'গর্ভপাত' নিয়ে আয়ারল্যান্ডে গনভোট, পথে কত চড়াই উতরাই ছিল জানেন
২৫ মে গর্ভপাতকে বৈধ করা হবে, কি হবে না, এই নিয়ে গনভোটে অংশ নিল আয়ারল্যান্ড। তবে অনেক আত্মত্যাগ, আন্দালনের পথ ধরে এসেছে আজকের এই গনভোট।
২৫ মে গর্ভপাতকে বৈধ করা হবে, কি হবে না, এই নিয়ে গনভোটে অংশ নিল আয়ারল্যান্ড। তবে অনেক আত্মত্যাগ, আন্দালনের পথ ধরে এসেছে আজকের এই গনভোট। প্রবল বাধা ছিল চার্চের পক্ষ থেকে। সমাজে এখনও রয়েছে দ্বিধা। ভোটের ফল শেষ অবধি কী রায় দেবে জানা নেই, তবে এনিয়ে যে স্বাধীন মত দেওয়া গেছে, তাকেই বড় সাফল্য বলে মনে করছে গর্ভপাতের পক্ষে থাকা আন্দোলনকারীরা। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোনপথে এল আয়ারল্যান্ডের এই গনভোট।
ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে রক্ষণশীল সমাজ আয়ারল্যান্ডের। প্রধাণত ক্যাথলিক ফ্রীস্টানদের দেশে চার্চের প্রভাব অসীম। তারাই বিভিন্ন বিষয়ে এদেশে শেষ কথা বলে। তাদের বক্তব্য প্রতিটি জীবনই সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন মায়ের জীবনের সমান গুরুত্বপূর্ণ তাঁর গর্ভে থাকা ভ্রুণ। কাজেই গর্ভপাত ক্যাথলিক চার্চের চোখে মহাপাপ। তাই এখনও অবধি আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাত নিষিদ্ধই। কেউ তা লঙ্ঘন করলে ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
Voting opens in Irish abortion referendum #8thRef https://t.co/b6QHzgf5Aq pic.twitter.com/HVbmpwCwCB
— BBC News NI (@BBCNewsNI) May 25, 2018
তবে চার্চের এই বিতর্কিত মত নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে আইরিশ সমাজে। গর্ভধারণ তিনি করবেন কি করবেন না, সেটা একান্তই মহিলাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, বলে দাবি উঠেছে অনেকবারই। সমাজের প্রগতিশীল একটা অংশ এনিয়ে ১৯৮৩ সালে আন্দালন জোরদার করে। যার জেরে ওই বছর বিষয়টি নিয়ে সেদেশে প্রথম গনভোট হয়।
Ireland votes on whether to repeal abortion banhttps://t.co/eGduNu13OX pic.twitter.com/74PfpKwuJx
— AFP news agency (@AFP) May 25, 2018
কিন্তু তখনও সমাজে সমাজে ক্যাথলিক নেতাদের যথেষ্ট রমরমা ছিল। প্রভাব ছিল সমাজের সর্বস্তরে। বস্তুত ফল সম্পর্কে একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই গনভোটে রাজি হয়েছিল চার্চ। সেসময় চুড়ান্ত হার হয় গর্ভপাতের অধিকার-এর পক্ষে থাকা প্রগতিশীলদের। উল্টে গর্ভপাতকে নিষিদ্ধ করে আইন তৈরি হয় আয়ারল্যান্ডে।
Heading #hometovote on the Traditional Girl In Trouble Boat, thinking of everyone who made the same journey in the other direction. Air thick with ghosts #repealthe8th pic.twitter.com/OgtF4H8w8A
— Deirdre Ruane (@bluedevi) May 25, 2018
কিন্তু ১৯৯২ সালে আইনটি সংশোধন করতে বাধ্য হয় আইরিশ সরকার। ওই বছর ধর্ষণের শিকার হওয়া এক আইরিশ মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তাঁকে গর্ভপাতের অধিকার দেওয়ার জন্য আওয়াজ ওঠে। বাধ্য হয়েই চার্চ প্রভাবিত সরকার আইনে বদল এনে জানায়, বাইরে কোনও দেশে গিয়ে গর্ভপাত করিয়ে আসতে পারেন আইরিশ মহিলারা। এরফলে এখন অবধি, প্রতিবছর বহু আইরিশ মহিলাকে দেখা যায় প্রতিবেশী দেশ ইংল্যান্ডে গিয়ে গর্ভপাত করিয়ে আসতে। বর্তমানে অবশ্য অনলাইনে অর্ডার দিয়ে গর্ভনিরোধক ওষুধ আনানোর প্রবণতাও তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত গর্ভপাত অবৈধ হওয়ায় সেদেশে গর্ভনিরোধক ওষুধ বিক্রিও বেআইনি।
Irish voters are casting votes to decide whether to repeal the eighth amendment in the country's constitution which bans abortions under any circumstances.
