থেমে গেল পাক তরুনীর স্বপ্ন! আমেরিকায় ফের বন্দুক আইন বিতর্ক
সাবিনা শেখ নামে এক পাক কিশোরী এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সান্তা ফে সকুলে গুলি চালনার ঘটনায় তিনি নিহত হয়েছেন।
তিনি কূটনীতিক হতে চাইতেন। মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। পাকিস্তানের করাচি থেকে মার্কিন মুলুকে এসেছিলেন পড়াশোনার সূত্রে, এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবে। ভেবেছিলেন পেছনে ফেলে এসেছেন চরমপন্থীদের। এসেছেন সব পেয়েছির দেশে। আর তারপর একদিন দেখলেন তাঁর ক্লাসের মধ্যেই তাঁর এক সহপাঠী গুলি চালাচ্ছে। ঘটনার বিহ্বলতা কাটাতে না কাটাতেই তার গুলি এসে এফোড় ওফোড় করে গিয়ে গেছে তাঁকে। থেমে গেছে তার স্বপ্নের উড়ান। কফিন বন্দী হয়ে এখন অপেক্ষা করছেন দেশে ফেরার। মাটি দেওয়ার জন্য পরিবার অপেক্ষা করছে। এসেছিলেন মার্কিন সংস্কৃতির স্বাদ নিতে, আর গ্রাস হয়ে গেলেন সেদেশের এক জ্বলন্ত সম্স্যার!
তিনি সাবিকা শেখ। বয়স মাত্র সতেরো। টেক্সাসের স্যান্টা ফে হাই স্কুলে গুলি চালানোর ঘটনায় যে ১০ জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। সবে রমজান মাস শুরু হয়েছে। এখনও দিন কুড়ি আমেরিকায় থাকার কথা ছিল তাঁর। তারপর বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তা আর হল না। রবিবার রাতেই এক বিমানে তাঁর কফিন বন্দী দেহ আমেরিকা থেকে পাঠানো হয়েছে করাচির উদ্দেশ্যে।
তবে তার আগে রবিবার হিউস্টনের সাবিরিন মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর শেষকৃত্য। উপস্থিত ছিলেন অনেক মানুষ। কেউ চেনা, কেউ সাবিকার অচেনা। ছিলেন সাবিকার হোস্ট ফ্যামিলিও, অর্থাত আমেরিকায় যাদের বাড়িতে থাকতেন সাবিকা। সেই পরিবারের সকলেও এসেছিলেন তাঁর অন্তেষ্টীতে। মসজিদে মাথা ঢেকে ঢোকাই নিয়ম। ছয় সন্তানকে নিয়ে সেই মহিলা যা শালটি দিয়ে মাথা ঢেকেছিলেন, সেটি সাবিকারই দেওয়া। বিশ্ব মাতৃ দিবসে উপহার দিয়েছিলেন।
সাবিকা একাই নন। তাঁর সঙ্গে প্রাণ গিয়েছে আরও সাত ছাত্র-ছাত্রী ও ২ শিক্ষকের। যা নিয়ে রবিবার সারা দিন শোকস্তব্ধ ছিল টেক্সাসের হিউস্টন এলাকা। প্রত্যেকটি চার্চ-মসজিদে এদিন মৃতদের আত্মার শান্তু কামনা করা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চলেছে একটা বিতর্কও। বিষয়টা মোটেই নতুন নয়। আমেরিকার বন্দুক আইন। একপক্ষ মনে করছে বন্দুক রাখার অভিকার আইনটিই তুলে দেওয়া উচিত। নাহলে কিছুতেই বন্ধ হবে না এই মৃত্যু মিছিল। অন্যদিকে অপর পক্ষের মত নিরাপত্তার খাতিরেই বন্দুক রাখার অনুমতি দেওয়া উচিত। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্কুলে বন্দুক হামলা রুখতে শিক্ষকদের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
প্রত্যেকবার একটা করে ঘটনা ঘটে আর আমেরিকার বন্দুক আইন নিয়ে বিতর্কটা ফের মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু আবার সব থিতিয়ে যায়। আর সাবিকার মতো একেকটা স্বপ্নের সমাধি ঘটে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে তো চলছেই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলেছেন বর্ষিয়ান আবদুল খাতরি। তিনি বলেন, 'আমেরিকায় নিরাপত্তা আছে, প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে - জেনেই সবাই আমেরিকায় আসে। আমি নিজেও একসময় সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমেরিকায়। কিন্তু বন্দুক নিয়ে স্কুলে ঢুকে একের পর এক সহপাঠীকে গুলিতে ঝাঝরা করে দেওয়া, এরকম তো ভারত-পাকিস্তান কোথাও হয় না!'