উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এবার রাশিয়াতে; বহুমুখী আন্তর্জাতিক রাজনীতির লাভ তুলতে তৎপর এই একনায়কও
গতবছরের শুরুর দিক থেকেই আস্তে আস্তে বহির্মুখী হতে শুরু করেছিলেন তিনি। চিনে বেশ কয়েকবার পা রাখার পর উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও দু'বার দেখা
গতবছরের শুরুর দিক থেকেই আস্তে আস্তে বহির্মুখী হতে শুরু করেছিলেন তিনি। চিনে বেশ কয়েকবার পা রাখার পর উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও দু'বার দেখা করেন গত বছর জুনে সিঙ্গাপুরে এবং এবছর ফেব্রুয়ারিতে, ভিয়েতনামে। তবে, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তিস্থাপনের প্রক্রিয়া কিম ও ট্রাম্পের এই দুটি শীর্ষ সম্মেলনের ফলে বেশিদূর এগিয়েছে, তা বলা যাবে না। হ্যানয়ের সম্মেলনটি তো মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় কারণ দুই পক্ষ উত্তর কোরিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে পিয়ং ইয়ং-এর দাবি মানতে নারাজ ছিল ওয়াশিংটন।
ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে কিম সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রগতিও একবার দেখে নেন; লক্ষ্য তাঁর নিজের দেশের উন্নতিতে এই দেশগুলির উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেওয়া।
কিম এবারে ভ্লাদিমির পুতিনের দর্শনপ্রার্থী
চিন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মোলাকাতের পরে কিম এবারে পৌঁছেছেন রাশিয়াতে। ভিয়েতনামের মতো এবারেও তিনি পাড়ি দিয়েছেন ট্রেনে এবং রুশ সংবাদমাধ্যমের মতে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরমাণু সম্পর্কিত আলোচনা যখন বিশ বাওঁ জলে, তখন কিমের লক্ষ্য ক্রেমলিনের সমর্থন পাওয়া। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজের মিত্রের সংখ্যা বাড়াতে এখন তৎপর উত্তর কোরিয়া। মস্কো টাইমস-এর খবর অনুযায়ী, কিম নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে প্রতিপন্ন করতে তিনি এখন বিশ্বের অন্যান্য প্রথম সারির নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে আকাঙ্খী।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসার পরে মধ্য ত্রিশের এই নেতা দীর্ঘদিন উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। পিয়ং ইয়ং-এর একের পর এক পরমাণু পরীক্ষার জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পূর্ব এশিয়ায় তাদের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান তো বটেই, এমনকী উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক বন্ধু চিনও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ধমকি, হুমকি, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা অস্ত্র মজুদ ইত্যাদি করেও কিমকে বাগে আনতে ব্যর্থ হয় পশ্চিম বিশ্ব। পরিস্থিতি ক্রমে যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন কিম স্বয়ং অবস্থানে বদল আনেন; আচমকা শান্তির কথা বলতে শুরু করেন। যদিও আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞার চাপে হাঁসফাঁস করতে থাকে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিকে কিছুটা চাপমুক্ত করতেই কিমের এই ভোলবদল এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্যেই তাঁর মুখে শান্তির বুলি। আদতে কিম নিজের পরমাণু শক্তির আকাঙ্খা থেকে কতটা সরে এসেছেন , সে বিষয়ে সন্দেহ জ্ঞাপন করেন তাঁরা।
আলোচনার নীতিতে জোর দিচ্ছেন কিম
কিমের এই শান্তি প্রক্রিয়ার আসল কারণ কতটা সত্যি তা নিয়ে জল্পনা থাকতেই পারে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে তিনি এখন উত্তর কোরিয়ার প্রথাগত একা থাকার নীতি থেকে সরে আসতে এবং পিয়ং ইয়ঙের বিদেশনীতিতে আরও বৈচিত্র্য আনতে আগ্রহী কারণ তিনি জানেন আজকের বহুমুখী বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়লেও অন্যত্র মিত্র খুঁজে পাওয়ার আশা রয়েছে; যেমনটি দেখা গিয়েছে পাকিস্তান, সিরিয়া এবং ইরানের ক্ষেত্রে। আর আগ্রাসী অবস্থান নিয়ে যে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না, তাও কিম জানেন তাই, এবারে তিনি আলোচনার রাস্তায় জোর দিচ্ছেন।
রাশিয়া ইতিমধ্যেই উত্তর কোরিয়ার প্রশংসা করেছে
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বলাদিভস্তক বন্দর শহরে কিমের আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা হওয়ার কথা কিন্তু রাশিয়া ইতিমধ্যেই কিমের বন্দনায় মেতেছে।
ক্রেমলিনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে পুতিন-কিম-এর আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ তো উঠবেই, পাশাপাশি এও বলা হয়েছে যে করিও উপদ্বীপে শান্তিস্থাপনের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার ভূমিকা যথেষ্ঠ আশাপ্রদ। রাশিয়া এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে যে কোনও সাহায্য করতে আগ্রহী। মস্কোর তরফ থেকে এই আশ্বাস যে কিমকে যথেষ্ঠ মনোবল যোগাবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
রুশ সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে রাশিয়া এই মর্মে এক দশকেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ছয়-দেশীয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, রাশিয়া, জাপান এবং দুই কোরিয়া) আলোচনা পুনরায় শুরু করার প্রস্তাব রাখতে পারে যদিও ট্রাম্পের মতো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার বিরোধী রাষ্ট্রনেতা তাতে কতটা রাজি হবেন তা সময়ই বলবে।