই বিষয়টি সমর্থন জানালেও জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতারা এই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। এদিকে গিলানির পক্ষে যিনি সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তিনি এই বিষয়টির ঘোর বিরোধিতা করেন। এতেই হুরিয়তের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে একটি দূরত্ব তৈরি হয়।
গিলানি পাকিস্তানের উপর ক্ষুণ্ণ
এদিকে গিলানির পক্ষে যে সেই বৈঠকে হাজির ছিল, জানা গিয়েছে আগে সে হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার ছিল। বর্তমানে রাজনীতিতে পদার্পণ করলেও তা খুব একটা মসৃণ হয়নি। এই অবস্থায় আইএসআই-এর গিলগিট সংক্রান্ত প্ল্যানের বিরুদ্ধে যে সকল জঙ্গি গোষ্ঠী আছে, তাদের সঙ্গে যোগযোগ করতে শুরু করে সে। সেরকম ছয় জঙ্গি মিলে একটি আলাদা গোষ্ঠী গঠন করে যেটা হুরিয়ত নেতাদেরও বিপক্ষ মত পোষণ করে। মেন করা হচ্ছে এই গোষ্ঠীকে পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুর হায়দর।
জঙ্গিদের খুঁজছে পাক গোয়েন্দারা
এর জেরেই এবার পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এসব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে শুরু করেছে। যেই জঙ্গিদের এতকাল ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করত, সেই জঙ্গি গোষ্ঠীকেই এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে পাক গোয়েন্দারা। আর এই আবহেই গিলানি হুরিয়ত থেকে পদত্যাগ করেন।
গিলানির পদত্যাগ
গিলানি এই পদত্যাগের পিছনে মূল কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন, হুরিয়ত নেতাদের অসৎ পন্থাকে। এদিকে যুব সমাজকেও হুরিয়তে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। এরই মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দারা পুরো পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রেখে চলেছে। ভারত প্রথম থেকে বলে এসেছে যে পুরো গিলগিট-বাল্টিস্তান, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের। পাকিস্তান সেখানে বেআইনি ভাবে দখলদারি চালাচ্ছে।
লাদাখ সীমান্তে চরম উত্তেজনা
এদিকে লাদাখ সীমান্তে চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি ভারত ও চিনের মধ্যে। এরই মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে বারংবার সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান। এরই মাঝে কাস্মীরে বেড়েছে জঙ্গি তৎপরতা। আর এরই মাঝে জানা গিয়েছে, গিলগিট-বালতিস্তানে প্রায় ২০ হাজার বাড়তি সেনা পাঠিয়েছে পাকিস্তান। লক্ষ্য, চিনা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করা।
ভারতের উপর চাপসৃষ্টি
ভারতের উপর দুই প্রান্ত থেকে চাপ বাড়াতেই পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই জন্যই যখন চিন লাদাখের পূর্বদিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা মোতায়েন করেছে। তখনই পশ্চিম প্রান্তে নিয়ন্ত্রণরেখায় বাহিনী পাঠিয়ে ভারতের উপর চাপসৃষ্টির কৌশল নিয়েছে চিনের বন্ধু পাকিস্তান।
জঙ্গিদেরও মদত নিচ্ছে বেজিং
ভারতকে কাবু করতে পাক জঙ্গিদেরও মদত নিচ্ছে বেজিং। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। কাশ্মীরে নাশকতা চালানোর জন্য লালফৌজ পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন অল বদরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। সূত্রের খবর, ভারতে ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ পাক জঙ্গি অনুপ্রবেশ করে আত্মগোপন করে রয়েছে। তারা এখন স্থানীয় কাশ্মীরি জঙ্গিদের সঙ্গে ফের নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন পুরো খিচুড়ির মতো হয়ে গিয়েছে।
আদৌ কি কাশ্মীর ফিরে পাবে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা? পণ্ডিতদের কথা মনে করিয়ে যা বললেন রাম মাধব