পাকিস্তান-চিনকে টার্গেটে রেখে মোদীর মার্কিন সফরের প্রথম দিনেই বাজিমাত পর পর বৈঠকে! কোন কূটনৈতিক কৌশলে দিল্লি
দীর্ঘদিন বাদে মোদীর মার্কিন সফর একাধিক ইস্য়ুতে ব্যাপক তাৎপর্যবাহী। একদিকে, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থান, অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বাণিজ্যের সীমানা বিস্তার করা, এছাড়াও চিন ও পাকিস্তানকে একহাত নিতে জোরালো বাউন্সার সঠিক জায়গায় ফেলা, এই সমস্ত অ্যাজেন্ডাকে সঙ্গে নিয়ে কার্যত মোদীর মার্কিন সফরের প্রথম দিনে পর পর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নজর কাড়তে শুরু করে দিয়েছে। চিনের আগ্রাসন ও পাকিস্তানের সন্ত্রাস এই দুটি ইস্যু দক্ষিণ এশিয়ার বুকে কতটা মারাত্মক হচ্ছে ও বিশ্বকে তা কতটা উদ্বেগে রাখতে পারে , সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে গতকাল মোদীর মার্কিন সফরের প্রথম দিনেই পর পর বৈঠকে দিল্লি একাধিক বার্তা দিয়েছে বিশ্বকে।
আমেরিকার সামনে পাকিস্তান ইস্যু
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে গতকালই আলোচনায় বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বৈঠকে আমেরিকার সামনে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ পেশ করে ভারত। উল্লেখ্য, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বৈঠকের পরই 'সুয়ো মোটো' র উল্লেখ করেন। পরে ভারতীয় বিদেশ সচিব হর্ষ স্রিংলা জানিয়ে দেন যে এই সুয়ো মোটো উল্লেখের মধ্য দিয়ে কার্যত পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নদমের বার্তা দিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। প্রসঙ্গত, এদিনের বৈঠকে ভারত স্পষ্টভাবে আমেরিকাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে ইমরানের খানের দেশ বাইডেন প্রশাসনের জন্য কতটা আতঙ্কের হয়ে উঠছে। যে তালিবান কার্যত আমেরিকার চক্ষুশূল, সেই তালিবানের হর্তাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সাম্প্রতিককালে বসেন পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান ফইজ হামিদ। তারপরই তালিবান সরকার গঠন করে। যে সরকারে বিশ্বের তাবড় সন্ত্রাসবাদীরা হাজির রয়েছে। এই জায়গা থেকে পাকিস্তান ও তালিবানের সম্পর্ক আগামীর বিশ্বের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা নিয়েই বিভিন্ন ইস্যু আমেরিকার সামনে তুলে ধরেছে ভারত। এছাড়াও যেখানে মার্কিন গোয়েন্দারা বলছে তালিবান সমর্থিত আল কায়দা আর দু থেকে এক বছরের মধ্যে আমেরিকায় হামলার চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেই জায়গা থেকে পাকিস্তানের এই আঁতাত কতটা মারাত্মক হতে পারে তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা।
হাইভোল্টেজ বৈঠক
এদিকে, কমলা হ্যারিসের সামনে পাকিস্তানের প্রসঙ্গটি তোলার পর এবার মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান বাইডেনের সামনেও একই ইস্যুতে দিল্লি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চলেছে বলে খবর। এর আগেই সন্ত্রাস নিয়ে মোদীর বক্তব্য শুনেই কমলা হ্যারিস জানিয়েছেন, যে পাকিস্তানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে আমেরিকা। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে পাকিস্তান তালিবানের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কতটা মরিয়া, বা তালিবানের সঙ্গে ইসলামাবাদের যোগের নেপথ্যের স্বার্থ কী , তা নিয়েও দিল্লি কূটনৈতিক কৌশলে নিজের স্টান্সে এগিয়ে যাবে বলে জানা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে ওবামা, ট্রাম্পের পর এবার বাইডেনের সামনে ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চলেছে। যেখানে আইওসির দরবাদের কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান বাকি দেশগুলিকে তাতিয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকের ফাঁকে আমেরিকার মতো শক্তিধর দেশের সামনে পাক সন্ত্রাসহাদের চেহারা তুলে ধরে কার্যত দিল্লি প্রথম চালেই কিস্তিমাত করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গে চিন
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চিন সাগরে কার্যত ত্রাসের রূপ নিতে শুরু করেছে চিন। এই এলাকার ছোটবড় দ্বীপকে নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে বেজিং। এদিকে, তাদের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসন দক্ষিণ চিন সাগরের সম্পদকে কতটা সুরক্ষিত রাখতেব তা নিয়ে আগেই কোয়াডভূক্ত দেশগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই জায়গা থেকে কোয়াডভূক্ত জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সামনে চিনের প্রেক্ষাপট ও প্রসঙ্গ তুলেছে দিল্লি। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে মোদী চিন প্রসঙ্গে একাধিক উদ্বেগের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে বৈঠক
এদিকে, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য় বিষয়ে আলোচনার মাঝেই চিন প্রসঙ্গে দিল্লি একাধিক বার্তা ইশোহিডে সুগা ও স্কট মরিসনের সামনে রাখে। ইতিমধ্যেই ভারত নিজের নৌ শক্তি বাড়িয়ে তুলে শুরু করে দিয়েছে। জলপথে প্রিডেটর ড্রোন নিয়ে নজরদারি সহ একাধিক শক্তিশালী সমরাস্ত্র নিয়ে ময়দানে নামতে শুরু করছে ভারত। সেই জায়গা থেকে চিনের অহেতুক আগ্রাসনকে যে ভারত প্রচ্ছন্ন সতর্কতা দিয়ে রাখছে, তা বলাই বাহুল্য। এর পাশাপাশি এই দক্ষিণ চিন সাগর জলসীমায় থাকে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করে কার্যত বেজিংয়ের প্রতি বার্তা স্পষ্ট করতে শুরু করল ভারত।