ভারতে মোদীর সঙ্গে দৌত্যে শিনজো আবে, তারইমধ্যে জাপানে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ফেলল উত্তর কোরিয়া
জাপানের উপর ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ল উত্তর কোরিয়া। এর জেরে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে টোকিও। বারবার এমন চলতে থাকলে উত্তর কোরিয়ার উপরে অবরোধের নিষেধাজ্ঞা আরও বেশি করে বলবৎ হবে বলেও জানিয়েছেন জাপানের প্রেস
এক সপ্তাহের মধ্যে জাপানের উপর দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। আর এবারও এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ল উত্তর কোরিয়া। গত ২৯ অগাস্ট উত্তর কোরিয়া জাপানের সীমানায় ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছিল। সেই ঘটনার উত্তেজনা কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার রাতে ফের একবার জাপানের সীমানায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করল উত্তর কোরিয়া।
জানা গিয়েছে, ৪৭৮ কিলোমিটার উপর থেকে ৩৭০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের হোকাইডো দ্বীপের সাগরে এসে পড়ে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনায়ক কিম জং-এর নির্দেশেই এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার রাজধানি পিয়ং ইয়ং-এর উত্তরে সুনান এয়ারফিল্ড থেকে এই মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
এই মুহূর্তে ভারত সফরে আছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। জানান, উত্তর কোরিয়ার এই উস্কানিমূলক হামলাকে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। উত্তর কোরিয়া বারবার যদি এমন ঘটনা ঘটাতে থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল হবে না বলেও মন্তব্য করেন শিনজো আবে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন জাপানের প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। রাতেই তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে হামলার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, উত্তর কোরিয়া যতই তাদের দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার পরিচয় দেবে ততই তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধ এবং অন্যান্য অবরোধের বিধি আরও বেশি করে বলবৎ করা হবে।
মার্কিন বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসনও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেন এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরোধের মাত্রা আরও বাড়ানোর পক্ষে সওয়ান করেন। উত্তর কোরিয়ার এত বাড়-বাড়ন্তের জন্য ঘুরিয়ে চিন এবং রাশিয়ার দিকেও আঙুল তোলেন তিনি। তিনি বলেন, চিন উত্তর কোরিয়াকে তেল দিয়ে সাহায্য করে আর রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের একটা বড় দায় বহন করে। কিন্তু, উত্তর কোরিয়ার দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণে চিন ও রাশিয়ার কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন টিলারসন।
জানা গিয়েছে দু'টি ক্ষেপণাস্ত্রই উত্তর হক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে। কিন্তু, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে চারিদিকে সাইরেন বাজতে শুরু করে। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বহু মানুষ বাইরেও বেরিয়ে আসেন।
গত ২৯ অগাস্ট উত্তর কোরিয়া জাপানে যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল তা ২৭০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিল, আর এবারের দু'টি ক্ষেপণাস্ত্র ৩৭০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে এর হামলার ধরণ এবং গতিবেগ দেখে মনে করা হচ্ছে এটি ব্যালেস্টিক মিসাইল, তবে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল-ও হতে পারে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়া এখন আস্তে আস্তে তাদের ইন্টার ব্যালেস্টিক মিসাইল ও ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল-এর পরীক্ষা-নিরিক্ষা কমিয়ে আনছে। অন্যান্ত ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিধর দেশগুলিও এই পর্যায়ে ঘন-ঘন মিসাইল ছুঁড়ে নিজের শক্তির প্রমাণ দিতে চায়। উত্তর কোরিয়াও তেমনই করছে বলে আপাতত দৃষ্টিতে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।