এনআরসি: আসামের বন্দিশিবিরে 'বাংলাদেশী' বলে চিহ্নিত করা আরো এক জনের মৃত্যু, মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেছে পরিবার
এনআরসি: আসামের বন্দিশিবিরে 'বাংলাদেশী' বলে চিহ্নিত করা আরো এক জনের মৃত্যু, মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেছে পরিবার
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে আবার এক ব্যক্তি বন্দীশিবিরে মারা গেছেন, যাকে বিদেশী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
মৃতের পরিবার বলছে তাকে যখন বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তখন মৃতদেহ তারা নেবেন না।
ফালু দাস নামের ৭২ বছরের ওই ব্যক্তিকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি গ্রেপ্তার করে গোয়ালপাড়ার বন্দীশিবিরে পাঠানো হয়েছিল।
দিনকয়েক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানেই মারা যান তিনি।
নলবাড়ি জেলার প্রত্যন্ত এলাকা সুতিমারি গ্রামে তার ছেলে মেয়ের কাছে খবর পাঠানো হলে তারা দেহ নিতে অস্বীকার করেন।
মি. দাসের বড় ছেলে ভগবান দাস বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "বাবাকে যেহেতু বাংলাদেশী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাহলে দেহ নিয়ে এসে কী করব? বাংলাদেশেই যাক দেহ।"
যেহেতু ফালু দাসকে ট্রাইবুনাল 'বিদেশী' বলে ঘোষণা করেছিল, তাই নিয়ম অনুযায়ী তার ছেলে মেয়েদের কারও নামই নাগরিকপঞ্জীতে ওঠেনি।
প্রশাসনের কাছে পরিবারটির দাবী - যতক্ষণ না তাদের সবার নাম এন আর সি-তে তোলা হচ্ছে এবং ভারতীয় বলে ঘোষণা না করা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা বাবার মৃতদেহ আনবেন না।
তাদের দাবী ১৯৫১ সালের প্রথমনাগরিক পঞ্জীতে যে তার বাবার নাম ছিল, এছাড়াও তারা যে ভারতীয় , সেই তথ্য প্রমাণ হিসাবে ১৯৭১ সালের আগের অনেক নথিই তারা জমা দিয়েছিলেন।
'বাবার মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠান, আমরা নেব না'
পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা করছে মানুষ
শনিবার ওই পরিবারের কাছে গিয়েছিল বাঙালী নেতাদের একটি দল।
তাদের মধ্যেই ছিলেন সারা আসাম বাঙালী ছাত্র যুব ফেডারেশনের বাকসা জেলার নেতা মদন সাহা।
তিনি বলছিলেন, "ফালু দাসের বাবার নাম ছিল ভুলু রাজবংশী। অনেকের মতোই পদবী বদল করেছিলেন ফালু দাস। সেখানেই সমস্যাটা হয়েছে। যদিও ১৯৫১ সালের প্রথম এনআরসি বা ৬৬ সালের ভোটার লিস্টের সার্টিফায়েড কপি সবই দেখলাম আমরা। কিন্তু ট্রাইবুনালে সেগুলো গ্রাহ্য করেনি। সেজন্যই বন্দী শিবিরে এভাবে মারা যেতে হল তাকে।"
প্রশাসন চেষ্টা করছে পরিবারটিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দেহ নিতে রাজী করাতে। নলবাড়ি জেলার ডেপুটি কমিশনার ভরত ভূষণ দেব চৌধুরী বলছিলেন পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতে তিনি নিজে দুবার গিয়েছিলেন।
মি. দেব চৌধুরীর কথায়, "তারা তিনটি দাবী করেছে - সরকারকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে পরিবারের প্রত্যেকের নাম এনআরসি-তে তুলে দেওয়া হবে, দ্বিতীয়ত, পরিবারের কাউকে বিদেশী বলে আটক করা হবে না আর তৃতীয়ত কিছু আর্থিক সাহায্যের কথা জানিয়েছে"।
"সমস্যা হল এনআরসিতে নাম তোলা বা বাদ দেওয়ার অধিকার প্রশাসনের নেই। এটি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারীতে হয়েছে আর এনআরসিতে নাম না থাকা কাউকে যে এখনই গ্রেপ্তার করা হবে না সেই আশ্বাস তো আগেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলো তো লিখিতভাবে আমরা দিতে পারি না। তবে আর্থিক সাহায্য করা যেতেই পারে," বলছিলেন মি. দেবচৌধুরী।
এর আগে শোনিতপুর জেলার বাসিন্দা দুলাল পাল নামের এক ব্যক্তিও একই ভাবে বিদেশী বলে চিহ্নিত হয়ে বন্দী থাকাকালীন মারা যান।
তার পরিবার বলেছিল তাকে যেহেতু বাংলাদেশী বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাই মৃতদেহও সেদেশেই পাঠিয়ে দেওয়া হোক।
মৃত্যুর দশদিন পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়ালের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে অবশ্য মি. পালের দেহ নিয়ে সৎকার করেছে ওই পরিবারটি।
https://www.youtube.com/watch?v=j4NAvNcBM5s