হাফিজ সঈদকে গ্রেফতার করল পাকিস্তান: এফএটিএফ, ইমরানের মার্কিন সফরের আগে গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপ
ফের আরেকবার পাকিস্তানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন লস্কর-ই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা নেতা হাফিজ সঈদ। কতদিন এই গ্রেফতারির মেয়াদ টিকবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষরা সন্দিহান হলেও ২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গিহানার মুখ্য রূপকার
ফের আরেকবার পাকিস্তানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন লস্কর-ই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা নেতা হাফিজ সঈদ। কতদিন এই গ্রেফতারির মেয়াদ টিকবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষরা সন্দিহান হলেও ২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গিহানার মুখ্য রূপকার এই উগ্রপন্থী নেতার গ্রেফতারি প্রমাণ করেছে যে কতটা চাপে রয়েছে পাকিস্তান এই মুহূর্তে, আন্তর্জাতিক মহলে। হাফিজের এই গ্রেফতারি দু'টি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা প্রয়োজন।
এফএটিএফ-এর কালো তালিকাভুক্তি এড়াতে মরিয়া পাকিস্তান
এক, এফএটিএফ বা ফাইনান্সিয়াল একজন টাস্ক ফোর্স। ২০১২ সালের পর এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় পাকিস্তানে নাম সম্প্রতি ফের আরেকবার উঠে এসেছে। গতবছর জুন মাসে এই ফোর্সের তরফে ইসলামাবাদকে বলা হয়েছে তাদের দেশে সন্ত্রাসবাদকে মদতকারী অর্থের জোগান এবং আর্থিক তছরুপের বিষয়ে সাবধানী হতে। কিন্তু মে ২০১৯ পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও পাকিস্তান সরকার তার মধ্যে প্ৰয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। ফের সময়সীমা বাড়িয়ে অক্টবর করার পরে টাস্ক ফোর্সের তরফ থেকে পাকিস্তানকে বলা হয়েছে এই পর্বেও যদি তারা নিজেদের কাজ না করে দেখাতে পারে, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না এফএটিএফ। ইসলামাবাদের আরেকটি ব্যর্থতা তাদের ফোর্সের কালো তালিকায় ফেলে দিতে পারে।
এফএটিএফ-এর কালো তালিকাভুক্ত হলে পাকিস্তানের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা মার খাবে
সন্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে আর্থিক সাহায্য করার প্রবণতা বন্ধ করার লক্ষেই কাজ করে ৩৯-সদস্য বহুল সংগঠন এফএটিএফ। তারা যদি দেখে যে কোনও দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য জোগানোর পথ বন্ধ করতে পারছে না আইনের দ্বারা, তখন তারা সেই দেশকে ধূসর তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে। যদি সেই দেশ কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যায় তাহলে তা বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পাকিস্তানে একেই আর্থিক দৈন্যদশায় দিন গুজরান হচ্ছে; এমনকি তাদের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেও বাইরে গিয়ে হিসেব করে ব্যয় করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি পাকিস্তান এফএটিএফ-এর কালো তালিকায় চলে যায়, তাহলে তাদের ঋণ পাওয়ার আশা অনেকটাই খর্ব হবে কারণ পৃথিবীর প্রায় সব বড় অর্থনীতিগুলিই এফএটিএফ-এর সদস্য। ধূসর তালিকাভুক্ত হয়েই পাকিস্তানে বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হাফিজকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান এফএটিএফকে এই বার্তা দিতে পারবে যে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে তারা সত্যিই চেষ্টা করছে।
চিন এখন এফএটিএফ-এর পৌরোহিত্যে
এখানে এও উল্লেখ্য যে পয়লা জুলাই থেকে এফএটিএফ-এর পৌরোহিত্য এসেছে পাকিস্তানে পুরোনো বন্ধু চিন কিন্তু তাও পাকিস্তানকে হাফিজকে গ্রেফতার করতেই হয়েছে। কয়েকমাস আগে পাকিস্তান-আশ্রিত আরেক জঙ্গিনেতা মাসুদ আজহারের উপরেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় চিন। অর্থাৎ, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে চিন যে পাকিস্তানে কারবারে কালো পর্দা ঢাকতে আর মরিয়া নয়, তা নিশ্চিত। পাকিস্তানে আশা, অন্তত হাফিজের গ্রেফতারি করিয়ে তারা এফএটিএফ-এর কালো তালিকাভুক্তি থেকে ছাড় পাবে -- চিন, তুরস্ক এবং মালয়েশিয়ার সাহায্যে (গত মাসে এই তিন দেশ পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্তি থেকে পাকিস্তানকে বাঁচিয়েছিল)। যদিও ধূসর তালিকা থেকে নাম সরাতে পাকিস্তানকে অন্তত ১৫টি দেশের সমর্থন জোগাড় করতে হবে।
ইমরান খানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেও এ এক বড় চাল
অন্য যে পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানে হাফিজের গ্রেফতারি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ইমরানের আসন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প অদূর অতীতে পাকিস্তানকে বারবার তুলোধোনা করেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্যে; পাকিস্তানে প্রতি সাহায্যও কমিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। আর তাই তাঁর আমেরিকা যাত্রার ঠিক আগে হাফিজের গ্রেফতারি ইমরানকে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতির করতে সাহায্য করবে। ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনাতে পাকিস্তান বড় ভূমিকা পালন করছে। ওয়াশিংটনের চোখে নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে পারলে ইমরানের তথা পাকিস্তানে কপালে বড় মার্কিন অনুদানের সম্ভাবনাও থাকতে পারে।