মঙ্গল গবেষণায় চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার, এবার কী মিলবে প্রাণের সন্ধান
মঙ্গল গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে জমাট বরফের নিচে একটি তরল জলের হ্রদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন পরবর্তী গবেষণায় সেখানে প্রাণের সন্ধানও পাওয়া যেতে পারে।
প্রাণের অন্যতম শর্ত তরল অবস্থায় থাকা জল। তাই পৃথিবীর বাইরে প্রাণেপ সন্ধান করতে গেলে বিজ্ঞানীরা সবার আগে জলের সন্ধান করেন। এই খোঁজ সবচেয়ে বেশি হয়েছে মঙ্গল গ্রহে। কারণ এই গ্রহের অবস্থান ও আকার অনেকটাই পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই প্রাণের সন্ধানে সবার আগে এই প্রতিবেশী গ্রহটিতেই সন্ধান চালিয়েছে মানুষ। বিভিন্ন মঙ্গলযানের গবেষণায় এতদিন জানা গিয়েছিল মঙ্গলে এর আগে তরল জল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মঙ্গলে তরল জলের সন্দান মিলল।
মঙ্গলেও ছিল সমুদ্র, নদী, নালা, হ্রদ
নাসার মঙ্গলযান কিউরিওসিটি ও অন্য়ান্য মঙ্গল যানের গবেষণায় এর আগে জানা গিয়েছিল একসময় মঙ্গলে তরল জল ছিল। পৃথিবীর মতোই ছিল বড় বড় সমুদ্র, নদী, নালা, হ্রদ। কিন্তু সে সময় সঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক বেশি ছিল। পরবর্তীকালে এর দুর্বল বায়ুমন্ডলের কারণে ধীরে ধীরে এই গ্রহের তাপমাত্রা কমে যায়। সব জল আটকে যায় মেরুর বরফে।
লাল গ্রহের বুকে ছোট্ট একটি হ্রদ
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে মঙ্গল গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে জমাট বরফের অনেকটা নিচে একটি তরল জলের হ্রদ রয়েছে। তবে সেটি আকারে বিশেষ বড় নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চওড়ায় ২০ কিলেমিটার দীর্ঘ হবে। গভীরতার আঁচ সম্পূর্ণ না পাওয়া গেলেও প্রাথমিক গবেষণায় জানা গিয়েছে অন্তত ১.৫ মিটার গভীর তো বটেই। বিজ্ঞানীরা তাই নিশ্চিত করে বলছেন, এটা একটা হ্রদই, হঠাত কিছুটা বরফ গলে যাওয়া জল নয়।
কিভাবে এর সন্ধান মিলল?
ইএসএ-এর মার্স এক্সপ্রেস অর্বাইটারে লাগানো আছে 'মার্সিস' নামে একটি রেডার ইনস্টুমেন্ট। এই যন্ত্র মঙ্গলের ভূত্বকের বেশ উপর দিয়ে যেতে যেতে ভূত্বকে সিগনাল পাঠায়। প্রতিফলিত সিগনালের চরিত্র দেখে মঙ্গলের ভূত্বক ও তার নিচের অংশের মানচিত্র তৈরি হয়। এই যন্ত্রই দেখা গিয়েছে মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুর জমাট বরফে ঢাকা ভূত্বক থেকে যতটা সিগনাল প্রতিফলিত হচ্ছে তার দেড় কিলোমিটার নিচ থেকে সিগনালের প্রতিফলনের পরিমাণ অনেক বেশি। এভাবেই বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন জমাট বরফের নিচে আটকে আছে ওই হ্রদ।
এর কী তাৎপর্য?
বিজ্ঞানীরা বলেন, তরল জল থাকলেই সেখানে প্রাণের জন্ম হতে পারে। কিন্তু মঙ্গলে জলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে মানেই প্রাণী থাকবে এমনটা নাও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্টরা। তাঁরা বলছেন এই আবিষ্কারে এটা অন্তত জানা গেল মঙ্গলের কোথায় প্রাণের সন্ধান করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই আবিষ্কার অনেকটাই গুপ্তধনের ম্যাপ হাতে পাওয়ার মতো।
এরপর কী?
বিজ্ঞানীরা বলছেন এই তো সবে শুরু। এই আবিষ্কার নতুন করে আরেকটি বড় আকারের মঙ্গল অভিযানের সম্ভাবনাও উসকে দিয়েছে। তাঁরা বলছেন মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠে যে প্রাণ নেই তা আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল। তাই তারপর থেকে সন্ধান জারি আছে ভূপৃষঠের নিচের স্তরে। পৃথিবীতে অ্যান্টার্কটিকায় ভস্তক হ্রদটিও একই প্রকৃতির। উপরের অংশে জমাট বরফ ও তার নিচে তরল জল আছে। সেখানে জমাচ বরফে ড্রিল করে তার নিচে বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছিলেন। এখন সেই একই কাজ তাঁরা মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে করতে চাইছেন।