বেইজিং যাওয়ার পথে সমুদ্রে আছড়ে পড়ল বিমান, নিহত ২৩৯
শনিবার ভোররাতে আকাশ থেকে সমুদ্রের বুকে আছড়ে পড়ল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। সমুদ্রেই চিরঘুমে চলে গেলেন ২২৭ জন যাত্রী আর ১২ জন বিমানকর্মী। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন পাঁচজন ভারতীয়ও। গভীর সমুদ্রে বিমানটি আছড়ে পড়ায় উদ্ধারকার্য সহজ হচ্ছে না। বিমানের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্র থেকে এখনও খুঁজে না পাওয়ায় সরকারিভাবে দুর্ঘটনার খবর স্বীকার করেনি মালয়েশিয়া। যদিও চীন এবং ভিয়েতনাম এই দুর্ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের জারি করা বিবৃতি অনুযায়ী, গতকাল রাত ১২-৪০ মিনিটে কুয়ালালামপুর থেকে ওড়ে বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমানটি। এমএইচ-৩৭০ হল উড়ান নম্বর। গন্তব্য ছিল বেইজিং। প্রথম দু'ঘণ্টা সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। পাইলট কোনও বিপদ সঙ্কেত দেননি। রাত ২-৪০ মিনিটে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন বিমানটি ছিল দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর। তার পর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি।
এখনও মেলেনি ধ্বংসাবশেষ
বিমানে ১৪টি দেশের নাগরিকরা ছিলেন। যথা, চীন (১৫৪), মালয়েশিয়া (৩৮), ভারত (৫), ইন্দোনেশিয়া (৭), অস্ট্রেলিয়া (৬), ফ্রান্স (৪), আমেরিকা (৩), নিউজিল্যান্ড (২), ইউক্রেন (২), কানাডা (২) এবং রাশিয়া, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়ার একজন করে নাগরিক। বিমান নিখোঁজের খবর চাউর হতেই কান্নাকাটি পড়ে যায় কুয়ালালামপুর এবং বেইজিং বিমানবন্দরে।
শনিবার দুপুরে ভিয়েতনাম নৌবাহিনী বলেছে, থো চু দ্বীপের ১৫৩ নটিক্যাল মাইল (৩০০ কিলোমিটার) দূরে অতল সমুদ্রে ভেঙে পড়েছে বিমানটি। ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেতে নৌসেনাকে কাজে লাগিয়েছে ভিয়েতনাম। উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে ফিলিপিন্সও। জাহাজ পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর এবং চীনও।
যে পাঁচজন ভারতীয় নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তিনি হলেন চন্দ্রিকা শর্মা। ইন্টারন্যাশনাল কালেক্টিভ ইন সাপোর্ট অফ ফিশওয়ার্কার্সের (আইসিএসএফ) কার্যনির্বাহী সম্পাদক। এই সংগঠনটি মৎস্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে। চন্দ্রিকাদেবী বেইজিং থেকে মঙ্গোলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেখানে তাঁর একটি আলোচনাচক্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের পয়লা জুনও অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছিল। এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান ২২৮ জন যাত্রী নিয়ে ভেঙে পড়েছিল আটলান্টিক মহাসাগরে। তখন টানা কয়েকদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি বিমানের ধ্বংসাবশেষ। শেষে রোবট নামিয়ে জল থেকে তুলতে হয় বিমানের টুকরো। কারও আস্ত শরীর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এক্ষেত্রেও তেমন ঘটনা ঘটেছে। তবে যতক্ষণ না বিমানের ব্ল্যাক্স বক্স উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে, ততক্ষণ দুর্ঘটনার কারণ জানা সম্ভব হবে না।