কাশ্মীরে বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করছে বহু পরিবার
বহু মানুষ কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করছেন গত কয়েকদিন ধরে। কেন তারা বাতিল করছেন বিয়ের ভোজ?
শ্রীনগরের বাসিন্দা নাজির আহমেদ বাঙ্গরূর মেয়ের বিয়ের দিন ছিল আজ।
যেভাবে কাশ্মীরী বিয়ে হয়, সেই সব আয়োজনই করেছিলেন মি. বাঙ্গরূ।
ধর্মীয় রীতি মেনে নিকাহ আর তার সঙ্গে পরিবার, আত্মীয়- বন্ধুদের জন্য বিশাল ভোজের আয়োজন করেছিলেন তিনি।
সেই কাশ্মীরী 'ওয়াজওয়াঁ' বাতিল করতে হয়েছে মি. বাঙ্গরূকে।
সব আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের আলাদা করে জানানোর সময় নেই, তাই কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তিনি।
সেই বিজ্ঞাপন দেখেই তাঁর নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিলাম শ্রীনগরে।
"কত সাধ ছিল যে মেয়ের নিকাহতে বড়সড় ভোজের আয়োজন করবো, সবাই আসবে! কিন্তু বাতিল করতে বাধ্য হলাম। কেউইতো আসতে পারবে না বলছে। অত বড় ভোজের আয়োজন করে কী করব? এখন শুধু নিয়মমতো নিকাহ হবে ধর্মীয় রীতি মেনে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. বাঙ্গরূ।
তাঁর মতো আরও বহু মানুষ কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করছেন গত কয়েকদিন ধরে।
আর এটাই কাশ্মীরে বিয়ের সময়।
কেন বাতিল করছেন বিয়ের ভোজ?
"যা পরিস্থিতি, তাতে কীভাবে ভোজ বা বড়সড় অনুষ্ঠান আয়োজন করবো? একদিকে কার্ফু অন্যদিকে দুদিনের হরতাল শুরু হয়েছে আজ থেকে," বলছিলেন মুস্তাক আহমেদ।
তাঁর ছোট বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল করতে হয়েছে বৃহস্পতিবার।
বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো, কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি বৃহস্পতি আর শুক্রবার হরতাল ডেকেছে।
ভারতের সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে ধারা অনুযায়ী, তারই অন্যতম, ৩৫-এ প্রত্যাহার করার বিরুদ্ধে এই রাজনৈতিক প্রতিবাদ চলছে।
ওই ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরে কারা স্থায়ী বাসিন্দা বলে চিহ্নিত হবেন, সেটা স্থির করার ক্ষমতা দেওয়া আছে রাজ্যের আইনসভাকে।
স্থায়ী বাসিন্দা নন, এমন কেউ জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে জমি-বাড়ির মতো কোনও সম্পত্তি কিনতে পারেন না।
সুপ্রিম কোর্টে কয়েকজন ব্যক্তি এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আবেদন করেছে যে ওই ধারা তুলে দেওয়া হোক।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদনের শুনানি হবে, তারই প্রতিবাদ করছেন ভারত শাসিত কাশ্মীরের মানুষরা এবং সংগঠনগুলো।
প্রতিবাদীরা বলছেন, ওই বিশেষ ধারাটি যদি তুলে দেওয়া হয়, তা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের ওপরে সরাসরি হস্তক্ষেপ হবে। এর প্রতিবাদে বড়সড় বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে বিক্ষোভ প্রদর্শন আর অশান্তি হতে পারে, এটা আঁচ করে প্রশাসন কার্ফু জারি করেছে।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদনের শুনানি হতে পারে, এমন একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ায় রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে ২২ জন আহত হয়েছেন।
তাই এই দুদিন আর ঝুঁকি না নিয়ে কার্ফু জারি করা হয়েছে।
শ্রীনগরে বিবিসি হিন্দির সংবাদদাতা মাজিদ জাহাঙ্গীর বলছিলেন, "সব রাস্তাঘাট ফাঁকা। একটা দুটো গাড়ি চলতে দেখেছি সকাল থেকে। সব স্কুল, কলেজ, দোকানপাট বন্ধ। যদিও কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি দুপুর অবধি। এই পরিস্থিতি কেউ কি আর বিয়ের ভোজ খেতে বেরুতে পারে? তাই গত কদিন ধরে অনেক বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে কাগজে যারা বিয়ের ভোজ আর অন্যান্য আনন্দানুষ্ঠান বাতিল করছেন"
তবে অশান্তি হতে পারে, এমনটা আঁচ করে কার্ফুর মধ্যে কেউ আর বিয়েবাড়ির ভোজ খেতে বেরুতে চাইছেন না।
"আত্মীয় বন্ধুরা ফোন করে বলছে যে কীভাবে যাব ভোজে? রান্নার সব আয়োজন করেও তাই বাধ্য হলাম ভোজসভা আর অনুষ্ঠান বাতিল করতে," স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিয়ের পাত্র, ২৮ বছরের আনিস আহমেদ।
তাঁর বাবা বলেছেন "কজন বন্ধু আর আত্মীয়কে নিয়ে গিয়ে নিকাহটা সেরে নতুন বউকে ভালোয় ভালোয় বাড়ি নিয়ে এস"।