For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

শব্দ দূষণ: কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে শব্দের মাত্রা কেমন হবে

বাংলাদেশে শব্দ দূষণের সমস্যা তীব্র মাত্রায় বিদ্যমান। দূষণ নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা থাকলেও সেগুলো না মানার কারণে দিন দিন দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

  • By Bbc Bengali

বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণে অনেক মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে উঠে আসে সাম্প্রতিক এক জরিপে
Getty Images
বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণে অনেক মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে উঠে আসে সাম্প্রতিক এক জরিপে

বাংলাদেশে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় স্পষ্ট বলা আছে কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে, কি ধরনের শব্দ দূষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস রয়েছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা কোন ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম রয়েছে তা মানা হচ্ছে না।

কিন্তু বাংলাদেশে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে বিধিমালা রয়েছে সেখানে বিস্তারিত বলা আছে কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে, কোন ধরনের শব্দের মাত্রা কেমন হবে। আর তা না মেনে চললে সাজার বিধানও রয়েছে।

শব্দের মাত্রা যেমন হতে হবে

বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল।

হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।

দিনে রাতে নির্মাণকাজ

ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায় দিন নেই রাত নেই পাইলিং-এর কাজ, ইট ভাঙার যন্ত্র, সিমেন্ট মিক্সারের যথেচ্ছ ব্যাবহার হচ্ছে। সময় সম্পর্কে কোন বালাই নেই।

বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা রয়েছে। তাতে বলা আছে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত নির্মাণকাজের এসব যন্ত্র চালানো যাবে না।

আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের জন্য ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ঢাকা শহরে আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা বলে কিছু আসলে নেই।

অন্তত বড় শহরগুলোতে অভিজ্ঞতা হল মধ্যরাত এমনকি সারা রাত জুড়ে নির্মাণকাজ চলে। কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে কিনা, শিশুদের পড়াশুনার ক্ষতি, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কষ্ট কোন কিছুই অসময়ে নির্মাণ কাজ থামাতে পারে না।

আবদ্ধ কোন স্থানে শব্দ করলে শব্দ যাতে বাইরে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ভবনে কোন ধরনের নতুন কাজ, ড্রিল মেশিনের, অফিসের ডেকোরেশনে নিয়মিতই ভঙ্গ হচ্ছে এই নিয়ম।

আরো পড়তে পারেন:

আগামীর শহরে স্থপতিরা কীভাবে শব্দ দূষণ ঠেকাবেন?

বধির হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশের শব্দ দূষণ

'শুধু বাজি কেন, আজানেও তো শব্দ দূষণ হয়'

মাইক ও লাউড স্পিকারের ব্যবহার

বাংলাদেশে মাইকের ব্যাবহার খুবই জনপ্রিয়। বেশ কিছুদিন যাবত লাউড স্পিকারও ব্যবহার হচ্ছে।

রাজনৈতিক সভা থেকে শুরু করে বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিকনিক সকল ক্ষেত্রে এর কানফাটানো শব্দ চলে।

তবে আইনে শর্ত সাপেক্ষে এর অনুমতিও রয়েছে।

খোলা জায়গায় বিয়ে, খেলাধুলা, কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোন ধরনের সভা, মেলা, যাত্রাগান ইত্যাদির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা অতিক্রম করে - এমন যন্ত্র ব্যাবহার করা যাবে।

তবে তার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় এই শব্দ করা যাবে না এবং রাত দশটার মধ্যে এসব অনুষ্ঠান অবশ্যই শেষ করে ফেলতে হবে।

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না।

পিকনিকের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত স্থানে মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে। তবে সকাল নটা থেকে বিকেল পাঁচটার পর্যন্ত।

এছাড়া ফেরার পথে এগুলো বাজানো যাবে না। আর পিকনিক আয়োজন করতে হবে আবাসিক এলাকা থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দুরে।

গাড়ির হর্নে রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে গেছে ঢাকায়।
Getty Images
গাড়ির হর্নে রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে গেছে ঢাকায়।

হর্ন বাজানো

হর্ন বাজানো সম্ভবত বাংলাদেশে গাড়ি চালকদের বড় বদভ্যাস। ট্রাফিক সিগনাল ও জ্যামে আটকে থাকার সময় সামনে এগুনো যাবে না জেনেও হর্ন বাজান তারা।

সামনে কেউ ধীর গতিতে চললে, পথচারীকে উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত হর্ন বাজানো হয়।

যদিও বিধিমালায় বলা আছে কোন ধরনের মোটরযানে শব্দের মান অতিক্রমকারী হর্ন ব্যাবহার করা যাবে না।

নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু গাড়ির হর্নে রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে গেছে ঢাকায়।

