ইমরান খান নন, নওয়াজ শরিফের আসল 'চ্যালেঞ্জার' কে? কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান
দুই বছর আগে যখন পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতায় আসেন, তখন সেদেশের নিচুতলার মানুষের ক্ষমতাকে হাতিয়ার করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি সেনার শীর্ষকর্তাদের সমর্থন আদায় করে নিতে সমর্থ হয়েছিলেন। এহেন পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান জেনেরাল কোমার জাভেদ বাজওয়া এবং আইএসআই প্রধান লেফটেন্ট ফাইজ হামিদকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুললেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷
পাকিস্তানে চলা অস্থির পরিস্থিতির প্রতিবাদ
১৯ অক্টোবর থেকে পাকিস্তানে চলা অস্থির পরিস্থিতির প্রতিবাদে করাচি, গুরজানওয়ালা এবং কোয়েট্টা প্রদেশে তিনটি বিশাল জনসমাবেশের ডাক দিয়েছিল সেখানকার বিরোধী মহাজোট৷ তাদের দাবি একটাই, এই মুহূর্তে নিজের ব্য়র্থতা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিক ইমরান খান৷ উল্লেখ্য, পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নাম দিয়ে এগারোটি বিরোধী দল একজোটে ইমরান খানের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে৷ ২০ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে এই জোট গঠনের কথা ঘোষণা করে বিরোধীরা৷
বিরোধী মহাজোটের মুখ নওয়াজ শরিফ
বিরোধী এই মহাজোটের মুখ হিসাবে উঠে এসেছেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু নওয়াজ শরিফের মূল শত্রু কিন্তু ইমরান খান নন, বরং তাঁর শত্রু হল পাকিস্তানের সেনা। তাই নওয়াজের বক্তব্যেও উঠে আশে সেনার বিরুদ্ধে বিষোদগার। তিনি সেনা ও আইএসআইকে নিশানা করে বলেন, ২০১৮ সালে ভোটের সময় যথেচ্ছভাবে রিগিংয়ের মাধ্য়মে এবং সাংসদদের কিনে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়েছিল৷ যার ফলে আজ পাকিস্তানের মানুষ অনাহারে এবং অর্থাভাবে ভুগছে৷ এর জন্য় জেনেরাল বাজওয়াকে জবাব দিতে হবে বলে মন্তব্য় করেন নওয়াজ৷
আইএসআই ও সেনার বিরোধিতায় নওয়াজ
তবে শুধু সেনা প্রধান নয়, নওয়াজের নিশানায় ছিলেন পাকিস্তান গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই প্রধান লেফটেন্ট ফাইজ হামিদও৷ হামিদকে নিশানা করে নওয়াজ শরিফ বলেন, নিজের শপথবাক্য় থেকে সরে এসে হামিদ একাধিকবার পাকিস্তানের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে ৷ এমনকী বর্তমানেও তাই করে আসছে আইএসআই।
সাবধানে পা ফেলতে চান নওয়াজ
পাশাপাশি, দেশের সেনার প্রতি যে তিনি যে শ্রদ্ধাশীল তাও স্পষ্ট করে দেন নওয়াজ শরিফ৷ বলেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নাম নিয়ে ব্য়ক্তিগতভাবে এদের আক্রমণ করছেন৷ কারণ পাকিস্তান সেনাকে তিনি অসম্মান করতে চান না৷ তবে আসল কথা হল, পাকিস্তানের সেনায়, একজন গেলে আরও একজন আসে। তাই নওয়াজের মূল চ্যালেঞ্জ আসলে পাকিস্তানের রাজনীতি এবং গণতন্ত্রে সেনার হস্তক্ষেপ রোখা।
জেনেরাল বাজওয়ার পদের মেয়াদ বৃদ্ধি
বর্তমানে সেনার মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে জেনেরাল বাজওয়ার পদের মেয়াদ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে। আর যে পদ্ধতিতে পরবর্তী সেনা প্রধান বেছে নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কোভিড প্যানডেমিকের মোকাবিলা করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আর তাছাড়া তিনি যে নিজেকে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সঠিক মুখ হিসেবে দাবি করেন, জনপ্রিয় মতামতে সেটাও এখন প্রশ্নের মুখে। কোয়েট্টায় বিরোধীদের জনসভায় যা দেখা গিয়েছে, তাতে এখন একটা ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির বদল ঘটছে। দিল্লি ও বেজিং উভয়েই নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে সেই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে করাচিতে
করাচিতে ১৮ অক্টোবর বিরোধী জোটের প্রতিবাদের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। যা পাকিস্তানি স্তরেও অস্বাভাবিক। ওই প্রতিবাদের পর পাক সেনার নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানি রেঞ্জার অবোধ্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় নওয়াজ শরিফের জামাইকে। এই ঘটনায় শরিফের জামাইকে গ্রেফতার করতে অস্বীকার করায় সিন্ধ প্রদেশের ইনস্পেক্টর জেনেরাল অফ পুলিশ মুস্তাক মাহারানকেও নাকি অপরহরণ করে পাক রেঞ্জারস। এর প্রতিবাদ করে ছুটিতে চলে যান। তাঁর প্রতিবাদী ছুটিকে অনুকরণ করেন অধস্তনদেরও অনেকে। এতে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে সিন্ধ পুলিশকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ উঠছে। এমনকী সেনা-পুলিশ গুলির লড়াইতে ১০ পুলিশ কর্মীও মারা যান।
'রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র'
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিরোধী জোটের ক্যাডারদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নওয়াজ শরিফ সেনাকে ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র' বলে অভিযোগ করেছেন। বিচারবিভাগের ষড়যন্ত্র করে তাঁকে পদ থেকে সরানোর জন্য সরাসরি বাজওয়াকেই অভিযুক্ত করেছেন শরিফ। তাঁর অভিযোগ, ইমরান খান নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আনা যথেষ্ট সন্দেহজনক। গোটা ঘটনাকে তিনি নিয়ন্ত্রিত সামরিক অভিযান বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
এই প্রথম নওয়াজ শরিফ প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করলেন
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জনগণের কাছে এই প্রথম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ প্রকাশ্যে জনগণের সামনে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করলেন। আর তাঁর বহিষ্কারের জন্য সরাসরি জেনেরাল বাজওয়াকে দোষারোপ করলেন। যদিও তাৎপর্যপূর্ণভাবে ১৯৯০ সালে যখন নওয়াজ শরিফ প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন , তখনও সেনা একজন নাগরিক রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে ‘পছন্দ' করেছিল। তবে এখন সেই সেনার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন নওয়াজ।
নওয়াজের আসল চ্যালেঞ্জ
২০১৮ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের পথ চলা শুরু হয়। যা ক্রমশ রাওয়ালপিন্ডি থেকে সেনাবাহিনীর ‘বাছাই' সরকারে পরিণত হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনেরাল কোয়ামার জাভেদ বাজওয়ার আজ্ঞাবহ হয়ে উঠছেন। বাজওয়ার সেনা প্রধানের পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা অনেককেই বিস্মিত করেছে। আর যা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। তবে এটা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন নয়। নওয়াজের এখন চ্যালেঞ্জ এই যে, ইসলামাবাদের উপর রাওয়ালপিন্ডির কর্তৃত্ব কমানো।
বিহারে নীতীশের থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে বিজেপি? অণুবীক্ষণযন্ত্রের তলায় এনডিএর জোট সমীকরণ