সৌরজগতের জন্ম রহস্যের খোঁজে গ্রহাণু-র কোলে নিউ হরাইজন, পাঠাল ছবি, মহাকাশ গবেষণায় ইতিহাস
১২ বছরের সফরে শেষমেশ সৌরজগতের শেষ প্রান্তে পৌঁছল নিউ হরাইজন। আর সেই সঙ্গে ছবি পাঠাল সৌরজগতের প্রান্তে থাকা গ্রহাণু 'আল্টিমা ঠুলে'-র।
১২ বছরের সফরে শেষমেশ সৌরজগতের শেষ প্রান্তে পৌঁছল নিউ হরাইজন। আর সেই সঙ্গে ছবি পাঠাল সৌরজগতের প্রান্তে থাকা গ্রহাণু 'আল্টিমা ঠুলে'-র। এর আগে এই গ্রহাণুর নাম মহাকাশ বিজ্ঞানীরা শুনলেও এর কোনও ছবি কারোর কাছে-ই ছিল না। নিউ হরাইজন প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে 'আল্টিমা ঠুলে'-র ছবি তুলে পাঠিয়েছে।
নাসা 'আল্টিমা ঠুলে'-র সেই ছবি প্রকাশও করেছে। মহাকাশ গবেষণার এই অভিযানে একযোগে কাজ করছে নাসার 'নিউ হরাইজন' টিম এবং জনস হপকিন্স অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাবরেটরি, সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইন্সিটিউট।
|
পৃথিবী থেকে কয়েক বিলিয়ন মাইল দূরে কুপিয়ার বেল্ট
পৃথিবী থেকে ৪ বিলিয়ন মাইল দূরে রয়েছে কুপিয়ার বেল্ট। এই কুপিয়ার বেল্টের-ই একটা গ্রহাণু আল্টিমা ঠুলে। প্লুটো থেকে এই কুপিয়ার বেল্টের দূরত্ব ১ বিলিয়ন মাইল।
|
নতুন বছরে নিউ হরাইজন-এর উপহার
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ কুপিয়ার বেল্টের কাছ দিয়ে উড়ে যায় নিউ হরাইজন। সে সময় 'আল্টিমা ঠুলে'-র ছবি তোলে।
|
পৃথিবীতে সিগন্যাল আসছে কয়েক ঘণ্টা পরে
পৃথিবী থেকে কুপিয়ার বেল্টের দূরত্ব এতটাই যে নিউ হরাইজন থেকে সিগন্যাল পৃথিবীর বুকে পৌঁছতে সময় লাগছে ৬ ঘণ্টা। এমনকী নাসাও যদি নিউ হরাইজনকে কোনও সঙ্কেত পাঠালে তা পৌঁছতে সম সংখ্যক সময় লাগছে।
|
হাবল স্পেস টেলিস্কোপে প্রথম এর অস্তিত্ব
২০১৪ সালে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে কপিয়ার ব্লেটের প্রথম সন্ধান মেলে। ২০০৬ সালে প্লুটো-কে কাছ থেকে বিশ্লেষণ করার জন্য 'নিউ হরাইজন'-কে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। ২০১৫ সালের শেষ দিকে প্লুটোর কাছে পৌঁছয় নাসার এই মহাকাশযান। সেখানে কাজ শেষ হতেই নিউ হরাইজন-এর অভিযান-কে 'এক্সটেন্ড' করা হয় কুপিয়ার বেল্টের ছবি তুলতে।
কেন এই অভিযান
সৌর জগতের সৃষ্টি রহস্য়ের এখনও মিমাংসা হয়নি। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি, কপিয়ার বেল্টে থাকা 'আল্টিমা ঠুলে'-র বয়স সৌরজগতের সমান। এমনকী এই গ্রহাণু সৃষ্টির সময় থেকে এখন পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে। এর কোনও পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং এই গ্রহাণুকে বিশ্লেষণ করলে সৌরজগতের জন্মের সময়কার নানা তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। কুপিয়ার বেল্টে এমন লক্ষাধিক গ্রহাণু রয়েছে। নিউ হরাইজন এই বেল্টের আরও কিছু গ্রহাণু সম্পর্কে খোঁজ-খবর চালাবে।
আয়ু ফুরানোর আগেই তত্ত্ব-তলাশ
