মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় ধাক্কা ট্রাম্পের, হাতছাড়া হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর নিয়ন্ত্রণ
বিতর্কের যে ছটা ছিল সেটাই যেন বেরিয়ে এল মধ্যবর্তী নির্বাচনে। আর প্রত্য়াশিতভাবেই আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতছাড়া হওয়ার পথে।
বিতর্কের যে ছটা ছিল সেটাই যেন বেরিয়ে এল মধ্যবর্তী নির্বাচনে। আর প্রত্য়াশিতভাবেই আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতছাড়া হওয়ার পথে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের এখন পর্যন্ত যা ফল তাতে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর ম্যাজিক ফিগার পার করার দিকে এগোচ্ছে ডেমোতক্র্যাটরা। মার্কিন কংগ্রেসের এই লোয়ার চেম্বারের দখল গত আট বছর ধরে ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া ছিল। পক্ষপাতিত্বের রাজনীতি করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এটা একটা বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে স্বান্তনা যে সেনেটের দখল ধরে রেখেছে তাঁর দল রিপাবলিকান।
আমেরিকার এই মধ্যবর্তী নির্বাচনকে কার্যত 'গণভোট' বলেই দেখা হচ্ছে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। প্রথমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হ্য়াকিং-এর অভিযোগ ওঠে। এর সঙ্গে তাঁর অভিভাবসন নীতি নিয়েও কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। এখানেই শেষ নয় যৌন কেলেঙ্কারি থেকে বৈদেশিক নীতি, কর্মসংস্থানেও জোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ট্রাম্পকে। ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের নেতৃত্বে হাসফাঁস অবস্থা প্রকাশ করেছেন অসংখ্য মার্কিনি। সুতরাং, এই মধ্যবর্তী নির্বাচনকে গণভোট-এর মতো করেই দেখা হচ্ছে।
হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর প্রতিনিধিরা দুই বছর অন্তর নির্বাচিত হন। এখানে মোট ৪৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। মার্কিন কংগ্রেসের এই লোয়ার চেম্বারের নিয়ন্ত্রণ পেতে ম্যাজিক ফিগার ২১৮। অন্যদিকে সেনেটে ১০০টি আসন থাকলেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই কক্ষের ৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এছাড়াও ৩৬টি প্রদেশের গভর্নর পদেও নির্বাচন হয়েছে। সেনেটের প্রতিনিধিরা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
Fantastic #MAGARally🇺🇸in West Virginia, thank you. Everyone get out and VOTE for Patrick @MorriseyWV and @CarolMillerWV! https://t.co/N8CQeLmSad
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) November 2, 2018
দুই বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁর এই পদে থাকার কথা। কিন্তু, ট্রাম্পকে ঘিরে অসন্তোষ এতটাই বেড়়েছে তাতে তিনি পুরো টার্ম সম্পূর্ণ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মহিলা প্রার্থীদের সংখ্য়া। যার ফলে ২০১৮ সালকে আমেরিকায় 'ইয়ার অফ দ্য উইমেন' বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এর উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন এখন হয়ে উঠেছেন আলেকসান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ। ২৯ বছরের এই যুবতী মার্কিন কংগ্রেসে সবচেয়ে কণিষ্ট হিসাবে এবার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন।
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা কৌশলে ট্রাম্প-বিরোধী হাওয়াকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছে, যার ফলে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ ডেমোক্র্যাটরা জয় পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে গেলে ট্রাম্পের পক্ষে তা ভালো হবে না। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিজস্ব ব্যবসায় ফায়দা তোলা, কর জমায় কারচুপি মতো অভিযোগ। এই সব নিয়ে তদন্ত শুরু করার ক্ষমতা রাখে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস।
In Albuquerque, @Deb4CongressNM wins her midterm election. A Native American woman will be in the US House of Representatives. REUTERS/Brian Snyder pic.twitter.com/RMXgojYe5H
— Brian Snyder (@brian_photog) November 7, 2018
বিভিন্ন বিতর্কিত আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলার মতো বিষয়গুলি আটকে দিতে পারে এই হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ। ডেমোক্র্যাটস ইলাহান ওলমার এবং রশিদা তালাইব প্রথম মুসলিম মহিলা হিসাবে মিনেসোটা, মিচিগান থেকে জয়ী হয়ে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ গিয়েছেন। যা একটা নজির। আরও দুই ডেমোক্র্যাটস কানসাস-এর শারিস ডেভিডস, নিউ মেক্সিকো-র ডেবরা হাল্যান্ড প্রথম নেটিভ আমেরিকান মহিলা হিসাবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছেন।
[আরও পড়ুন:মধ্যবর্তী নির্বাচনে আমেরিকা, কিন্তু এই ভোটবাজারে আকর্ষণ হাতি আর খচ্চর! কেন এমন পরিস্থিতি]
হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ ডেমোক্র্য়াট-দের অবস্থা ভালো হলেও সেনেটে ছবিটা খুব একটা সুখদায়ক নয়। এমনিতে আগে এই কক্ষে রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্র্যাটদের সংখ্য়ার অনুপাতটা ছিল ৫১-৪৯। এবার যা পরিস্থিতি তাতে রিপাবলিকানরা সেনেটে তাদের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। কারণ, ইতিমধ্যেই মিসৌরি,ইন্ডিয়ানা এবং নর্থ ডাকোটায় তিন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থীর কাছে হার মেনেছে। উটাহ থেকে জয়ী হয়েছে ২০১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া মেট রোমানি। সেনেটে ভালো ফলের জন্য অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই সেলেব্রেশন শুরু করে দিয়েছেন। আমেরিকার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইটও করেছেন তিনি।