ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেন চলবে কবে থেকে, যাত্রীদের যা জানা দরকার
ঢাকায় রেলওয়ে বিভাগ বলছে আগামী পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন থেকে এ ট্রেন পরিসেবা চালুর জোর চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেন চলাচল আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে শুরুর লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি চলছে।
তবে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে ভিসা ও কোভিড সংক্রান্ত প্রটোকল চূড়ান্ত করতে হবে উভয় দেশকে, কারণ ভারত এখনো ট্রেন পথের জন্য ভিসা দেয়া শুরু করেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য ভিসা সংক্রান্ত ছাড়পত্র এখনো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না আসায় স্বাধীনতা দিবস থেকেই এ ট্রেন চালু করতে বাংলাদেশ পরিকল্পনা করলেও সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার বিবিসিকে বলেছেন, ভিসা ও আরও কিছু বিষয়ে জটিলতার অবসান না হওয়ায় ঢাকা- জলপাইগুড়ি ট্রেন এখনি চালু করা যাচ্ছে না।
"আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা এখন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের যা জানাবে সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিবো। তবে খুব শিগগিরই এটি চালু করা যাবে বলে আশা করছি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের নতুন ট্রেনে ভারতীয়দের কী লাভ
বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার রেলপথ চালু হতে যাচ্ছে
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ি যাবে ভারতের ট্রেন
প্রসঙ্গত, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার বিমানবন্দর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত আন্তঃদেশীয় ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলার কথা।
অবশ্য গত বাইশ বছর ধরেই চলছে ঢাকা-কলকাতা ট্রেন মৈত্রী।
জলপাইগুড়ি হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক দার্জিলিং ভ্রমণে যান।
ট্রেনটি চালু হলে দার্জিলিং ভ্রমণ আরও স্বাচ্ছন্দ্যের ও কম খরচের হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা কারণ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব খুবই কম।
- বেড়াতে গিয়ে বিপদ আর দুর্ঘটনা এড়াতে যে প্রস্তুতি দরকার
- বাংলাদেশের যে স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়
- কেমন হবে লকডাউন-পরবর্তী যুগের ভ্রমণ?
ঢাকা- জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন, কবে কখন যাবে
শিক্ষার্থী সুমাইয়া পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। করোনা বিধিনিষেধ উঠে সড়ক ও ট্রেন পথে ভিসা পাওয়া গেলে বন্ধুদের সাথে দার্জিলিং যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
"আমার ভাইয়ার কাছে শুনেছি দার্জিলিংয়ের কথা। আমরা তো ভর্তির প্রথম দু বছর কোথাও যেতে পারলাম না। তাই বন্ধুরা ঠিক করে রেখেছি যে ভিসা চালু হলেই দার্জিলিং যাবো। ততদিনে ট্রেনে যেতে পারলে আরও দারুণ হবে," বলছিলেন তিনি।
ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে দার্জিলিং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। অসংখ্য শিক্ষার্থী সড়কপথে জলপাইগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যান খরচ খুব কম হওয়ার কারণে।
রেলওয়ে থেকে আগেই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন মিতালী এক্সপ্রেস চালু হলে সপ্তাহে চার দিন এটি চলাচল করবে।
নিউজলপাইগুড়ি থেকে রবি ও বুধবার আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। পথে হলদিবাড়ি ও চিলহাটি স্টেশনে ট্রেনটি থামার কথা রয়েছে।
নিউজলপাইগুড়ি থেকে বেলা পৌনে বারোটায় ছেড়ে এসে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সাড়ে দশটায়। অন্যদিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাত সাড়ে নয়টায় ছেড়ে জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে সকাল সোয়া সাতটায়।
খরচ কেমন হবে, টিকেট কোথায় যাওয়া যাবে
ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত প্রতি ডলার ৮৭ টাকা হিসেবে সর্বোচ্চ ভাড়া পড়বে ৪৯০৫ টাকা। এটি এসি বার্থে যারা যাবেন তাদের দিতে হবে।
তবে যারা এসি সিটে যাবেন তাদের ৩৮০৫ টাকা আর এসি চেয়ারে যারা যাবেন তাদের ২৭০৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
এ ভাড়ার মধ্যেই ভ্রমণ কর অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে যাত্রীদের আর নতুন করে কোন ভ্রমণ কর দিতে হবে না।
আর পাঁচ বছর বয়সের কম যাত্রীদের ভাড়া হবে টিকেট মূল্যের অর্ধেক।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করতে পারবেন।
রেলওয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন আর কলকাতায় টার্মিনাল স্টেশন ও ফেয়ারলীপ্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং থেকে মিতালী এক্সপ্রেসের টিকেট পাওয়া যাবে।
যেসব এলাকায় ভ্রমণে সুবিধা হবে
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে যাওয়া বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আরও সহজ হবে। আবার সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষদেরও বাংলাদেশে যেতে সুবিধা হবে।
তবে ভারতের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র না থাকা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় অথবা সিকিমের মানুষের জন্য এই ট্রেন সেবা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
কারণ কলকাতায় গিয়ে ভিসা করিয়ে কেউ আবার জলপাইগুড়ি এসে ট্রেন ভ্রমণ করে বাংলাদেশে আসবে না।
ঢাকায় রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
এদিকে বুধবার বাংলাদেশের রেলমন্ত্রীর সাথে এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার।
পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন যে ভারত টুরিস্ট ভিসা চালু করলেই ঢাকা-দার্জিলিং (প্রকৃতপক্ষে ঢাকা- নিউ জলপাইগুড়ি) ট্রেন চালু সম্ভব হবে।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
পাঁচ দশক পরও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কেন 'লাভ-হেট' সম্পর্ক
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক: শীতলতা নাকি 'সোনালি অধ্যায়'
ভারত ও চীনের সাথে কিভাবে ভারসাম্য করছে সরকার
বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব: নেপথ্যে কী?