ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করা মহসিন খান 'অবসাদগ্রস্ত' ছিলেন, বলছে পুলিশ
ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করা মহসিন খান 'অবসাদগ্রস্ত' ছিলেন, বলছে পুলিশ
বাংলাদেশে ফেসবুক লাইভে নিজের মাথায় পিস্তল তাক করে এক ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে তার পরিবার।
বুধবার রাত ১০টার কিছু আগে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নিজের বাসায় ফেসবুক লাইভে পিস্তল মাথায় তাক করে আবু মহসিন খান নামে ওই ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ধানমন্ডির সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত শেষে আবু মহসিন খানের মরদেহ আজ দুপুরের দিকে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, মি. খান যে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাবহার করে আত্মহনন করেছেন, মাত্র দুদিন আগেই তিনি সেটির লাইসেন্স নবায়ন করেছেন।
আবু মহসিন খান চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।
এই ঘটনাটি ঠেকানো যেত কিনা সেনিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যা বলছে পুলিশ
পুলিশ মনে করছে তার দীর্ঘ দিনের একাকী জীবন, ক্যান্সারের সাথে লড়াই, ব্যবসায় লোকসান, এই সব কিছু থেকে চরম অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন আটান্ন বছর বয়সী ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান।
সেটিই তার আত্মহননের পথ বেছে নেবার কারণ হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।
"ওনার অনেক ডিপ্রেশন ছিল। ওনার বিগত পাঁচ বছর যাবত ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ওনার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকে। উনি একাকী জীবন যাপন করতেন। উনি ব্যবসা করতেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে ব্যবসাটা ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। উনি অনেক ব্যাবসায়িক লস করেছিলেন"।
"আমরা যেটা বুঝতে পারলাম এই বয়সী একটা লোক, দীর্ঘদিন এরকম একা থাকা থাকা, এই সবকিছু নিয়েই ওনার ডিপ্রেশনটা ছিল। প্রাথমিকভাবে আমরা তার প্রতিবেশী, আত্মীয়দের সাথে কথা বলে এমনটাই মনে করছি", বলেছেন ধানমন্ডি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম আলী মিয়া।
গতকাল বুধবার রাত ১০টার কিছু আগে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নিজের বাসায় ফেসবুক লাইভে পিস্তল মাথায় তাক করে আবু মহসিন খান আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি কেন
বাংলাদেশে কেন প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই?
বাংলাদেশে ২০২১ সালে ১০১ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
বই পড়া কি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে?
ফেসবুক লাইভে ১৬ মিনিট
ফেসবুক লাইভে গুছিয়ে শান্ত গলায় ১৬ মিনিটের বেশি সময় কথা বলেছেন আবু মহসিন খান। কথা বলার সময় সুস্থির ছিলেন।
তার চোখের চশমার কাঁচ ঝাপসা দেখাচ্ছিল। নিজের পরিচয় দিয়ে শুরু কথা করেছেন।
পরিবারের কয়েকজন সদস্যের প্রতি তিনি সংক্ষুব্ধ সেটি তার কথায় প্রকাশিত হয়েছে। কথার মাঝে তিনি অনেকবার ছোট-বড় বিরতি নিয়েছেন।
তার গলার স্বর বুজে আসছিলো মাঝে মাঝে। দুইবার কলেমা পড়েছেন, বিড়বিড় করে সুরা পাঠ করেছেন।
যে পিস্তলটি ব্যাবহার করে তিনি নিজের প্রাণ শেষ করে দেবেন সেটি যে বৈধ তাও তিনি নিশ্চিত করেছেন ফেসবুক লাইভে সেটির লাইসেন্স প্রদর্শন করে।
পুলিশ জানিয়েছে তিনি আগেই দরজায় কাগজ টাঙিয়ে রেখেছিলেন যাতে টাইপ করে লেখা ছিল দরজা খোলা আছে। ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢোকার কথা লিখেছেন।
সাদা কাপড় রেখে গেছেন নিজেকে দাফন করার জন্য। কোন কবরস্থানে দাফন হবে সেটি অনুরোধ করে গেছেন।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, তার মরদেহের পাশে একটি নোট পাওয়া গেছে। সেখানেও তিনি একই ধরনের কথা লিখেছেন।
আবু মহসিন খানের এভাবে আত্মহত্যা করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই নানা ধরণের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে।