আমেরিকায় এবার কাজ হারাবেন ভারতীয় গৃহিনীরা! বেকার হওয়ার শঙ্কা অন্তত ১ লক্ষ জনের
কলম্বাসের আবিস্কৃত দেশে চাকরি। বিয়ের পর ওখানেই যেতে হবে। তাই সাত তাড়াতাড়ি চারহাত এক করে পাড়ি দেওয়া সাত-সমুদ্র, তেরো নদী পার করে আমেরিকায়। কিন্তু, সেই বোরিং লাইফ।
কলম্বাসের আবিস্কৃত দেশে চাকরি। বিয়ের পর ওখানেই যেতে হবে। তাই সাততাড়াতাড়ি চারহাত এক করে পাড়ি দেওয়া সাত-সমুদ্র, তেরো নদী পার করে আমেরিকায়। কিন্তু, সেই বোরিং লাইফ। সারাক্ষণ বসে থাকা কতক্ষণে প্রিয় মানুষটা ফিরবে বাড়িতে। কিছুই করার নেই। মনের কোণে আরও এক শঙ্কা বিদেশ-বিভুঁইয়ের এমন বাসে খরচাও তো কম নয়। তাই মনের মানুষটা যখন অফিসে ব্যস্ত তখন যদি একটা কাজ জুটিয়ে নিলে মন্দ নয়। সময়ও কাটবে আবার সংসারে বাড়তি অর্থও আসবে।
এইচ-১বি ভিসা নিয়ে মার্কিন মুলুকে কাজ করাদের স্ত্রী ও স্বামীদের এই মনোভাবকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ওবামা প্রশাসন। সেই কারণে সেই সময় চালু হয়েছিল এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্ট। সংক্ষেপে যাকে বলে 'ইএডি'। এটা বলতে গেলে একটা ওয়ার্ক পারমিট-এর মতোই। এই ফর্মটা ভরাট করলে আমেরিকায় এইচ-১বি ভিসাধাকারীর স্ত্রী বা স্বামী মার্কিন মুলুকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
এইচ-১বি ভিসাধিকারীর স্ত্রী বা স্বামীদের এইচ-৪ ভিসা দেওয়া হয়। এতে মার্কিন মুলুকের কর্মসংস্থানের অনুমতি মেলে না। সেই কারণে ইএডি- চালু করেছিল ওবামা প্রশাসন। কিন্তু, এবার সেই ইএডি তুলে নিতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে অন্তত ১ লক্ষ ভারতীয় যারা এইচ-৪ ভিসায় কাজ করছেন তাঁরা কাজ হারাবেন।
এইচ-৪ ভিসাধিকারী যারা ইএডি পেয়েছেন তারা সাধারণত মার্কিন মুলুকে ছোটখাটো ব্য়াবসা করছেন, অথবা প্রাইভেট টিউশন দেন। এমনকী কেউ কেউ অফিসে অফিসে দেশি-হোম-কুকড খাবার পৌঁছনোর কাজও করেন। অনেকে আবার যোগা সেন্টার খুলে যোগ শেখান। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এইএডি পদ্ধতিকে বন্ধ করে দিলে এঁরা সকলেই কাজ হারাবেন।
ইএডি না থাকলে এইচ-৪ ভিসাধিকারীরা আমেরিকায় সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বরও পান না। ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্ট খুলতে হলে সোশ্য়াল সিকিউরিটি নম্বর বাধ্যতামূলক। এমনকী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে গেলও এইচ-৪ ভিসাধিকারীর কাছে সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকতে হয়।
এর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক আঁন্তেপ্রঁনেদের জন্যও দরজা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। আইইআর-এ প্য়ারোল পদ্ধতিতে মার্কিন মুলুকে স্টার্টআপ সংস্থা খুলতে পারতেন। এই আইইআর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আন্তর্জাতিক মহলের মতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হয়েই ট্রাম্প 'বাই আমেরিকান, হায়ার আমেরিকান' নীতির ঘোষণা করেছিলেন। এর জন্য একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডারেও সই করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নীতির-ই পদক্ষেপে ওবামা জামানার দুই জনপ্রিয় প্রকল্পকে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সম্প্রতি মার্কিন অভিভাবসন দফতর ইউএসসিআইএস-এর ডিরেক্টর এল ফ্রান্সিস সিসানা এক চিঠি দেন ইউ এস সিনেট জুডিসিয়ারি কমিটি-র চেয়ারপার্সন সিনেটর চার্লস গ্রাসলি-কে। সেই চিঠিতে সিসানা অভিভাবসন পদ্ধতিকে কঠোর করা এবং বিশেষ করে নন-ইমিগ্রেন্ট ওয়ার্ক প্রোগাম-এ বেশকিছু নিয়ম পরিবর্তনের উল্লেখ করেন। আর তাতেই স্থান পেয়েছে ইএডি ও আইইআর তুলে দেওয়ার মতো বিষয়। যদিও, এপ্রিলের শুরুতেই পাঠানো মার্কিন অভিভাবসন দফতরের এই চিঠি-তে একটা আশার আলো রয়েছে। কারণ ইএডি ও আইইআর তুলে দেওয়া নিয়ে জনমত সংগ্রহ করা হবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। জুন মাসে এই নিয়ে একটা খসড়া চূড়ান্ত করবে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে হতে চলতি বছরের শেষ অথবা নতুন বছর শুরু হয়ে যাবে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইএডি এবং আইইআর তুলে দিলে মার্কিন সংস্থাগুলিতে বিশ্বের সেরা প্রতিভাবানরা কাজ করতে কতটা আগ্রহী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গুগল, অ্য়াপেল, মাইক্রোসফট, কোয়ালকোম, ওরাকল-এর মতো সংস্থাগুলি- প্রচুরমানে ভারতীয় প্রযুক্তিকর্মীদের নিয়ে কাজ করছে। এই সব সংস্থার শীর্ষস্থানগুলিতেও রয়েছেন বহু ভারতীয়।