For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

নিপাহ্‌ ভাইরাস: খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

  • By Bbc Bengali

খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।
Getty Images
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে ৫ থেকে ৬ লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:

রোজায় বাংলাদেশে খেজুর কেন এতো জনপ্রিয়?

'মক্কা মদিনা আক্রান্ত হলে সৈন্য পাঠাবে বাংলাদেশ'

সূর্যডিম: বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে

খেজুরের রস আহরণ।
Getty Images
খেজুরের রস আহরণ।

নিপাহ্‌ ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিপাহ্‌ ভাইরাস এক ধরণের 'জুনোটিক ভাইরাস' অর্থাৎ এই ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। পরে সেটি মানুষে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

বিশ্বে প্রথম নিপাহ্‌ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় শূকর খামারিদের মধ্যে। পরবর্তীতে এই ভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হয় ২০০১ সালে।

পরে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান - আসিডিডিআর'বি আক্রান্ত এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয় যে, বাদুড়ই নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রসে ছড়িয়ে দিয়েছে। খেজুরের রসের হাঁড়িতে বাদুড়ের মল লেগে থাকতে দেখা যায়।

আইইডিসিআর'বির তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে ৩০৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৭০%।

এখন পর্যন্ত নিপাহ্‌র সংক্রমণ নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের ৩১টি জেলায় দেখা গেছে।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। এক পর্যায়ে খিচুঁনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়।

সাধারণত গাছিরা খেজুর গাছে রস সংগ্রহের কলসি ঝোলান বেলা গড়ানোর পরে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে। সারারাত রস নিঃসরিত হয়। সেখানে কীট পতঙ্গসহ নানা ধরনের পাখি, বিশেষ করে রাতের বেলা নিশাচর প্রাণী বাদুড় রস পান করতে আসে।

বাদুড় যখন খেজুরের রসে মুখ দেয়। তখন তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা এমনকি তাদের মলমূত্র খেজুরের রসের সাথে মিশে যায়।

এই দূষিত রস কাঁচা অবস্থায় খেলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।

এর ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়া নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

খেজুরের রস ফুটিয়ে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
Getty Images
খেজুরের রস ফুটিয়ে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

খেজুরের রস খেতে সতর্কতা:

নিপাহ্‌ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কোন টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা নেই। এ কারণে খেজুরের রস খাওয়া বন্ধ করে দেবেন, বিষয়টা তা নয়, এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক হলেই হবে।

প্রথমত রস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে দ্রুত রস বিতরণ করার এবং ঢেকে রাখার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ভাইরাস থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রধান উপায় হল গাছগুলোর রস সংগ্রহের জায়গায় প্রতিরক্ষামূলক আবরণ বা স্যাপ স্কার্ট ব্যবহার করা, যেন বাদুড় এর সংস্পর্শে আসতে না পারে।

স্যাপ স্কার্ট হল, বাঁশ, কাঠ, ধইঞ্চা, পাটের খড়ি বা পলিথিন দিয়ে বানানো বেড়া। যেটা রসের নিঃসরণের চোঙের মাথা থেকে কলসির মুখ পর্যন্ত পুরোটা গাছের সাথে বেঁধে ঢেকে রাখা।

কলসির মুখে ঢাকনার ব্যবস্থাসহ রসের উৎস মূল ঘিরে নাইলনের জাল দিয়ে বেষ্টনী দিতে হবে।

তবে আইসিডিডিআর'বির গবেষকরা গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন যে, রসের হাড়ির চারপাশ জাল বা এমন স্যাপ স্কার্ট দিয়ে ঢেলে দিলেও বাদুর কলসির মুখ বরাবর প্রস্রাব করে। ওই বেড়া দিয়ে বাদুড়ের রস খাওয়া প্রতিরোধ করা গেলেও ওই প্রস্রাবের গতি ঠেকানো যায় না। ফলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

কাঁচা খেজুর রস পান করা একটি সংস্কৃতি হলেও, প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জীবন রক্ষার্থে রস সিদ্ধ করে পান করা নিরাপদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, কাঁচা রস পান করা মোটেও নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে রসটি ফুটিয়ে খেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

রস সংগ্রহের পর আগুনে ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে কিছু উত্তপ্ত করলেই ভাইরাস মরে যাবে।

খেজুরের রস এতোটা নিয়ম ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া জরুরি এজন্য নিজে গিয়ে না হলে বিশ্বস্ত সূত্রে রস সংগ্রহ করতে হবে। খেজুরের রস বিশ্বস্ত কারও থেকেই নেয়া ভাল। যারা এসব বিষয়ে সচেতন।

এছাড়া গাছ থেকে ঝরে পড়া ফল কিংবা গাছে ধরা ফল খাওয়ার আগে ফলগুলি ভালভাবে ধুয়ে এবং খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া উচিৎ। বাদুড়ের কামড়ের চিহ্ন দেখতে পেলে সেই ফল সাথে সাথে ফেলে দিতে হবে।

রস সংগ্রহের স্থান থেকে বাদুড়কে দূরে রাখা সহায়ক হতে পারে। কিন্তু বাদুড় অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত উড়তে পারে। তাই এই উপায় খুব একটা কাজে দেবে না বলছেন, মিজ ফ্লোরা।

এক শ্রেণির রস বিক্রেতা খাঁটি রসের সঙ্গে পানিসহ অন্যান্য তরল মিশিয়ে এর পরিমাণ ও স্বাদ বাড়ানোর অপচেষ্টা করে। তাই খেজুর রস পান করার সময় এর স্বাদ ও খাঁটি কি-না তা পরীক্ষা করা দরকার।

খেজুরের রস খাওয়ার সবচেয়ে আদর্শ সময় হল ভোরবেলা। কারণ সারারাত ধরে রস জমতে থাকে এবং সকাল পর্যন্ত এই রস টাটকা থাকে। স্বাদ গন্ধও থাকে সবচেয়ে ভালো।

কিন্তু বেলা বাড়তে থাকলে রসের স্বাদ গন্ধে পরিবর্তন আসতে থাকে, অম্লতা বাড়ে কারণ দিনের আলোয় ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া দ্রুত হতে থাকে।

তাই রস সংগ্রহের তিন ঘণ্টার মধ্যে বা কড়া রোদ ওঠার আগেই রস খেয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন। দেরিতে রস খেলে বমি, পাতলা পায়খানা, পেটে গ্যাসসহ পরিপাকে সমস্যা দেখা দিতে পারে

প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা, পুষ্টিকর এবং উপাদেয়।

এতে আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, গ্লুকোজসহ প্রচুর ভিটামিনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। যা অনেকটা প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকের মতো কাজ করে। তাই কাজকর্মের দুর্বলভাব কাটাতে খেজুরের রসের জুড়ে নেই।

একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। তবে এক গ্লাস খাওয়াই ভালো।

তবে কারও ডায়াবেটিস থাকলে কিংবা কিডনি জটিলতায় ভুগলে তাদেরকে খেজুরের রস খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে চিনি।

শীত মৌসুমে ভোর হতেই গাছিদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা এক নিয়মিত চিত্র হলেও এখন তেমনটা আর দেখা যায় না।

আগের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা যেমন কমে গিয়েছে। তেমনি পেশাদার গাছিও তেমন আর নেই বলে কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

English summary
Nipah virus precautions that need to be taken
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X