সুস্থ হওয়ার পর মানসিক অবসাদের শিকার হচ্ছেন বেশিরভাগ করোনা আক্রান্ত! চিন্তায় মনোবিদেরা
সারাবিশ্বে করোনার দাপট অব্যাহত থাকলেও ইতিমধ্যে প্রায় ২ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষের সেরে ওঠার খবরে আশাবাদী চিকিৎসকমহল। এরই মাঝে সম্প্রতি লন্ডনের একটি সমীক্ষার তথ্য ভাবিয়ে তুলেছে মনোবিদদের। ওই সমীক্ষা দেখা যাচ্ছে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও প্রায় অর্ধেক রোগীই দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদের শিকার হচ্ছেন।
এই সমীক্ষার নেতৃত্বে আছেন আয়ারল্যান্ডার সেন্ট জেমস হাসপাতালের লিয়াম টাউনসেন্ড। তিনি জানান, "এসএআরএস-সিওভি-২ সংক্রমণের সম্বন্ধে এখনও অনেক গবেষণাই চলছে। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া এখনও অজানা।" সূত্রের খবর, সমীক্ষায় মানসিক অবসাদের মাত্রা মাপার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে শ্যাল্ডার ফ্যাটিগ স্কোর (সিএফকিউ-১১)।
এদিকে সমীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীর করোনা পূর্ব মনোরোগ, সংক্রমণের পরে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার কার্যক্রম, করোনা সংক্রমণের প্রভাব ও তীব্রতাকে মাথায় রাখা হয়েছে বলেও খবর। এই প্রসঙ্গে গবেষক জানিয়েছেন, মোট ১২৮ জনের উপর সমীক্ষা করা হয় যাঁদের গড় বয়স ছিল ৫০ বছর ও ৫৪% মহিলা। তাদের সেরে ওঠার প্রায় ১০ সপ্তাহ পর এই সমীক্ষা চালানো হয় বলেও জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
এদিকে করোনা থেকে সেরে ওঠার পর যে কেউই তাঁদের হাসপাতালে মনোরোগ সংক্রান্ত সহায়তা পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন এদিকে সেন্ট জেমস হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অন্যদিকে সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ১২৮ জনের মধ্যে প্রায় ৬৭ জনই মানসিক অবসাদের শিকার। ওই ১২৮ জনের মধ্যে ৭১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানা যায়। যদিও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মানসিক অবসাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই বললেই চলে।
সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্যানুযায়ী, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের তীব্রতা হোক বা শারীরিক প্রদাহ, কোনোকিছুর সাথেই সরাসরি যোগাযোগ নেই মানসিক অবসাদের। অন্যদিকে মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে অধিক আক্রান্ত হয়েছে মহিলারা এবং কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যাঁরা মনোরোগে ভুগছিলেন, তাঁদের মধ্যে এই সমস্যা চোখে পড়ার মত। সমীক্ষায় যুক্ত থাকা এক আধিকারিকের মতে, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার আগে করোনা সম্পর্কে যেভাবে আতঙ্কে ভুগেছেন রোগীরা, তাই প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই করোনা-পরবর্তী মানসিক অবসাদের।
গবেষকদের মতে, এই সমীক্ষার ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে যে কোভিড-পরবর্তী অবস্থাতেও চিকিৎসকের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সমীক্ষার ফলাফলে এটা অন্তত স্পষ্ট যে শুধুমাত্র ওষুধ ছাড়াও মনোবিদদের মাধ্যমে মনোরোগের চিকিৎসা করে করোনা আতঙ্ককে সম্পূর্ণ দূর করতে হবে। এই সমীক্ষার ফলাফল আগামী ২৩-২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আয়োজিত ইএসসিএমআইডি অনলাইনে করোনা সম্মেলনে পেশ করা হতে চলেছে বলেও খবর।