ভারতে শিশু বিক্রির অভিযোগে আটক মাদার তেরেসা কেন্দ্রের কর্মীরা
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে মিশনারিজ অব চ্যারিটির একটি সেন্টার থেকে সন্তানহীন দম্পতিদের কাছে শিশু বিক্রি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ
মাত্র ১৪ দিন বয়সী একটি শিশুকে বিক্রি করার অভিযোগে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে মাদার তেরেসার মিশনারিজ অব চ্যারিটিতে কর্মরত এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই কেন্দ্রের আরও দুজন মহিলা কর্মীকেও আটক করা হয়েছে এবং শিশু বিক্রির আরও সম্ভাব্য অভিযোগ নিয়েও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঝাড়খন্ড রাজ্যের শিশু কল্যাণ কমিটি (সি ডবলিউ সি) এই ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর পরই পুলিশ এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিবিসি-র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রতিক্রিয়া জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু এখনও তাদের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি।
"আমরা জানতে পেরেছি যে ওই সেন্টার থেকে এর আগেও অনেক শিশুকে অবৈধভাবে বিক্রি করা হয়েছে", বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন ঝাড়খন্ড রাজ্যের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ এখন ওই বিক্রি হওয়া শিশুদের মায়েদের নামের তালিকা বের করে এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।
ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচিতে অবস্থিত মিশনারিজ অব চ্যারিটির ওই সেন্টার থেকে পুলিশ ১ লক্ষ ৪০ হাজার ভারতীয় রুপিও (প্রায় ২১৫০ মার্কিন ডলার) উদ্ধার করেছে, যা শিশু বিক্রির টাকা বলে তাদের সন্দেহ।
আমাদের পেজে আরও পড়ুন :
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৪৩ অল আউট : কী বলছে বাংলাদেশ?
বিশ্বকাপ ফুটবল উগান্ডানদের জন্য এখনো আতঙ্কের
'আমাকে হত্যার জন্য খুনি ভাড়া করেছিল আমার স্বামী'
ভারতে মিশনারিজ অব চ্যারিটির বহু কেন্দ্র রয়েছে, আর তারা অবিবাহিত অথচ গর্ভবতী হয়ে পড়া মায়েদের জন্য অনেক হোমও পরিচালনা করছে।
তবে ভারতে শিশু দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে যে নতুন আইন হয়েছে, তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না-পেরে তারা বছরতিনেক আগে শিশুদের দত্তক দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
ভারতে বহু নি:সন্তান দম্পতি মরিয়া হয়ে বেআইনি পথে শিশু কেনেন বলে অভিযোগ আছে। তার কারণ ভারতে দত্তক নেওয়ার আইন খুব জটিল - আর দত্তক নিতে চাওয়া বাবা-মার ওয়েটিং লিস্টও খুব লম্বা।
যেমন, সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১৫-১৬ সালে মাত্র হাজার তিনেক বাচ্চাকে ভারতে আইনসম্মতভাবে দত্তক নেওয়া হয়েছে। অথচ অন্তত বারো হাজার দম্পতি ভারতে শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
ঝাড়খন্ডে সরকারের শিশু কল্যাণ কমিটির প্রধান রূপা কুমারী বিবিসিকে জানান, "মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে কর্মীরা উত্তরপ্রদেশের এক দম্পতির কাছে সদ্যজাত একটি শিশুকে ১ লক্ষ ২০ হাজার রুপিতে বিক্রি করেছে - আমরা এখন এই অভিযোগের তদন্ত করছি।"
তবে ওই দম্পতি তাদের বলেছেন, সেন্টারের হাসপাতালের উন্নয়নের জন্যই না কি ওই টাকা তারা দান করেছিলেন।
কিন্তু রূপা কুমারী বলছেন, তাদের তথ্য অনুযায়ী গত ১৯শে মার্চ ওই সেন্টারে এসেছিলেন এক অন্ত:স্বত্ত্বা তরুণী - তিনিই কিছুদিন পরে একটি সন্তানের জন্ম দেন এবং ওই শিশুটিকে ১৪ই মে উত্তরপ্রদেশের ওই দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এর আগেও ভারতের বিভিন্ন শহরে নি:সন্তান দম্পতিদের কাছে ওই সেন্টার থেকে ৫০ থেকে ৭০ হাজার রুপির বিনিময়ে শিশুদের বিক্রি করা হয়েছে বলেও কমিটি জানতে পেরেছে।
এই অভিযোগ সামনে আসার পর রাঁচিতে ওই সেন্টার থেকে ১৩জন গর্ভবতী মহিলাকে কমিটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গেছে।
১৯৯৭ সালে প্রয়াত মাদার তেরেসা আজ থেকে ৬৮ বছর আগে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
নোবেল পুরস্কারজয়ী মাদারের প্রতিষ্ঠিত ওই সংস্থার বিশ্ব জুড়ে অজস্র কেন্দ্রে তিন হাজারেরও বেশি সন্ন্যাসিনী যুক্ত আছেন।
তারা বিশ্বের নানা প্রান্তে বহু হসপিস, স্যুপ কিচেন, কুষ্ঠ নিরাময় কেন্দ্র, স্কুল ও পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও চালান।