পাক-আফগান সীমান্তে গ্রাম ভাগের প্রস্তুতি, ইসলামি জঙ্গি ঠেকাতে চলছে বেড়া দেওয়ার কাজ
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে বার্লিনের প্রাচীরের মতো বিভাজন রেখা। ইসলামি জঙ্গিদের দুদেশের মধ্যে যাতায়াত ঠেকাতেই এই উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে এবার বার্লিনের প্রাচীরের মতো বিভাজন রেখা। ইসলামি জঙ্গিদের দুদেশের মধ্যে যাতায়াত ঠেকাতেই এই উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে।
হাজারো পাস্তুন আদিবাসী বছরের পর বছর কোনও সীমারেখা মানেননি। আলাদা দেশ হলেও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মতো সেখানে ছিল না উঠোনের ওপর দিয়ে কাটাতারের বেড়া। কিন্তু এবার সেটিই হতে চলেছে পাক-আফগান সীমান্তে।
ইসলামি জঙ্গিদের মদত দিলেও, এখন সেই জঙ্গিদের ভয়েই ভীত পাকিস্তান প্রশাসন। যারা কিনা ছড়িয়ে রয়েছে দুদেশেই। জঙ্গিদের মধ্যে যোগাযোগও রয়েছে বিস্তর। তাই এবার সেই জঙ্গিদের যাতায়াতের পথেই বাধা সৃষ্টি করতে চায় পাকিস্তান। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যে ব্রিটিশ যুগে ১৮৯৩ সালে করে দেওয়া ডুরান্ড লাইন বরাবর বেড়া দিতে চায় পাক সরকার।
এই বেড়া দেওয়ার পাকিস্তানি প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছে কাবুল প্রশাসন। গ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়া দুদিককার বাসিন্দাদের অসুবিধায় ফেলবে বলে মনে করছে কাবুল। কেননা শুধুমাত্র সামান্য কয়েকজনের পাসপোর্ট রয়েছে।
পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিম সীমান্তে বালুচিস্তানের চামন জেলায় এইরকমই সাতটি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে কিনা ওই ডুরান্ড লাইন গ্রামকেই বিভক্ত করে দিয়েছে। এরকম আরও গ্রাম রয়েছে আরও উত্তরে ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়ায়।
পাকিস্তান প্রশাসন বালুচিস্তান প্রদেশের এইরকম বিভাজিত গ্রাম থেকে তাদের নাগরিকদের সরানোর কাজ শুরু করেছে।
সীমান্তে দেওয়াল ছিল জার্মানিতে। তা এখনও আছে মেক্সিকোয়। পৃথিবীর একাধিক দেশে এই বর্ডাল ওয়াল থাকলে, তা কেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে থাকবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার কর্পস প্যারামিলিটারি ফোর্সের কমান্ডার কর্নেল মহম্মদ উসমান।
আদিবাসী মানুষগুলোর জানা উচিৎ কোনটা পাকিস্তান আর কোনটা আফগানিস্তান, এমনটাও মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের ওই আধিকারিক।
একদশকেরও বেশি সময় আগে পাকিস্তান একইভাবে বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যদিও সেই সময় ওই চেষ্টা সফল হয়নি।
অন্যদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মেক্সিকোর সঙ্গে তাদের দেশের পুরো অংশেই দেওয়াল দেওয়ার ব্যাপারে সওয়াল করেছেন। হাঙ্গেরির ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান সিরিয়ার রিফিউজি আটকাতে সার্বিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্তে বেড়া দিয়েছেন।
সীমান্তে বেড়ার কথা চিন্তা করেই পাকিস্তান একশোটি নতুন বর্ডার পোস্ট তৈরি করার সিদ্ধান্তের কতা জানিয়েছে। একইসঙ্গে ৩০ হাজার বাড়তি সেনা জওয়ানের পদও তৈরি করা হয়েছে।
পাকিস্তান জানিয়েছে, আমেরিকা আমেরিকার মতো চিন্তা করে কাজ করছে। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের মতো করে চিন্তা করেছে।
গত মে মাসে গ্রাম নিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিরোধে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কাবুল এবং ইসলামাবাদ একে অপরকে জঙ্গি আশ্রয়দাতা বলে অভিযোগ করে।
যদিও কিলি জাহাঙ্গির এবং কিলি লুম্যানের বাসিন্দারা বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের মতে, এতে দুপক্ষের রক্তপাত কমবে। কিন্তু অপর একপক্ষের মতে এতে দুদেশের ব্যবসাবাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হবে।