কাবুলে জোড়া বিস্ফোরণে মৃত অকুতোভয় ৯ সাংবাদিক, পড়ুন তাদের মর্মান্তিক কাহিনী
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সোমবারের আইএসের জোড়া বিস্ফোরণে ৯ সাংবাদিক সহ অন্তত 30 জন নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তানের কাবুলে দুটি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনারই দায় স্বীকার করেছে আইএস। সকালেই জানা গিয়েছিল প্রথম বিস্ফোরণটি হওয়ার পর বিস্ফোরণস্থলে জড়ো হওয়া চিকিইসা-কর্মী এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্য করেই দ্বিতীয় হামলাটি চালানো হয়। আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে ঘটনায় মোট ৯ সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪৯ জন। আফগান পুলিশ জানিয়েছে সম্ভবত সাংবাদিকের বেশেই এক আত্মঘাতী জঙ্গি দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছে। এভাবে সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীদের নিশনা করার ঘটনায় তোলপাড় সারা বিশ্ব।
মৃত সাংবাদিকদের মধ্য়ে আছেন সংবাদ সংস্থা এএফপির কাবুল ব্যুরোর প্রধান ফটোগ্রাফার শাহ মারাই। ১৯৯৬-তে ড্রাইভার হিসেবে এএফপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শাহ। ২০০২-তে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে পুরো সময়ের চিত্রসাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ক্রমে দক্ষতার জোরে সংস্থার প্রধান চিত্রসাংবাদিক হন। ১৫ সদস্য়ের পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। এক সদ্য়জাত কন্য়া সহ ছয় সন্তান রয়েছে।
থেমে গিয়েছে আফগান টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ান টিভির তরুন সাংবাদিক গাজি রাসুলির স্বপ্ন। মাত্র ২১ বছর হয়স তাঁর। একবছর আগেই ওয়ান টিভিতে যোগ দিলেও এখনও কাবুল ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা পড়ছিলেন। এবছরই স্নাতক হওয়ার কথা ছিল। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন ক্যামেরাম্য়ান নওরোজ আলি রজবি। তিনিও ওই হামলায় নিহত হয়েছেন। পেছনে রয়ে গিয়েছে তাঁর তিনমাসের সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মা।
নিহত সাংবাদিকদের মধ্য়ে আছেন রেডিও ফ্রি ইউরোপের দারি ভাষার সংস্করণ আজাদি রেডিও-র তিন কর্মী ফারিস্তা মহরম দুরানি, সাবাউন কাকার ও এবাদুল্লাহ হানানজাই। ফারিস্তা নারী সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের প্রোডিউসার ছিলেন। কাবুল ইউনিভার্সিটির এই ছাত্রী বিভিন্ন সময় অ্যাঙ্কারিং-ও করতেন। সাবাউন কাকার গিয়েছিলেন প্রথম বিস্ফোরণের খবর সংগ্রহে। সঙ্গে ছিলেন হানানজাই। মাত্র একবছর আগেই বিয়ে করেছিলেন তিনি। আফগানিস্তানে বাবতে থাকা মাদক সেবন সমস্য়া নিয়ে তিনি নিয়মিত রেডিওতে অনুষ্ঠান করতেন।
বিস্ফোরণে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে আফগানিস্তানের অন্য়তম বড় সংবাদ সংস্থা টোলো নিউজের ক্যামেরাম্যান ইয়ার মহম্দ তোখি-র। গত বারো বছর ধরে এই সংস্থায় তিনি কাজ করেছেন। একমাসের মধ্যেই তাঁর বিবাহের কথা ছিল। গত কয়েকদিন বিয়ের কেনাকাটা সেরে এদিনই কাজে যোগ গিয়েছিলেন এই চিত্র সাংবাদিক।
এছাড়াও বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন মাসাল টিভির দুই সাংবাদিক সালীম তালাশ ও আলি সালেমি-র। আলি মাত্র একসপ্তাহ আগেই কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁকে সালীম-এর সঙ্গে প্রথম বিস্ফোরণের খবর করতে পাঠানো হয়েছিল। সালীম অবশ্য় ঘটনাস্থলে পৌঁছেই আরও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। এক বন্ধুকে তিনি টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে বিস্ফোরণ স্থলের আশপাশের রাস্তাগুলি এড়িয়ে ছলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সতর্কবার্তা পাঠানোর কয়েক মুহুর্তের মধ্য়েই ঘটে পরের বিস্ফোরণটি।
এর পাশপাশি এদিন আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বিবিসি পুশতুর সাংবাদিক আহমেদ শাহ-এর। বিকেল চারটের সময় প্রকাশ্য় রাস্তায় মোটর বাইকে চড়ে এসে তাঁকে হত্য়া করে জঙ্গিরা।
আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের এপর হামলা এই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৬ সালে টোলো টিভির বাসে আত্মঘাতি বোমা হামলা হয়েছিল। তাতে প্রাণ গিয়েছিল সাত সংবাদ কর্মীর।এ বছরের অক্টোবরে আফগানিস্তানে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই দিন যত এগিয়ে আসছে ততই হামলা বাড়ছে জঙ্গিদের। আফগান সরকার তালিবানদের শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে 'বসন্ত অভিযান' শুরুর ঘোষণা করেছে। ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে আইএস-ও। নির্বাচন ঘিরে আরও হামলার আশঙ্কা করছে আফগান সরকার।