মুদ্রাস্ফীতি ৬০ শতাংশে পৌঁছনোর আশঙ্কা, পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা মুদ্রণ বন্ধের পরিকল্পনা
মুদ্রাস্ফীতি ৬০ শতাংশে পৌঁছনোর আশঙ্কা, পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা মুদ্রণ বন্ধের পরিকল্পনা
আর্থিক সঙ্কটে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা। দেশে জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছে। জ্বালানি কেনার মতো বিদেশি অর্থ বর্তমানে শ্রীলঙ্কার ভাণ্ডারে নেই। স্থানীয় কর্মীদের বেতন দিতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা মুদ্রণ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই। কিন্তু এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে। শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতি ৬০ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা মুদ্রণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এশিয়ার সব থেকে বড় মুদ্রাস্ফীতি শ্রীলঙ্কায় দেখা দিয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বব্যাঙ্কের সাহায্য
মঙ্গলবার সংসদে শ্রীলঙ্কার মুখ্যমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, দেশের মুদ্রাস্ফীতি ৬০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা নীতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, একটি গ্যাস চুক্তি হয়েছে। যার ফলে আগামী তিন থেকে চার মাস দেশে জ্বালানির ঘাটতি কিছুটা কমবে। চুক্তির বেশির ভাগ অর্থ বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে আসছে বলে তিনি জানান।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, এই অর্থনৈতিক সঙ্কট সহজে কাটবে না। ২০২৩ সাল দেশবাসীর জন্য আরও কঠিন সময় নিয়ে আসছে। তবে তিনি দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেড় বছরের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, দেশে দুই দিন কোনও সরকার দায়িত্বে ছিল না। দেশজুড়ে সেই সময় গণবিক্ষোভ দেখা দেয়। তার জেরে দেশের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ অবনতি হয়। এই তীব্র সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সাহায্য চান।
খাদ্যদ্রব্যের ৮০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি
চলতি বছর জুন মাসে দ্রব্যমূল্য বার্ষিক ৫৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শস্য ও অপরিশোধিত তেলের তীব্র ঘাটতির জেরে খাদ্যের দাম প্রায় ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দেশটি ২০২২ সালে প্রথম ত্রৈমাসিকে ৫৮৮ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান মদ্রা মুদ্রিত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার ৭০ বছরের ইতিহাসে সব থেকে বড় মদ্রা সঙ্কট দেখা দিয়েছে বর্তমানে।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান সামাজিক জীবন
তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রক দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করেছে। সোমবার থেকে এই ছুটি শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ১৮ জুন শ্রীলঙ্কার সমস্ত স্কুল এক সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করেছিল কলম্বো প্রশাসন। শিক্ষামন্ত্রকের সচিব নিহাল রানাসিংহ জানিয়েছেন, জ্বালানির ঘাটতির জেরে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে সমস্যা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ অনলাইনে ক্লাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের যাতে অসুবিধা নয় শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটি কমিশন স্কুলের দিনগুলোতে সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ থাকে। কলম্বো থেকে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রদেশের রাস্তাঘাট থমথমে। দোকানপাট বন্ধ বললেই চলে। পেট্রোলপাম্পের সামনে গাড়ির লাইন এখনও রয়েছে। তবে জ্বালানির অভাবে দেশের বেশিরভাগ পেট্রোলপাম্প বন্ধ। বন্ধ সরকারি, বেসরকারি অফিস। শ্রীলঙ্কার পর্যটন কেন্দ্রগুলো জনমানব শূন্য।