পি কে হালদার: হাজার কোটি টাকা আত্মস্যাতে অভিযুক্ত পলাতক ব্যবসায়ীর মা-সহ ২৫ স্বজন-সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মস্যাতে অভিযুক্ত একজন পলাতক ব্যবসায়ীর সাথে সম্পর্কযুক্ত ২৫ জন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উচ্চ আদালত ।
এদের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর মা, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন এবং তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মীও রয়েছেন।
প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি পি কে হালদার নামেও পরিচিত, তিনি গত বছর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথেও যুক্ত ছিলেন, মালিক ছিলেন আরো নানা বেসরকারি উদ্যোগের।
ব্যাংক বহির্ভূত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে মি. হালদারের বিরুদ্ধে।
মি. হালদারকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে ইন্টারপোল যাতে একটি রেড অ্যালার্ট জারি করে, সেজন্যও সংস্থাটির সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তর।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খোরশেদ আলম খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মি. হালদারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ৫ জন ব্যক্তি আদালতকে ২৫ জনের ওই তালিকাটি জমা দিয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন, এদেরকে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাহলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তারা যেন বিদেশে যেতে না পারে, সেই আবেদনও তারা করেন।
''উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত আদেশ দিয়েছেন, পরবর্তী আদেশ অথবা সুয়োমোটো রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যক্তিরা বিদেশে যেতে পারবেন না। আর এই ভুক্তভোগীরা মামলার পক্ষভুক্ত হবে ন।,'' বলছেন মি. খান।
গত বছরের ১৯শে নভেম্বর হাইকোর্ট একটি স্বপ্রণোদিত আদেশে জানতে চেয়েছিলেন যে, পি কে হালদারকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মি. হালদার একটি লিজিং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়, তখনই তিনি বিদেশে পালিয়েছেন।
আরও পড়তে পারেন:
অভিযুক্ত মি. হালদার দেশে না থাকায় তিনি কোন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন খোরশেদ আলম।
"আইনত সে পলাতক আসামী। সেজন্য এখানে তার পক্ষে আইনজীবী নেই। তাকে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে অথবা জামিনে থাকতে হবে- তাহলে সে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে।"
এর আগে গত ৯ই ডিসেম্বর মি. হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান হাইকোর্ট।
২০২১ সালের তেসরা জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়।
কোথায় আছেন পি কে হালদার
গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলা করে দুদক, যেখানে তার ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম গত ডিসেম্বর মাসে বিবিসিকে বলেছিলেন যে, পি কে হালদার দুবাই অথবা সিঙ্গাপুরে পালিয়ে রয়েছেন।
বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম এমন তথ্যও দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে তিনি কানাডায় পালিয়ে তাকতে পারেন।
তবে দায়িত্বশীল কোন সংস্থা বা ব্যক্তিরে কাছে মি. হালদারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই।
অভিযোগ ওঠার পর কিভাবে একজন ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিল তা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযুক্তকে কেন নজরদারিতে রাখা হয়নি সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোন অভিযোগের অনুসন্ধানে সত্যতা মিললে তখন মামলা হয় এবং তদন্তের প্রশ্ন আসে।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরই তারা অভিযুক্তকে নজরদারির আওতায় আনতে পারেন।
কিন্ত অভিযোগের অনুসন্ধান যখন করা হচ্ছিল তখনই দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন পি কে হালদার।
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
ভ্যাকসিনেই কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে?
আড়াই বছর ধরে ঢাকা মেডিকেলে মার্কিন নাগরিকের লাশ
ধর্ম নিয়ে সংশয় শেষে গতি হলো চাকমা কিশোরীর মরদেহের
স্কোয়াডে জায়গা পেলেন না মাশরাফী, তবে কি বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল?