দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী, চিন কেন চিন্তিত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশ - ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর সফরে রওনা হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার রাতে পাঁচদিনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে রওনা হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে তিনি প্রথমেই যাবেন ইন্দোনেশিয়ায়। তারপর যাবেন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এই সফরে, তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এবং শীর্ষ নামী সংস্থার সিইও-দের সঙ্গে আলোচনায় বসা সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করবেন। মনে করা হচ্ছে ভারত সরকারের 'অ্যাক্ট ইস্ট' নীতিকে জোরদার করতেই তাঁর এই সফর।
এই সফরে মোদী ইন্দোনেশিয়ার সবং দ্বীপের বন্দরে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেবেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এর আগে সেদেশের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী লুহুত পন্দজাইতান জানিয়েছিলেন, 'পোর্টটির গভীরতা ৪০ মিটার। ফলে, সব ধরনের জাহাজ, এমনকী সাবমেরিনের জন্যও এটি কার্যকরী।' তাঁর এই মন্তব্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে চিন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফর নিয়ে সেদেশের সরকারি সংবাদমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলছে, ভারত সবং-এ বানিজ্য ঘাঁটি গড়লে অসুবিধা নেই। তাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বানিজ্য সম্ভাবনাই বাড়বে। কিন্তু যদি ভারত সেখানে সামরিক ঘাঁটি গড়তে চায় তাহলে সরাসরি চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে ভারতকে।
সেক্ষেত্রে ভারতের হাতই পুড়বে বলে দাবি করেছে চিন। তারা বলছে শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা পোর্টের কথা। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ-বন্দরটি চিনের সরকারি এক সংস্থাকে শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই বন্দরটি চিন শুধুমাত্র ভারত মহাসাগরে বানিজ্যের কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু তারা হুমকি দিয়ে বলছে, ভারত যদি সবং বন্দরে সামরিক ঘাঁটি গড়ে চিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, সেক্ষেত্রে চিন ছেড়ে কথা বলবে না। তারাও ভারত মহাসাগরে সামরিক কার্যক্রম চালু করবে।
কূটনৈতিক কচকচির বাইরে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক কর্মসূচিও আছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর। দুদিনের ইন্দোনেশিয়া সফরে জাকার্তার কনভেনশন হলে মিলিত হবেন ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে। জানা গেছে কৈলাস খেরের গানের মধ্য দিয়ে মোদীকে বরণ করে নেবেন প্রবাসী ভারতীয়রা। মোদীর এই আগমন নিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে দারুন উৎসাহ দেখা গিয়েছে। জানা গিয়েছে শুধু জাকার্তা নয়, বালি, সুরাবায়া, সামারা থেকেও ভারতীয়রা আসছেন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে, তাঁর সঙ্গে মিলিত হতে। এই অনুষ্ঠান ঘিরে সমগ্র ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের এক হতে দেখা যাবে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। তবে কেবল ভারতীয়রাই নয়, বহু ইন্দোনেশিয়, স্থানীয় ব্যক্তিরাও মোদীর ভাষণ শুনতে অত্যন্ত আগ্রহী।
মোদীকে হাতের কাছে পাওয়ার সূযোগ প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে খুব একটা আসে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি আব্দারও করতে চান তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ ভারত - ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে আগে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ছিল। এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা নতুন বিমান চালু করার দাবি রাখবেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তাতে, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য সব প্রয়োজনেই দেশের সঙ্গে তারা সহজে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। এছাড়া গত কয়েকবছরে ইন্দোনেশিয়ৈয় ভারতীয় পন্যও মেলা ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিকেও নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবেন তাঁরা। এছাড়া দুদেশের মধ্যে বানিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ুক তাও চাইছেন ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়রা।