— ANI Digital (@ani_digital) May 25, 2018
Read @ANI Story | https://t.co/qKCdT1y3fn pic.twitter.com/Vk7n86j0ai
তবে যে ঘটনার জন্যই আজ এ বিষয়ে ফের গনভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা সেটা ঘটেছিল ২০১২ সালে। এতে জড়িয়ে আছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেন্টিস্ট। ১৭ সপ্তাহের গর্ভবতী সবিতা হলপ্পনভরের দেহে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর গর্ভরক্ষা অসম্ভব। এবং সেক্ষেত্রে তাঁর মৃত্যু হতে পারে জেনেও শুধুমাত্র আইনের জন্য তাঁর গর্ভপাত করায়নি হাসপাতাল। শেষে দেহে সংক্রমণ হয়ে মারা যান সবিতা। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়ায়। চার্চ ও সরকারের বিরুদ্ধে গনআন্দোলন শুরু হয়। সবিতা হন সেই আন্দোলনের মুখ।
Mural of Savita Halappanavar erected as Ireland votes in abortion referendum pic.twitter.com/8qY8jftCqm
— Independent.ie (@Independent_ie) May 25, 2018
তীব্র আন্দোলনের চাপে পড়ে ২০১৩ সালে ফের একবার গর্ভপাত বিরোধী আইনে বদল আনার কথা ভাবতে বাধ্য হয় সরকার। চার্চ কার্যত ব্যাকফুটে চলে যায়। আন্দোলনের রাশ ছিল আইরিশ মহিলা সমাজের। আইনের নয়া সংশোধনীতে বলা হয়, যদি দেখা যায় গর্ভবতী মায়ের কোনও ক্ষেত্রে প্রাণ সংশয় আছে, এমনকী তা আত্মহত্যার সম্ভাবনা হলেও, সেক্ষেত্রে তার গর্ভপাত করা যাবে।
I’m 25 years old.
— ⭐ amy o'connor ⭐ (@amyohconnor) May 25, 2018
I can yawn.
I can kick.
I can vote to REPEAL THE 8TH 🗳 #repealthe8th #Together4Yes pic.twitter.com/0TbCby653s
কিন্তু এর পরেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমমিত হয়নি। বিশেষ করে মবিলাা দাবি জানান, কেউ গর্ভ ধারণ করবেন কি করবেন না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকবে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মহিলার হাতে। চার্চ বা সরকার তা ঠিক করে দিতে পারে না।
A vote for the freedom to choose, a vote for women's rights, a vote for women's control over their bodies, a vote for women's health & safety, a vote towards equality. Thinking of Ireland #together4yes #repealthe8th https://t.co/CDNj9KoSGt
— Emma Watson (@EmmaWatson) May 24, 2018
২০১৭ সালের জুন মাসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত লিও ভরদকর গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থক। ক্ষমতায় এসেই তিনি এবিষয়ে গনভোট আয়োজনের কথা ঘোষণা করেন। সেই মতো এদিন প্রায় ৩৫ লক্ষ আইরিশ ভোটার মত দিলেন গর্ভপাত নিয়ে। লিও ভরদকর এদিনের ভোটকে 'ওয়ান্স ইন আ জেনারেশন চান্স' বলেছেন। এই ভোট তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতেরও বড় পরীক্ষা।
Turnout in Ireland's abortion referendum is higher than at the same stage of the country's same-sex marriage referendum https://t.co/2y5FJ2OX1X pic.twitter.com/i531DNX8iK
— BBC News NI (@BBCNewsNI) May 25, 2018
তবে আইরিশ সমাজে এ নিয়ে এখনও যথেষ্ট দ্বিধা আছে। অনেকেই বিপক্ষে মত দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভোট সমীক্ষকদের দাবি পাল্লাটা ভারী পক্ষের দিকেই। উপপ্রধানমন্ত্রী সাইমন ক্যাভেনি যেমন জানিয়েছেন, 'হ্যাঁ'-এর পক্ষে নিশ্চিত হওয়াটা তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। তবে তিনি বলেছেন 'কিছু অসাধারণ মহিলা ও পুরুষ' এই 'অস্বস্তিকর সমস্যা' তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে।
Irish abortion referendum voting opens https://t.co/bP02a6XSKU
— BBC Politics (@BBCPolitics) May 25, 2018