কুপিয়ার বেল্টে নিউ হরাইজন-এর অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্য়ালেন স্টার্ন। তিনি জানিয়েছেন, 'কুপিয়ার বেল্টটি সৌরজগতের এমন একটি প্রান্তে রয়েছে যেখানে যন অন্ধকার, বরফ-ঠান্ডা অবস্থা। এর কুপিয়ার বেল্টের মধ্যে আল্টিমা ঠুলে রয়েছে একেবারে শেষপ্রান্তে। এই জায়গাটি ডিপ-ফ্রিজের মতো ঠান্ডা। ফলে জন্মের সময় আল্টিমা ঠুলে-র গঠন-প্রকৃতি যা ছিল এখনও তাই আছে।' অ্যালেন আরও জানিয়েছেন যে, আয়ু ফুরানোর আগেই কুপিয়ার বেল্টের আরও কিছু গ্রহাণু সম্পর্কেও খোঁজ চালাবে নিউ হরাইজন।
|
আল্টিমা ঠুলের ছবি
নিউ হরাইজন সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূর থেকে 'আল্টিমা ঠুলে'-র যে ছবি তুলেছে তা পরিস্কার নয়। নাসা সেই ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছে, যে দুটো পাথর একে অপরের সঙ্গে এতটাই কাছ ঘেঁষে রয়েছে যে একে দেখতে অনেকটা বোওলিং-এর টার্গেট-এর মতো লাগছে। দুটি পাথরের মাঝখানে রয়েছে পিন-এর মতো একটা জিনিস। নাসা একদিকে যেমন নিউ হরাইজনের তোলা ছবি প্রকাশ করেছে তেমনি অস্পষ্ট ছবি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারনা দিতে তাদের শিল্পীর আঁকা ছবি-এ এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। তবে নাসা জানিয়েছেন, নিউ হরাজন যে তথ্য পাঠিয়েছে তাতে 'আল্টিমা-ঠুলে' ২০ মাইল লম্বা এবং ১০ মাইল চওড়া।
|
এই অভিযানে কেন এত চ্যালেঞ্জ
নাসার এই ঐতিহাসিক মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে রয়েছে মুম্বই-এর এক বিজ্ঞানী। নাম শ্যাম ভাস্করণ। কোন পথে নিউ হরাইজন 'আল্টিমা ঠুলে'-র দিকে যাবে তা তিনি নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। শ্যাম জানিয়েছেন, আল্টিমা ঠুলে- খুবই ক্ষুদ্র একটি গ্রহ। এর কাছে পৌঁছনোটাও সহজ। কিন্তু, অত সহজে এই ছোট্ট গ্রহাণু-টিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ এর আকৃতি এবং চারপাশের কালো অন্ধকার। আল্টিমা ঠুলে-এর ছবি ছিল না। ফলে শুরুতেই একটা অপরিচিত স্থানে, তারপর অন্ধকার। সেখান থেকে এত ছোট্ট একটা গ্রহাণুকে খুঁজে বের করা মুখের কথা ছিল না।
|
হাজার মাইল বেগে ছুটছে নিউ হরাইজন
নাসা জানিয়েছে প্রায় ৩২,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় কুপিয়ার বেল্টের কাছে চক্কর কাটছে নিউ হরাইজন। 'আল্টিমা ঠুলে'-র থেকে তার দূরত্ব প্রায় ২,২০০ কিলোমিটার। পৃথিবীতে নিউ হরাইজন-এর সঙ্কেত বা তথ্য,ছবি পৌঁছতে সময় লাগছে ৬ ঘণ্টা। ফলে, 'আল্টিমা ঠুলে'-র ভিডিও এই মুহূর্তে তোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে নাসা।
|
নাম কেন 'আল্টিমা ঠুলে'
২০১৪ সাল পর্যন্ত 'আল্টিমা ঠুলে'-র নাম ছিল এমইউ ৬৯। নিউ হরাইজন দল ডাকনাম প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। মধ্যযুগের ম্য়াপে ঠুলে নামে একটি দ্বীপের কথা বলা রয়েছে। মনে করা উত্তর মেরুতে এটাই ছিল পথিবীর মানব সভ্যতার শেষ সীমানা। 'আল্টিমা ঠুলে'-র মানে হল ঠুলের-ও বাইরে।