সড়ক দুর্ঘটনা: কেবল ঈদের ছুটিতেই তিনশোর বেশি দুর্ঘটনা, চারশোর বেশি নিহত
সড়ক দুর্ঘটনা: কেবল ঈদের ছুটিতেই তিনশোর বেশি দুর্ঘটনা, চারশোর বেশি নিহত
বাংলাদেশে এবার ঈদ-উল-আজহার ছুটিতে যাতায়তের সময় গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এরকম একটি সংস্থা এই হিসেব দিয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ঈদের আগের-পরের ১৫ দিনের মধ্যে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ৭৭৪ জন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন:
- সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য মোটরসাইকেলের দিকে আঙ্গুল উঠছে কেন?
- ঢাকায় বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো থামছে না
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছে।
সংগঠনটি বলছে, গত বছরের ঈদুল আজহায় লকডাউনের কারণে যাতায়াত সীমিত ছিল, সে তুলনায় এবার ঈদে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। এবারের ঈদে কেবল রাজধানী ঢাকা থেকেই ১ কোটি ২০ লাখ যাতায়ত করেছে। তাদের অনুমান, এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরো প্রায় ৪ কোটি মানুষের যাতায়াত হয়েছে।
ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য:
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এবার মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল এর সুযোগ নিয়ে এবারের ঈদে ভাড়া আদায় নিয়ে নৈরাজ্য দেখা গেছে।
এছাড়াও নানান অব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন রুটে ৪ ঘণ্টার পথ যেতে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টাও লেগেছে।
পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি ফিটনেস-বিহীন বাস, ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান, পিকআপ, এমনকি মুরগী বহনকারী ভ্যানেও যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে।
সাত বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা:
ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি তা জানতে ৩ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৫ দিনের তথ্য সংগ্রহ করে।
তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ৭৭৪ জন আহত হয়েছে।
একই সময়ে রেলপথে ২৫ টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
- ফুল প্যান্ট-শার্ট পরে কেন মোটরসাইকেল চালাতে বলছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ?
- ঢাকায় মোটরবাইক সার্ভিস নিয়ে নারীদের অভিজ্ঞতা
নৌ-পথে ১০ টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ১৫ জন আহত এবং ৩ জন নিখোঁজ হয়েছে।
সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে বিগত ৭ বছরের ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সাথে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই সর্বোচ্চ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শীর্ষে:
এবারে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল।
এবারের ঈদে ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছে।
যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫.৪২ শতাংশ, নিহতের ৩২.৯১ শতাংশ।
যদিও বাংলাদেশ সরকার ঈদুল আজহার সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল।
এক জেলা থেকে আরেক জেলাতেও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেছিলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের তিন দিন- এই সাত দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরবাইক চলাচল করবে না।
সেই সময় দেশের সব মহাসড়কে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসও বন্ধ থাকার কথা বলা হয়।
ঢাকা, বরিশাল বা চট্টগ্রামের রাইড শেয়ারিং বাইকের যেটি যে জেলার মোটরসাইকেল, সেটি সেই জেলাতেই চালাতে হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
তবে যৌক্তিক এবং অনিবার্য প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে বলে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল।
মি. আমিন উল্লাহ নুরী জানান, ঈদের আগে পরে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রায় আড়াই মাস আগে ঈদ উল ফিতরের আগে পরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত, ১১০ জন আহত হয়েছে।
যা ছিল মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ এবং আহতের ১৩.০৩ শতাংশ প্রায়।
সংগঠনের মহাসচিব মোঃ. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ৭ বছরের হিসাবে এবারের ঈদে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি প্রমাণ করে কোন একটি নির্দিষ্ট যানবাহন বন্ধ করে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।
এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সড়ক বিভাজক না থাকার কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে।
এছাড়াও পথচারীর জন্য নিরাপদ ফুটপাত না থাকায় পথচারীর মৃত্যুর হার আশংকাজনক হারে বাড়ছে।
এই দুটি বিষয়ে মনোযোগী হলে উল্লেখযোগ্য হারে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে সাবরিনা-আরিফসহ আটজনের কারাদণ্ড
আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র বদলে দিচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চিত্র
বিদ্যুৎ আর জ্বালানি সাশ্রয়ে বড় পদক্ষেপের ঘোষণা বাংলাদেশে
নড়াইলে এমন একটি সাম্প্রদায়িক হামলা কেন, কীভাবে হলো