মালদ্বীপ নিয়ে ভারত-চিন দুই দেশের এত মাথা ব্যথা কেন? পিছনে রয়েছে কোন কূটনীতি
ভারত ও চিন দুই দেশই কেন মালদ্বীপ নিয়ে এত চিন্তিত?
ভারত বিরোধী মালদ্বীপ প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন পরাজিত হয়েছেন। একেবারে ধরাশায়ী হওয়া যাকে বলে। তাঁকে হারিয়েছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি। এবার তিনি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন। আবদুল্লা ভারত বিরোধী তো বটেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি চিনের প্রতি সখ্যতাও যে দেশবাসী ভালো চোখে নেয়নি সেটাও বোধহয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আবদুল্লা ইয়ামিন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ১৩২টি ভোট। আর ইব্রাহিম মহম্মদ পেয়েছেন ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬১৬টি ভোট। কিছুদিন আগে মলদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করে দিয়েছিলেন আবদুল্লা। সেই প্রেক্ষিতে এমন অবস্থা যে তৈরি হতে পারে তা আন্দাজ করা গিয়েছিল। ভোটের ফল বেরোতে আবদুল্লাও জানিয়ে দেন এই রায় তিনি মাথা পেতে নিয়েছেন।
এখন ঘটনা হল, ভারত ও চিন দুই দেশই কেন মালদ্বীপ নিয়ে এত চিন্তিত? মালদ্বীপে মাত্র ৪ লক্ষ মানুষের বাস। ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই দেশটির গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই। চিন এই দেশে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে টাকা ঢেলেছে। রাস্তা ও বন্দর তৈরিতে সাহায্য করছে।
চিনের মূল উদ্দেশ্যই হল, মালদ্বীপে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে ভারতকে এশীয় মহাদেশ অঞ্চলে চাপে ফেলা। সেজন্যই অর্থনৈতিক ও সামরিক সখ্যতা মালদ্বীপের সঙ্গে চিন বাড়িয়ে তুলেছিল আবদুল্লা ইয়েমেনের হাত ধরে।
চিনের এমন দাপাদাপি ভারতের পক্ষে নিশ্চিতভাবে সহ্য করা সহজ নয়। আবদুল্লা ইয়ামিন চিনের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। যেভাবে চিন মালদ্বীপে পরিকাঠামো উন্নয়নে নেমেছিল তাতে তা কিছু বছরের মধ্যেই চিনের কলোনি হিসাবে পরিচিত হত। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তা ভারতের জন্য সুখের খবর হতো না।
চিন মালদ্বীপে৮৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে বিমানবন্দর, সেতু, রাস্তা ইত্যাদি বানিয়ে দ্বীপগুলিকে জুড়ে দেওয়ার কাজ করছিল। এছাড়া মল ও হাসপাতাল তৈরিতেও নেমেছিল চিন। এছাড়া মালদ্বীপে চিনা পর্যটকের সংখ্যাও হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে। মালদ্বীপের বন্দর এলাকাগুলিকে চিন প্রায় নিজেদের বানিয়ে ফেলেছিল।
একসময়ে যে মালদ্বীপ ভারতের ছত্রছায়ায় ছিল, আবদুল্লা ইয়ামিনের সময়ে তা চিনের দিকে ঘনিষ্ঠ হয়। তার আগের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানে ছিলেন। তবে ইয়ামিন ভারতের প্রকল্পগুলি আটকে চিনকে কাছে টেনে নেন।
ঘটনা হল, মালদ্বীপকে ট্যুরিজম হাব বানাতে ইতিমধ্যে সেখানে পরিকাঠামো উন্নয়ন করে বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছিল চিন। হোটেল, রেস্তরাঁ, ইয়র্ট মেরিনা, ট্রাভেল এজেন্সি সব গড়ে তোলা হচ্ছিল। মালদ্বীপের শক্তি না থাকায় একপ্রকার ছল করে ভয় দেখিয়েই চিন এসব করিয়ে নিয়ে ওই দেশ ও এলাকায় ভারতের প্রভাবকে খাটো করতে নেমেছিল। একটা সময়ে আবদুল্লা ইয়ামিনের সরকার চিনকে বন্ধু দেশ ও ভারতকে শত্রু দেশ বলে অভিহিত করেছেন। ফলে বোঝা যাচ্ছিল, চিন গোপনে কতটা প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল শাসক দলের উপরে।
২০১৫ সাল থেকেই ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। সফর বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মহম্মদ নাশিদের সঙ্গে মালদ্বীপে যে অন্যায় হয়েছে ও তাঁকে জেলবন্দি হতে হয়, তার প্রতিবাদেই মোদী সেদেশে যাননি। তারপরই আবদুল্লা ইয়ামিন চিনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। চিন সুযোগ বুঝে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় চিনকে। ফলে মালদ্বীপের পুরোপুরি চিনের দিকে ঝোঁকা ছাড়া উপায় ছিল না।
নতুন প্রেসিডেন্টের আমলে ফের একবার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আগের জায়গায় পৌঁছয় কিনা সেটাই এখন দেখার।