'ঘরোয়া বৈঠক', ভারতে আসছেন বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা, একান্তে কী কথা হতে পারে
এ সপ্তাহে শান্তিনিকেতনের বঙ্গ ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে 'ঘরোয়া' বৈঠকে বসবেন মোদি। উঠতে পারে রোহিঙ্গা সমস্যা, তিস্তা জল বন্টন-এর মতো বিষয়।
আরও এক প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে 'ঘরোয়া বৈঠকে' মিলিত হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর আগে চিনের ইউহান-এ এরকম একটি বৈঠক করেছিলেন চিনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং-এর সঙ্গে। এবার শান্তিনিকেতনের বঙ্গ ভবনে একই রকম আন্তরিক বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।
নর্থ ব্লক মনে করছে এরকম ঘরোয়া বৈঠকে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ তোলা যায়, যা সরকারি পরিসরে সম্ভব হয় না। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত। এখন সেগুলি মেরামত করতে চাইছে ভারত। আর সে কাজে মোদীর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই 'ঘরোয়া বৈঠক'। ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্কের মধ্যেও কিছু কাঁটা বিছিয়ে আছে। এ সপ্তাহে হাসিনার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সাই কাঁটাগুলি উপড়ানোই প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হওয়া স্বাভাবিক। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক কি কি প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে এই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের ঘরোয়া আলোচনায়।
হাসিনার এই সফর রোহিঙ্গা সমস্যার প্রসঙ্গ ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক। মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর ভারত নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের দরজা খুলে দিয়েছিল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য। তারপর ভারত অবশ্য অপারেশন ইনসানিয়াত নাম দিয়ে শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশের হাতে। হাসিনা এই সফরে আরও সাহায্যের আর্জি জানাতে পারেন। অপরদিকে মোদী দাবি তুলতে পারেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার জন্য। মায়ানমার থেকে ফিরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সেই সুপারিশই করেছিলেন।
উঠতে পারে উত্তর-পূর্বের সিটিজেন্স অ্যাক্টের সংশোধনীটির প্রসঙ্গও। অবৈধ বলে বেশ কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দিন মোদী, হাসিনা নিশ্চই এটা চাইবেন না। কাজেই সেব্যাপারটা তিনি আলোচনায় তুলবেন বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল পরিবহন করিডোরের প্রসঙ্গটিও আলোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই বানিজ্য পথ হলে একদিকে যেমন ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বাংলাদেশের রাস্তার মারফত যোগাযোগ বাযবস্থার উন্নতি হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশও এখন অধরা নেপাল ভুটানের সঙ্গে বানিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে।
তবে সবচেয়ে অস্বস্তি রয়েছে তিস্তা জলবন্টন বিতর্ক নিয়ে। মোদী বাংলাদেশে গিয়ে হাসিনাকে কথা দিয়েছিলেন এব্যাপারে তিনি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছু হয়নি। গত এপ্রিলেই হাসিনা ভারতে এসেছিলেন। ২২ টি চুক্তি হয়েছিল দুদেশের মধ্যে, কিন্তু তিস্তা নিয়ে চুপই ছিলেন মোদীা। এবারের বৈঠকে প্রসঙ্গটি নিশ্চয়ই তুলবেন বাঙালী প্রধানমন্ত্রী। সামনেই সেদেশের ভোট, তার আগে তিস্তার পানি আনতে পারলে হাসিনাকে পায়কে। অপরদিকে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ সমর্থন আদায় করবে নয়াদিল্লি। এর মাঝে একটিই কিন্তু রয়েছে। দুই রাষ্ট্র প্রধান আলোচনায় বসছেন আবার তাঁর রাজ্যেই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।