বিশ্ব জুড়েই চলছে পরিবর্তন, সংসদের গুরুগম্ভীর পরিবেশে শোনা যাচ্ছে শিশুদের কলকলানিও
মা আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে পার্লামেন্টগুলি আকার পরিবর্তন করছে
দেশের সংসদ ভবন, মানেই একটি গুরুগম্ভীর জায়গা। সেখানে দেশের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের কাজ চলে। এরকম জায়গায় শিশুদের প্রবেশ? এতদিন ছিল নৈব নৈব চ। কিন্তু অবস্থাটা ক্রমশ পাল্টাচ্ছে।
আসলে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমশ এগিয়ে আসছেন মহিলারা। কিন্তু রাজনীতিতে থাকলে কী মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন তাঁরা? বর্তমানের বদলে যাওয়া পৃথিবী কিন্তু মনে করছে, এটা অনৈতিক। দেশ ও পরিবারের মধ্যে কোনও একটা বেছে নিতে হবে - এই ধারণাটা ঠিক নয়। এরকম অবস্থা থাকলে রাজনীতিতে অনেক প্রতিভাবান মহিলাদের হারাতে হবে বিশ্বকে।
তাই একের পর এক দেশে বদলটা আসছে। সংসদে নিদেজের পুঁচকে ছেলে বা মেয়েকে নিয়েই আসার সুযোগ পাচ্ছেন মহিলারা। নিউজিল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্দেন যেমন প্রধানমন্ত্রী পদে বসার দিন কয়েক আগে জানতে পারেন তিনি গর্ভবতী। তা বলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকায়নি।
সন্তানের জন্মের সময়টা আর পাঁচজন মায়ের মতোই কাজ থেকে বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা অল্প কয়েকদিনেরই। তারপর থেকে আবার তিনি সংসদে আসা শুরু করেছেন। আর তাঁর সদ্যজাত? সে তাঁর মায়ের সঙ্গেই সংসদে আসছে, পুঁচকে বয়স থেকেই মায়ের কোলে শুয়ে শুনছে সংসদের উত্তপ্ত বাদানুবাদ।
তবে সংসদ ভবনের সেইসব কর্কশ আলোচনা একটি শিশুর কতক্ষণ ভাল লাগে? তাই তাদের জন্য সংসদ ভবনেই তৈরি হয়েছে খেলার ঘর। সংসদের সুইমিং পুলে নামার অধিকারও দেওয়া হয়েছে তাদের। নিউজিল্যান্ডের সংসদে কিন্তু শুধু আর্দেনই নন, আছেন আরও এক মা। তিনি সেদেশের মহিলা বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী জুলি আন জেন্টার। তিনিও তাঁর কলের সন্তানকে নিয়েই প্রতিদিন আসেন সংসদ ভবনে।
কানাডার সংসদেও মহিলারা শিশুদের নিয়ে আসতে পারেন। কানাডার এক সাংসদকে গত বছর তাঁর শিশুকে স্তনদান করতে করতেই সংসদের বিতর্কে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল। তবে সব জায়গাতেই অবস্থাটা একরকম নয়। ব্রিটেনের হাউস অব কমনস-এর মতো অনেক দেশের সংসদ ভবনেই এখনও বাচ্চা বা শিশুদের প্রবেশাধিকার নেই। তবে তারাও অবস্থাটা পাল্টানোর কথাই ভাবছে।
অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মত দানের সময় দেশের সংসদ মহিলাদের শিশুসহ আসতে অনুমতি দিচ্ছে এরকম ঘটনাও ঘটছে। আমেরিকার সংসদেও এখনও শিশুদের প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে নাসার প্রধান পদে কে ববেন সেই বিষয়ে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে সেনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থকে তাঁর সদ্যজাত কন্যাকে নিয়েই আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
অনেক দেশ আবার অনুসরণ করতে চাইছে সুইস মডেল। সেদেশে সাংসদদের মাতৃত্বের ছুটি দেওয়া হয়। এই সুবিধা পুরুষরাও পান। তবে সংখ্যাধিকের মত রয়েছে সংসদে শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার দিকেই। বদলে যাওয়া পৃথিবীতে এই বদলটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমানে জায়গা করে নিয়েছেন বহু প্রতিভাবান মহিলাই।