লেবাননের বেইরুটে বিস্ফোরণের মূলে থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মালিক কে?
৪ অগাস্ট, ভারতীয় সময় রাত সাড়ে নয়টার সময় জোরালো বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লেবাননের রাজধানী বেইরুট। দু'দুবার বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৬০ জন নিহত৷ আহত কমপক্ষে ৫০০০ জন। লেবাননের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের জন্য যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দুষছেন, সেটি আসলে লেবাননের নয়, বরং রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে করে লেবাননে পৌঁছেছিল।

শহরের কেন্দ্রস্থলের এত কাছে কেন ছিল এই পণ্য?
লেবানন সরকার বেইরুট বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য বন্দরের গুদামঘরে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুতে আগুন ধরে যাওয়াকে দায়ী করেছে। এত বিশাল পরিমাণ ভয়ানক দাহ্য পদার্থ ছয় বছরের ওপর শহরের এত কাছে কেন ছিল? কোনও নিরাপদ ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে একটি গুদামঘরে কীভাবে রেখে দেয়া হল এই পদার্থ? তা নিয়ে দেশটির জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। তারা এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না। আরও বড় প্রশ্ন এই বিস্ফোরক পদার্থের মালিক কে?

২০১৩ সালে রাশিয়ান জাহাজে আসে এই পণ্য
জানা যাচ্ছে যে মলডোভিয়ান পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি রোসাস ২০১৩ সালের নভেম্বরে ঠিক ওই পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে বেইরুটে এসেছিল। রাশিয়ার মালিকানাধীন জাহাজটি জর্জিয়ার বাটুমি থেকে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। সেটির গন্তব্য ছিল মোজাম্বিকের বেইরা। জাহাজটিতে ছিল ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।

ত্রুটি থাকায় লেবাননে আটকে পড়ে জাহাজটি
পূর্ব ভূমধ্যসাগর দিয়ে যাওয়ার সময় রোসাস জাহাজটিতে কিছু 'কারিগরি ত্রুটি' ধরা পড়ে এবং জাহাজটি বেইরুট বন্দরে থামতে বাধ্য হয়। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে জাহাজ শিল্প সংক্রান্ত ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনে। এটি শিপিংঅ্যারেস্টেডডটকম নামে একটি নিউজলেটারে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন লিখেছিলেন জাহাজের কর্মীদের পক্ষের লেবানিজ আইনজীবীরা।

জাহাজটির আর গন্তব্যে ফেরা হয়নি
জাহাজটির আর গন্তব্যে ফেরা হয়নি। অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিরোধের কারণে যে রুশ ব্যবসায়ী জাহাজটি লিজ নিয়েছিলেন তিনি চুক্তি বাতিল করেন। রোসাস-এর মালিক জাহাজটি সেখানে পরিত্যাগ করেন। জাহাজের ভেতর তখনও যেসব নাবিক ও কর্মী ছিলেন তাদের রসদ ও খাবার ফুরিয়ে আসছিল। তারা বেইরুটে জরুরিকালীন বিচারকের কাছে আবেদন করেন, যাতে ওই তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। মামলায় ক্রু পক্ষের আইনজীবীরা বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেন, ওই জাহাজে যে রাসায়নিক রয়েছে তা খুবই ‘বিপজ্জনক' প্রকৃতির এবং ক্রুরা জাহাজে ঝুঁকির মধ্যে থাকছেন।

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মালি কে?
বিচারক শেষ পর্যন্ত ক্রুদের জাহাজ থেকে নামার অনুমতি দেন এবং ২০১৪ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট চলে যায় ১২ নম্বর ওয়্যারহাউজে। এরপর এই মাল নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয় হয়নি, কেউই মাথা ঘামায়নি। তবে এই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের আসল মালিক কে? এই তথ্য কারোর জানা নেই।

এই পণ্য কে অর্ডার দিয়েছিল?
যেই আফ্রিকান কোম্পানি এই পদার্থের অর্ডার দিয়েছিল, তাদের দাবি, তারা এই অর্ডারের টাকা দেননি। তাই এটা তাদের না। এমনকি জাহাজের ক্যাপ্টেনও জানেন না এই জিনিসগুলির মালিক কে ছিল। বিপজ্জনক এই পদার্থের গুদাম নিরাপদে কেন রাখা হল না? এর জন্য দায়ী কে? লেবাননবাসী সে প্রশ্নের জবাব চায়।

জানুয়ারিতেই তিব্বতে ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে লাদাখ আক্রমণের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছিল চিন!