আরব্য সংকট: কতটা সুরক্ষিত কাতারের ভারতীয়রা ও ভারতের বাণিজ্য, জানুন ফোটোফিচারে
কাতারে বসবাসকারী ৬.৫ লক্ষ ভারতীয়ের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কায় ভুগছে ভারত। গোটা পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান কী দেখে নেওয়া যাক।
আরব দুনিয়ার উপসাগরীয় সংকট আরও একধাপ এগিয়ে গেল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী , সৌদি আরব , মিশর ও বাহারিন এই ৪ দেশ কাতারের সঙ্গে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর , সেই পথেই হাঁটল আরও ৩ মুসলিম প্রধান দেশ। ইয়েমেন, লিবিয়া ও মলদ্বীপও কাতারের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক বন্ধ করার পথে এগিয়েছে। ১৯৯৯১ সালের ইরাক যুদ্ধের পর এই প্রথম আবার উপসাগরীয় এলাকা কোনও বড়সড় সংকটের সম্মুখীন হতে চলেছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।[মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সংকট : বাড়ছে তেলের দাম]
এদিকে , কূটনৈতিক সংকটে জেরবার মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটন যেমন এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনই এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে তেলের দামে। শুধু তাই নয়, কাতারে বসবাসকারী ৬.৫ লক্ষ ভারতীয়ের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কায় ভুগছে ভারত। গোটা পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান কী দেখে নেওয়া যাক।[প্রসঙ্গ সন্ত্রাসবাদ, বড়সড় কূটনৈতিক সংকটে আরব দুনিয়া, একঘরে কাতার]
কতটা সুরক্ষিত মধ্যপ্রাচ্যের ভারতীয়রা?
ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন আপাতত মধ্যপ্রাচ্যের ভারতীয়দের কোনও সমস্যা নেই। নিরাপত্তার দিকে থেকে দেখতে গেলে তাঁরা এখন সুরক্ষিত। তবে কোনও ভারতীয় বর্তমানে সেখানে সমস্যার পড়েছেন কী না তা খতিয়ে দেখছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক । তবে খুব শিগগিরই পরিস্থিতি ফের আগের মতো হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ভারত।
আরব দুনিয়ার কূটনৈতিক সংকট ভারতে কি প্রভাব ফেলবে?
ব্যবসা বাণিজ্যের সম্পর্কের দিক থেকে ভারতের কাছে কাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ৬.৫ লক্ষ ভারতীয়র সেদেশে মোট রোজগার ৪ বিলিয়ন ডলার। দুদেশের মধ্যে ব্যবসা হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলারের। ফলে কাতার যদি আরব দুনিয়ায় একঘরে হয়ে যায়, তাহলে ভারত-কাতার দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেতিবাচক ভাবই প্রভাবিত হতে পারে। ভারতের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই আরব সংকটের যথেষ্ট প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কাতার -ভারত বাণিজ্য
কাতার হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকৃতিক গ্যাসের সরবরাহকারী দেশ। এদেশের সঙ্গে L&T এর মতো ভারতীয় সংস্থা কাজ করে। L&T ছাড়াও রয়েছে পাঞ্জ লয়েড, ভোলটাসের মতো ভারতীয় সংস্থা। যারা কাতারের সঙ্গে বাণিজ্যের সম্পর্কে আবদ্ধ। ফলে ভারতের বিষয়ে কাতার আগামী দিনে কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকে নজর থাকবে রজানৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
ভারতীয়দের সমস্যা
কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জেরে, ৪ মুসলিম প্রধান দেশ ইতিমধ্যেই কাতারের সঙ্গে বিমান পথে যোগাযোগও বন্ধ রেখেছে। ফলে কাতারে ভারতীয় পর্যটকরা বিমানে যেতে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হবেনই। কারণ কাতার বাদে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে যেতে গেলে পরে দোহা। আর এশিয়ায় দোহা হল সবচেয়ে বড় ট্রানজিট ডেস্টিনেশন। ফলে সব মিলিয়ে সংকটে গাঢ় হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সংকট হাতের বাইরে গেল কেন?
কাতারের সঙ্গে আরব দুনিয়ার ঝামেলা অনেক কাল ধরেই। আমিরশাহী ও সৌদির মুসলিম ব্রাদারহুড বহু বছর ধরেই কাতারে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গতিবিধির সমালোচনা করে আসছে। এর আগে মিশরের রাজনৈতিক সংকটের সময়, কাতার ,মিশরের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মোরসিকে সমর্থন জানায়। যার ফলে আরবের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। এছাড়াও হামাস নামের সংগঠনে কাতার টাকা যোগান দিচ্ছে বলেও অভিযোগ ছিল। উল্লেখ্য, হামাস হল প্যালেস্টাইনের সুন্নি মুসলিম প্রধান সংগঠন যারা মৌলবাদের আরেক নাম বলে দাবি করা হয়।
সন্ত্রাসবাদ ও কাতার
সাম্প্রতিক কালে , জঙ্গি সংগঠন আইসিসকে প্রচুর অর্থ যোগান দিত কাতার, বলে অভিযোগ আরবের অন্যান্য দেশগুলির। এছাড়াও হামাস ও হিজবোল্লাহর সঙ্গেও কাতারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে জানি গিয়েছে।
কূটনৈতিক সংকটের নেপথ্যে যে কাহিনী উঠে আসছে
আসলে কাতারকে এক ঘরে করে দিয়ে ইরানকে শায়েস্তা করার কূটনৈতিক খেলায় মেতেছে সৌদি আরব, এমনই দাবি অনেক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কারণ ইরানের কাছকাঠি কোনও আরব দেশ গেলেই তাদের আটকানোর চেষ্টা করে সৌদি আরব। আর তারই আরেকটা দৃষ্টান্ত তৈরি হল , কাতারকে একঘরে করে দিয়ে।