সাংবাদিকরা সাক্ষি, পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংসই করলেন কিম জং উন
বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে দাবি করেছে ঘটনার সাক্ষি থাকা সংবাদ মাধ্যম।
উত্তর কোরিয়া তাদের একমাত্র পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র পুঙ্গেইরি কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় উপস্থিত ছিলেন বাশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকও। তাঁরা দাবি করেছেন ওই কেন্দ্রটিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং পরীক্ষাকেন্দ্রটির প্রবেশপথটিও ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
গত ২৭ এপ্রিল এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসেডন্ট মুন জায়ে ইন। সেই বৈঠকে কিম কথা দেন কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করবেন। রাজি হন আমেরিকার সঙ্গে শান্তি বৈঠকে বসতেও। তার পরদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইয়োন ইয়াং চ্যান জানিয়েছিলেন, কিম তাদের বলেছেন মে মাসে পরমাণু পরীক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেবে উত্তর কোরিয়া। সেসময় এও বলা হয়েছিল কাজটি করা হবে বেশ কয়েকটি দেশের সাংবাদিকদের সাক্ষি রেখেই। সেই মতো আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল পিয়ংইয়ং থেকে।
বৃহস্পতিবার পরমাণু কেন্দ্রটি ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া। পারমাণবিক কেন্দ্রের ধ্বংসের সাক্ষি থাকা সংবাদবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধি বলেছেন, 'আমরা একটা পাহাড়ের ওপরে ছিলাম। মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই বিস্ফোরণটা ঘটে। প্রথমে কাউন্ট ডাউন চলছিল, তারপর প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তারপর ধূলিকণা উড়ে আসছিল, গায়ে তাপ লাগছিল।'
Sky News has witnessed a huge explosion during what North Korea claims to be the destruction of a nuclear test https://t.co/IidrPil2CQ
— Sky News (@SkyNews) May 24, 2018
তাদের দাবি, পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই পরীক্ষা কেন্দ্র ধ্বংসের এমন উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ফলে ১২ জুন সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকের আগে নিজেদের পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের প্রতিশ্রুতি পূরণ করলো পিয়ংইয়ং। যদিও ওই বৈঠক আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে দুই পক্ষই সংশয়ে রয়েছে।
North Korea dismantles underground nuclear test facilities: Report https://t.co/qlg83Maw2r pic.twitter.com/2iCvDYoCH7
— Channel NewsAsia (@ChannelNewsAsia) May 24, 2018
এ সপ্তাহের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, আলোচনার জন্য উত্তর কোরিয়াকে অবশ্যই শর্ত পূরণ করতে হবে। তা না হলে বৈঠক আরও পেছানো হতে পারে। খবর পাওয়া যাচ্ছে পুঙ্গেইরি কেন্দ্র ধ্বংসের খবর পাওয়ার পরও ট্রাম্প বৈঠকে বসতে নারাজ।
North Korea dismantles nuclear test site ahead of US summit https://t.co/wMlm9rhwIy pic.twitter.com/iuyYQp9drg
— Yahoo News (@YahooNews) May 24, 2018
উত্তর কোরিয়ার ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার চোয়ে সোন হুই বৃহস্পতিবার (২৪ মে) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিন, 'দুই নেতার বৈঠকের বিষয়টি এখন পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠক কক্ষে মিলিত হবে নাকি পারমাণবিক শক্তিপ্রদর্শনে আমাদের মোকাবিলা করবে তা পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে। তারা আমাদের সঙ্গে বসতে না চাইলে আমরা আমেরিকার সামনে হাতজোড় করবো না কিংবা তবে তাদেরকে বোঝানোর ঝামেলাটুকুও নেব না।'
উল্লেখ্য, পুঙ্গেইরি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রটিই উত্তর কোরিয়ার মূল পারমাণবিক কেন্দ্র মনে করা হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় এ মান্টাপ পর্বতের নিচে খনন করা সুড়ঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হত। ২০০৬ সাল থেকে সেখানে এযাবত ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কয়েক দফা ভূমিকম্প হয় ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে। চিনা ভূতাত্ত্বিকরা দাবি করেছিলেন এর ফলে পর্বতের অভ্যন্তরীণ একটি অংশ ধসে গেছে।