কয়েক বছর আগে পরিবেশ অধিদফতরের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় শব্দের মাত্রা ১৩০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে গেছে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি। আর শব্দের মাত্রা এখন তার থেকে একটুও কমেছে সেটা বলার কোন উপায় নেই।

শাস্তির যেসব বিধান রয়েছে

আইন ভঙ্গ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শব্দের উৎস যন্ত্রপাতি জব্দ করতে পারবেন। বিধিমালায় যেসব উল্লেখ করা রয়েছে তা পালনে ব্যর্থতাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে।

শব্দ দূষণে দোষী হিসেবে প্রমাণিত হলে প্রথম অপরাধের জন্য একমাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু ধরনের দণ্ডই প্রদান করার বিধান রয়েছে।

দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার কথা বলা রয়েছে।

আপনি শব্দ দূষণের শিকার এমন মনে হলে টেলিফোনে, লিখিত অথবা মৌখিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন।

পরিবেশ বিষয়ে আইনজীবীদের সংস্থা বেলার নির্বাহী কমিটির সদস্য বাহ্‌রীন খান বলছেন, "বাংলাদেশে যে পরিবেশ আদালত রয়েছে তাতে আছে তিন ধরনের আদালত। যার একটি হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। শুধুমাত্র এই কোর্টের মাধ্যমেই একটু কিছুর করার সুযোগ আমি দেখি। আর বাকি যে দুটো আদালত সেখানে শব্দ দূষণের অভিযোগে কোন মামলার নজির আমি এখনো পর্যন্ত দেখিনি।"

কাছাকাছি সময়ে শব্দ দূষণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।

আইন মানায় অনীহা কেন?

বাহ্‌রীন খান বলছেন, "মানুষের আইন মানার অনীহা তখন তৈরি হয় যখন সে দেখে যে অপরাধ করলে, যেমন রাতের বেলা নির্মাণ কাজ করলে কোন কিছু হয় না। আইন প্রয়োগ না হওয়াটা যখন সমাজের মানুষ দেখতে পায় তখন তারা শব্দ দূষণ বা অন্য কোন অন্যায় করাটা স্বাভাবিক মনে করে।"

একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "যেমন ঢাকায় ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে যখন কেউ প্রবেশ করে, সকল গাড়ির চালক কিন্তু সব নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাইরে গিয়ে একই বিষয় মেনে চলি না। কেন করি না?"

"কারণ ক্যান্টনমেন্টে এলাকায় কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ হয় বলে মানুষের মধ্যে ভীতিটা তৈরি হয়েছে।"

অন্যের সমস্যায় সম্মানের অভাব

বাংলাদেশে শব্দ দূষণের জন্য রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে, শিল্পপতি সকলেই কমবেশি দায়ী বলে মনে করেন শব্দ দূষণ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এরকম সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মতিন।

তিনি বলছেন, "অন্যের সমস্যার প্রতি আমাদের সম্মানের মারাত্মক অভাব রয়েছে। অন্যের সমস্যাকে সম্মান না করার কারণে একটি ছোট সমস্যা বড় সমস্যায় রূপ নিতে পারে সেটি বোঝা, আমাদের নাগরিকদের দায়িত্বশীলতার বোধ কম রয়েছে বলে আমি মনে করি। মানুষ চাইলেই সবকিছু পরিবর্তন করতে পারে।"

তিনি মনে করেন, "সমাজের ড্রাইভিং সিটে রয়েছেন রাজনীতিবিদরা। আমার মতে তারাই এরকম সংস্কৃতি তৈরির জন্য দায়ী। সমাজের উপরের দিকের লোক, যারা শিল্পপতি, ধনীব্যক্তি, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক দিয়ে যারা ক্ষমতাশালী তারা যখন এধরনের শব্দ দূষণ ও পরিবেশের মতো বিষয়কে অগ্রাহ্য করেন তখন সাধারণ মানুষও সেটিই অনুসরণ করে।"

শব্দ দূষণ শরীরের যেসব ক্ষতি করে

লম্বা সময় অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকার কারণে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কান। নাক কান গলার রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মইনুল হাফিজ বলছেন, অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে দীর্ঘ দিন কাটালে শ্রবণ শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলছেন, "অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের নার্ভ ও রিসেপ্টর সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণ শক্তি হারাতে থাকে। কত ডেসিবল শব্দে আপনি কতটুকু সময় কাটাচ্ছেন তার উপর বিষয়টি নির্ভর করে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সাথেই সাথে কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোন ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে তাহলে তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।"

তিনি বলছেন, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০'র উপরে গেলেই ক্ষতি শুরু হয়।

বছর কয়েক আগে পরিবেশ অধিদফতরের করা এক জরিপে উঠে এসেছে যে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে।

English summary
Noise pollution: What will be the noise level in any area, at any time of the day
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X